পাখির নাম পায়েড এ্যাভোসেট বা উল্টোঠুঁটি

এবার পাখির খোঁজে পৌছালাম কামদুনির খড়িবাড়ি জলাভূমি অঞ্চলে। পাখিটির ইংরেজি নাম পায়েড এ্যাভোসেট। বাংলা নাম উল্টোঠুঁটি বা খোয়াজ। তবে ঢেঙ্গা বা চরা খুঁচি নামেও পরিচিত। পরিযায়ী পাখি।

দক্ষিণ-পূর্ব সাইবেরিয়া, উত্তর-পূর্ব চিন, পূর্ব-দক্ষিণ আফ্রিকা সহ ইউরোপের এরা স্থায়ী বাসিন্দা। প্রজননের আগে এক দেশ থেক আরেক দেশে যাওয়ার সময় কিছুদিনের জন্য এদেশে দেখা যায়। মার্চ থেকে জুন মাসে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দেখা মেলে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের নদীচর, দ্বীপ, জলাভূমি অঞ্চলে।

সাদা-কালো রঙের পাখিটিকে চেনা যায় তাদের লম্বা কালো লাঙলের আকৃতির ঠোঁটটি দেখে। ঠোঁটের ওপরের দিকটি বাঁকা। জলচর পাখিদের মধ্যে এরাই একমাত্র পাখি যাদের ঠোঁট সরু এবং ছুঁচালো। ঠোঁটের এই গঠনের জন্য তারা জল-কাদার ভেতরে বা জলের ভেতরে ঠোঁটটি ঢুকিয়ে খাবার সংগ্রহ করতে পারে। ছেলে পাখিটির ঠোঁট লম্বা বেশি এবং কম বাঁকানো হয়। মেয়ে পাখিটির ঠোঁট আকারে ছোট ও বেশি বাঁকানো হয়। নদীর মোহনা, প্লাবনভূমি, চরাঞ্চল, জলাশয়, বাঁওড়ের কাছে দেখা মেলে। জলজ পোকামাকড়, কাদার তলার নানান প্রজাতির সুতোপোকা, কচি ঘাসের ডগা-কুঁচি, কেঁচো ও ছোট মাছ।

লাজুক প্রকৃতির এই পাখি নিরিবিলি জায়গায় থাকে। এরা সব সময় ঝাঁক ঝাঁকে দল বেধে থাকতে ভালোবাসে। জলে ভেসে বা সাঁতার কেটে খাবার সংগ্রহ করে। তাদের এই লম্বা ঠোঁট শিকার করতে সহায়তা করে।

লম্বায় ৩৫-৪০ সেন্টিমিটার। সরু সরু কালো বা নীলাভ রংয়ের পা-গুলি লম্বায় ২৩ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। যা দিয়ে কাদায় হাটতে সুবিধা হয়। মাথা ও ঘাড়টি কালো। ছেলে ও মেয়ে পাখিটি দেখতে একই রকম। দেহের পুরোটা সাদা কালো পালকে আবৃত। গলা থেকে লেজের তলা পর্যন্ত ধবধবে সাদা। সাদা পিঠের দুই পাশে দুইটি কালো পট্টি।

প্রজননের সময় এপ্রিল থেকে আগস্টের মাঝামাঝি। জলাশয়ের কাছাকাছি খোলা জায়গায়, বালি অথবা হালকা তৃণভূমিতে খড়কুটা দিয়ে বাসা বানিয়ে ৩-৪টি ডিম পাড়ে। এরা প্রজননের সময় জোড় বাঁধে। স্ত্রী পাখিটি হালকা বাদামি রঙের ডিম পাড়ে। স্ত্রী-পুরুষ উভয়ে মিলে ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটে সময় লাগে ২৩ থেকে ২৫ দিন। শাবক বাসা ছাড়ে ৩৫-৪২ দিনের মধ্যে। প্রজননে সক্ষম হতে সময় লাগে ২-৩ বছর। এই পাখিটি পৃথিবী বিখ্যাত পাখি সংরক্ষণ সংস্থা রয়্যাল সোসাইটি ফর প্রোটেকশন অফ বার্ড(RSPB) এর লোগো হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
