No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    বাড়িতে তৈরি টেলিস্কোপ দিয়ে শনির বলয়, চাঁদের গহ্বর দেখছেন সন্দীপ সিংহ

    বাড়িতে তৈরি টেলিস্কোপ দিয়ে শনির বলয়, চাঁদের গহ্বর দেখছেন সন্দীপ সিংহ

    Story image

    হাকাশবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশ্বমানচিত্রে ক্রমশ উজ্জ্বল হচ্ছে ভারতের নাম। সম্প্রতি বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরু স্পর্শ করে ইতিহাস গড়েছে। সূর্য অভিযানে গেছে ইসরোর আদিত্য-১ রকেট। এই আবহে দিকে দিকে বাড়ছে মহাকাশচর্চার অভ্যেস। প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যক্তিগত স্তরে। তেমনই একজন হলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন নিবাসী সন্দীপ সিংহ। তিনি নিজের বাড়িতেই অতি স্বল্প খরচে বানিয়ে ফেলেছেন উন্নত মানের টেলিস্কোপ। সেই টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তুকে।

    গ্যালিলিয়ান ও নিউটোনিয়ান টেলিস্কোপ

    সন্দীপ দাঁতন হাইস্কুল এবং জাহালদা হাইস্কুলের কম্পিউটার বিষয়ের আংশিক সময়ের শিক্ষক। ছোটোবেলা থেকেই তাঁর উৎসাহ বিজ্ঞানের মডেল তৈরিতে। বঙ্গদর্শন.কম-কে তিনি বলেন, “টেলিস্কোপ নিয়ে আমার অনেকদিন থেকেই আগ্রহ ছিল। এক বন্ধুর বাড়িতে প্রথমবার টেলিস্কোপে চোখ লাগিয়ে মহাকাশ পর্যবেক্ষনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তখন থেকেই ভাবনা ছিল স্বল্প খরচে টেলিস্কোপ তৈরি করার।” তিনি নিয়মিত অংশ নেন বিভিন্ন বিজ্ঞান মেলায়। তাঁদের এলাকাতে রয়েছে দাঁতন সায়েন্স ক্লাব। তাদের পক্ষ থেকে প্রতি বছর বিজ্ঞান মেলা আয়োজিত করা হয়, বিভিন্ন মডেল প্রদর্শনী হয়। এইসব বিজ্ঞান মেলায় নিয়মিত যাওয়ার সুবাদে বিজ্ঞানের বিভিন্ন মডেল তৈরিতে তাঁর আগ্রহ বেড়েছে। সন্দীপ জানান, “বন্ধুর বাড়িতে টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশ পর্যবেক্ষনের সময় লক্ষ্য করেছিলাম, টেলিস্কোপে কয়েকটি অবতল আয়না রয়েছে। আমার বাড়িতে একটা দেওয়াল ঘড়ি ছিল, যার কাঁচটি অবতল প্রকৃতির। সেটা দিয়ে টেলিস্কোপ বানানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু সফল হইনি।” এরপর তাঁর পরিচয় হয় এগরা নিবাসী কনককান্তি করের সঙ্গে। তিনি সন্দীপকে তাঁর বাড়িতে থাকা একটি পুরোনো টেলিস্কোপ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই টেলিস্কোপটির বিভিন্ন অংশ ছিল ভাঙাচোরা। সেটা সারাতে চেষ্টা করেছিলেন সন্দীপ, কিন্তু এবারও ব্যর্থ হন। অবশেষে তৃতীয় চেষ্টায় আসে সাফল্য। একটি মাইক্রোস্কোপের লেন্সকে আইপিস হিসাবে ব্যবহার করে তৈরি করেছিলেন আড়াই ইঞ্চি ব্যাসের টেলিস্কোপ। এরপর ৫ ইঞ্চি ব্যাসের একটি নিউটোনিয়ান টেলিস্কোপ (Newtonian Telescope) তৈরি করেছিলেন। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। নিউটোনিয়ান এবং গ্যালিলিয়ান, দু’ধরনের টেলিস্কোপই তৈরি করেছেন তিনি। 

    তিনি ৫০, ৬২ এবং ৯০ মিলিমিটারের গ্যালিলিয়ান টেলিস্কোপ (Galilean Telescope) তৈরি করেছেন। টেলিস্কোপগুলি তৈরি করেন পিভিসি পাইপ দিয়ে। গ্যালিলিয়ান টেলিস্কোপে লাগানো থাকে বিশেষ ধরনের লেন্স এবং নিউটোনিয়ান টেলিস্কোপে ব্যবহার করেন ফ্রন্ট-কোটেড অবতল আয়না। আয়না এবং লেন্সগুলি তিনি বিভিন্ন দোকান থেকে কেনেন বা অর্ডার দিয়ে বানান। টেলিস্কোপগুলি যথেষ্ট কার্যকরী বলে জানালেন তিনি। তাঁর কথায়, “এই টেলিস্কোপগুলি দিয়ে শনির বলয়, চাঁদের গহ্বর, বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ, শুক্রগ্রহের বিভিন্ন কলা পর্যবেক্ষন করা যায়। আর একবার চাঁদ পর্যবেক্ষণ করছিলাম। হঠাৎ দেখলাম, ছায়ার মতো কিছু একটা চলে গেল। পরে ইন্টারনেট থেকে জানতে পারি, ওটা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন।” তাঁর দাবি, এই টেলিস্কোপগুলি দিয়ে দেখা যাবে সৌরকলঙ্কও। তিনি বলেন, “সূর্য পর্যবেক্ষণ করতে গেলে বিশেষ ধরনের ফিল্টার দরকার হয়, যা এখন আমার কাছে নেই। তবে সেটা থাকলে সৌরকলঙ্কও যে দেখা যাবে সে বিষয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী।”

    তাঁর ইচ্ছা, এই টেলিস্কোপগুলি বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা। এছাড়াও নিজের বাড়িতে একটি অ্যাস্ট্রোনমিকাল পার্ক তৈরিরও পরিকল্পনা করছেন। সেখানে উৎসাহী মানুষ, ছাত্রছাত্রীরা এসে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। 

    সন্দীপের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কিছু বিজ্ঞান সংগঠন এবং স্থানীয় কিছু স্কুল যোগাযোগ করেছে এই ধরনের টেলিস্কোপ বানিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু গ্যালিলিয়ান আর নিউটোনিয়ান টেলিস্কোপের মধ্যে গঠনগত বৈশিষ্ট্য ছাড়া আর কী পার্থক্য রয়েছে? সন্দীপের জবাব, “নিউটোনিয়ান টেলিস্কোপের থেকে একই ব্যাসের গ্যালিলিয়ান টেলিস্কোপ তৈরির খরচ বেশি। কারণ হলো লেন্সের দাম। সাধারণভাবে, নিউটোনিয়ান টেলিস্কোপের থেকে গ্যালিলিয়ান টেলিস্কোপের দৃশ্যমানতা ভালো। কিন্তু গ্যালিলিয়ান টেলিস্কোপে কিছু ফিল্টার ব্যবহার করতে হয়, আর তৈরির খরচও বেশি। তাই সাধারণের ব্যবহারের জন্য নিউটোনিয়ান টেলিস্কোপই বেশি কার্যকরী।” টেলিস্কোপগুলি তৈরি করতে তাঁর খরচ হয়েছে দশ হাজার টাকারও কম। জানালেন, টেলিস্কোপগুলি দিয়ে মহাকাশ পর্যবেক্ষণে স্থানীয় মানুষদের, বিশেষত স্কুল পড়ুয়াদের অত্যন্ত উৎসাহ রয়েছে।

    স্মার্ট হেলমেট

    হাতে বানানো টেলিস্কোপ ছাড়াও অন্যান্য বিজ্ঞান মডেল বানান সন্দীপ। বানিয়েছেন স্মার্ট হেলমেট, স্মার্ট ডাস্টবিন। কোভিডের সময় বানিয়েছিলেন স্বয়ংক্রিয় স্পর্শহীন হ্যান্ড স্যানিটাইজার, যার সামনে হাত নিয়ে গেলেই বোতল থেকে স্যানিটাইজার বেরিয়ে আসবে। এছাড়াও বানিয়েছিলেন সোশ্যাল ডিসটেন্সিং রোবটিক ট্রলি, যা চালনা করা যাবে মোবাইলের মাধ্যমে। আর একটি উল্লেখযোগ্য মডেল হলো মোবাইলের মাধ্যমে ঘরের আলো, পাখা জ্বালানো বা বন্ধ করা। সন্দীপ বলেন, “ধরুন কেউ ঘরের আলো, পাখা জ্বেলে বাড়ির বাইরে চলে গেছেন। তিনি মোবাইলের মাধ্যমেই সেই আলো, পাখার সুইচ বন্ধ করে দিতে পারবেন।” অনেক বৈদ্যুতিক যন্ত্র রয়েছে, যা বাজ পড়লে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেগুলোকে কীভাবে বাঁচানো যায়, তা নিয়েও ভাবছেন তিনি। আশা করা যায়, একদিন নিজের উদ্ভাবনী শক্তির যথার্থ স্বীকৃতি পাবেন সন্দীপ এবং হয়ে উঠবেন আরও অনেকের অনুপ্রেরণা।

    ছবিঋণঃ সন্দীপ সিংহ

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @