No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা এবং উদ্বাস্তুদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

    বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা এবং উদ্বাস্তুদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

    Story image

    ‘সপ্তপদী’ চলচ্চিত্রের সেই অমোঘ দৃশ্য। উত্তম আর সুচিত্রা চলেছেন বাইকে, গাইছেন কালজয়ী প্রেমের গান— “এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হত তুমি বলো তো!” সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে লিপ দিচ্ছেন উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন। যে গান পরবর্তীতে বাংলা চলচ্চিত্রের গানের ইতিহাসে মাইলস্টোন হয়ে থেকে যাবে। যদিও এই লেখার আলোচ্য বিষয় গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর ‘গীতশ্রী’ হয়ে ওঠার জার্নিতে আমাদের ফিরে যেতে হবে আরও অনেকটা পথ পিছিয়ে অতীতের সেইসব সোনা ঝরা দিনে।

    সন্ধ্যা তখন গান শিখছেন পণ্ডিত সন্তোষ কুমার বসু, অধ্যাপক এটি ক্যানন এবং অধ্যাপক চিন্ময় লাহিড়ীর কাছে। তখন তাঁর গুরু উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান, যাঁর কাছে সন্ধ্যা আয়ত্ত করেছিলেন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত। যদিও কেরিয়ার শুরু হয়েছিল আধুনিক গান দিয়েই।

    ১৯৫০ সালে ‘তারানা’ চলচ্চিত্রে একটি গান দিয়ে মুম্বাইতে হিন্দি গান গাওয়া শুরু করেন সন্ধ্যা। ১৭টি হিন্দি চলচ্চিত্রে নেপথ্য গায়িকা হিসেবে গান গেয়েছিলেন। ব্যক্তিগত কারণে ১৯৫২ সালে চলে আসেন কলকাতার বাড়িতে। তারপর শুরু হবে নতুন একটি অধ্যায়। হেমন্ত-সন্ধ্যা জুটি। তখন আমি উত্তমকুমার মানেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গলা আর উত্তমের নায়িকাদের গলায় থাকত সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান। বিশেষ করে সুচিত্রা সেন।

    মুম্বাইয়ে যাওয়ার আগে অত্যন্ত অল্প বয়সেই সন্ধ্যা কিশোরীর প্রথম রেকর্ড বেরলো কলম্বিয়া থেকে। ১৯৪৫ সাল, তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৪। গিরীন চক্রবর্তীর কথায় ও সুরে ‘তুমি ফিরায়ে দিয়াছ’ ও ‘তোমার আকাশে ঝিলমিল করে’ এই দুটি গান। এর বছর দু’য়েকের মধ্যেই দু’টি বাংলা ছবিতেও নেপথ্যে গাইবার সুযোগ হয়ে গেল। রাইচাঁদ বড়ালের সংগীত পরিচালনায় ‘অঞ্জনগড়’ এবং রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সংগীত পরিচালনায় ‘সমাপিকা’ ছবিতে। শুধু তাই নয় ওই একই বছরে অর্থাৎ ১৯৪৮-এ তিনটি আধুনিক গানের রেকর্ড! এরপর মুম্বাইয়ে যাবেন তিনি। কলকাতা ফিরে এসে সন্ধ্যা তখন মধ্য গগনে।

    তবে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সংগীত জীবনের বাইরেও রয়েছে আরও একটি অজ্ঞাত পরিচয়। যেখানে একজন মানুষ হিসাবে তাঁর আদর্শের দিকটি বেরিয়ে আসে স্পষ্টভাবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচতে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে আগত লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুদের জন্য সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় অন্যান্য বাঙালি শিল্পীদের সঙ্গে গণ আন্দোলনে যোগ দেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন। বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করেন তিনি। এমনকি বাংলাদেশী সংগীতশিল্পী সমর দাস, যিনি বাংলাদেশে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন তাঁর সাহায্যার্থে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান রেকর্ড করেন নিজের উদ্যোগে। কারাগারে বন্দি নয়া বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির উপলক্ষে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে’ গানটি মুক্তি পায়। এবং ভীষণ জনপ্রিয় হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারির উদযাপন উপলক্ষে ঢাকায় পল্টন ময়দানের একটি উন্মুক্ত কনসার্টে অনুষ্ঠান করা অন্যতম প্রথম বিদেশি শিল্পীদের মধ্যে একজন ছিলেন কিংবদন্তি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।

    ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সম্মান বঙ্গবিভূষণ পান সন্ধ্যা। তার আগে ১৯৭০ সালে ‘জয় জয়ন্তী’ এবং ‘নিশিপদ্ম’ চলচ্চিত্রে গানের জন্য সেরা নেপথ্য গায়িকার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সম্মানিত হন। আজ গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ৯০তম জন্মদিন।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @