No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    সাত গম্বুজ মসজিদে সমাধিস্থ মুঘল সুবাদারের মেয়ে

    সাত গম্বুজ মসজিদে সমাধিস্থ মুঘল সুবাদারের মেয়ে

    Story image

    ঢাকা শহরের মোহম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড। ফার্মগেট থেকে বাস, রিক্সা, সিএজি কিংবা টেম্পো করে মোহম্মদপুর পৌঁছনো যায়। একটা রাস্তা মোহম্মদপুর থেকে বাঁশবাড়ি হয়ে চলে গেছে শিয়া মসজিদের দিকে। বাঁশবাড়ির পথে ঢুকলেই বাঁ দিকে লাল রং-এর একটি মসজিদ দেখা যাবে। এটিই সাত গম্বুজ মসজিদ। ছাদে তিনটে বড়ো আর চারটে ছোটো মোট সাতখানা গম্বুজ রয়েছে বলেই এই রকম নাম। ১৬৮০ সালে মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁর আমলে এই মসজিদ তৈরি করিয়েছিলেন তাঁর ছেলে বুজুর্গউদ্দিন উমিদ খাঁ। ১৬৬৩ সালে মির জুমলার মৃত্যুর পর শায়েস্তা খাঁকে মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব বাংলার সুবাদার করে পাঠিয়েছিলেন। দুদফায় তিনি বাংলার প্রশাসনিক পদে ছিলেন ১৬৮৮ সাল পর্যন্ত। দিল্লি ফিরে যাওয়ার আগে তিনি ঢাকা শহরকে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছিলেন বাণিজ্য, রাজনীতি এবং সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে। যার পরিচয় এখনও বয়ে নিয়ে চলেছে তাঁর আমলে পুরোনো ঢাকায় তৈরি বিভিন্ন স্থাপত্য। সাত গম্বুজ মসজিদ তাদের মধ্যেই একটি।

    দূর থেকে মসজিদটিকে দেখে মুগ্ধ হন রসজ্ঞ মানুষেরা। দৈর্ঘ্যে এটি ১৭.৬৮ মিটার এবং প্রস্থে ৮.২৩ মিটার। সামান্য উঁচু পাকা একটি ভিতের পশ্চিম অংশ জুড়ে রয়েছে মসজিদটি। এই ভিতটা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। পুব দিকের পাঁচিলের মাঝামাঝি রয়েছে একটা ঢোকার জায়গা। উত্তর আর দক্ষিণ দিকে ঢোকার মুখে সিঁড়ি রয়েছে। পশ্চিম দেওয়ালে রয়েছে অর্ধেক আটকোণা তিনটি মেহরাব কুলুঙ্গি। মসজিদের ভেতরটা দুটো খিলান দিয়ে তিন ভাগে বিভক্ত। ছাদে রয়েছে আটকোণা ড্রামের ওপর তিনটে গম্বুজ। মাঝখানের গম্বুজটা আকারে সবচেয়ে বড়ো। চারকোণে চারটে মিনার রয়েছে ঢাকার শাহবাজ মসজিদ কিংবা মুসা খান মসজিদের মতো। বুরুজগুলোর দুটো তলা। নিচের তলায় রয়েছে চারটে খিলানপথ। একটার ছাদটি ভেতর থেকে গম্বুজের মতো দেখতে লাগে, তবে এর ছাদ অর্থাৎ দোতলার মেঝে কিন্তু সমতল। দোতলাতে গম্বুজ থাকলেও মোটামুটি একতলার মতোই দেখতে। ছাদের দিকে একটা রাস্তা রয়েছে, যেটা দিয়ে মসজিদের ছাদ থেকে মিনারের ওপরের তলায় যাওয়া যায়। মসজিদের ভেতরে চারটে কাতারে নামাজ পড়তে পারেন প্রায় ৯০ থেকে ১০০ জন। সম্প্রতি নামাজির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ভেতরে জায়গার সমস্যা হয়। বাইরে খোলা জায়গায় তাঁবু খাটিয়ে সেই সমস্যা মেটানো হয়েছে এখন।

    মসজিদের পূর্ব অংশে রয়েছে একটা সমাধি রয়েছে। মনে করা হয়, এটি শায়েস্তা খাঁর মেয়ের কবর। লোকে সমাধিটিকে ‘বিবির মাজার’ বলে ডেকে থাকেন। কবর কোঠাটি ভেতর থেকে আটকোণা আর বাইরে থেকে চারকোণা। আগে কবরটি অযত্নে ক্ষয়ে যেতে শুরু করেছিল, তবে এখন তার সংস্কার করা হয়েছে। মসজিদের পশ্চিম দিকে রয়েছে অজুখানা আর উত্তর-পূর্ব দিকে আরেকটি কবর রয়েছে। সামনের ছোট্ট বাগানে আছে বিভিন্ন রকমের গাছ। বাগানের সঙ্গে মসজিদকে মিলিয়ে দেখতে লাগে অনেকটা লালবাগ দুর্গ আর খাজা আম্বর মসজিদের মতো। একটা সময় মসজিদের পাশ দিয়ে বয়ে যেত বুড়িগঙ্গা। নৌকো এসে ভিড়ত মসজিদের ঘাটে। তবে এখন নদী গেছে ভরাট হয়ে। এখন বুড়িগঙ্গা তো দূরের কথা, মসজিদের আশেপাশে কোনো খাল পর্যন্ত নেই। এই বিশাল ঐতিহাসিক স্থাপত্যের তত্ত্বাবধান করে বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। পশ্চিম দিকে মসজিদের গা ঘেঁসেই রয়েছে বিখ্যাত মাদ্রাসা জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @