বাড়িতে বসেই বানান জিভে-জল রসমালাই

রসগোল্লার আবিষ্কার নিয়ে তাও ওড়িশা দড়ি টানাটানি করেছিল কিছুদিন। কিন্তু, রসমালাই নিয়ে তা সম্ভবই না। রসমালাই-এর জন্ম, বেড়ে ওঠা সবই বাংলায়। তবে হ্যাঁ, ঘোরতর বাঙালি হলেও রসমালাইয়ের বয়স বেশি না। এমনিতেই, রসগোল্লা আবিষ্কারের আগে তো রসমালাইয়ের জন্ম সম্ভবই নয়। ঘন দুধ তথা মালাইয়ের মধ্যে যারা ভেসে বেড়ায়, তারা তো খুদে রসগোল্লাই। আর, ভিনরাজ্যের কেউ দাবি না জুড়ুক, এহেন রসমালাই-এর আবিষ্কার নিয়ে দুই বাংলার মধ্যে একটা পারিবারিক আহ্লাদি ঝগড়া কিন্তু আছেই।
উইকিপিডিয়া বলছে, রসমালাইয়ের আবিষ্কার কলকাতায়। বিখ্যাত মিষ্টান্ন-শিল্পী কৃষ্ণ চন্দ্র দাস ১৯৩০-এ জন্ম দেন এই অনন্য মিষ্টির। কিন্তু, ওপার বাংলার কুমিল্লার মানুষরা সে কথা মানতে নারাজ। তাদের দাবি, রসমালাইয়ের আদি উদ্ভাবক কুমিল্লার ঘোষেরা। দুধ জ্বাল দিয়ে, তার মধ্যে শুকনো রসগোল্লা ফেলে তাঁরাই নাকি প্রথম বানিয়েছিলেন রসমালাইয়ের পূর্বপুরুষ ‘ক্ষীরভোগ’। এসব উনিশ শতকের কথা। তারপর, কালক্রমে এই ক্ষীরভোগই সামান্য আদল বদলে হয়ে উঠল রসমালাই। ১৯৩০-এ কুমিল্লার মনোহরপুরে ‘মাতৃভাণ্ডার’ নামের দোকানে রসমালাই বিক্রি শুরু করেন দুই ভাই খনিন্দ্র সেন ও মণিন্দ্র সেন।
আপনি কোন তথ্যটি বিশ্বাস করবেন, সে আপনার ব্যাপার। তবে, তখন তো আর দুই বাংলা আলাদা নয়। ফলে, এপার-ওপারে বহমান থাকত স্বাদের সংবাদ। এক কুলে নতুন পদ জন্মালে অন্য কুলও ঠিক খবর পেয়ে যেত। আবার, সমাপতনও হতে পারে আবিষ্কারের। দুই বাংলাতেই রসমালাই বিক্রি শুরুর সাল ১৯৩০। এ কী করে সম্ভব, কে জানে! সে কথা থাক।
আজ রসমালাইয়ের রেসিপিই থাকল। কী বলছেন—এ বাড়িতে বানানো সম্ভবই না! সব সম্ভব। এক ঢিলে দুই পাখির রেসিপি এটা। প্রথমে বানাতে হবে রসগোল্লা, তারপর তাকে ফেলতে হবে মালাইতে। রেসিপি রইল নিচে, বাকিটা আপনাদের ধৈর্য আর সাহস। তবে, লেগে পড়ুন। ফলাফল উপাদেয় হবে, গ্যারান্টি।
আরো পড়ুন
সাতক্ষীরার গোপন স্বাদের রং রেশরাঙায়
উপকরণ:
বাড়িতে বানানো রসগোল্লা- ২০টা
চিনি- ৭৫গ্রাম/ কনডেন্সড মিল্ক
পাটালি গুড়- ১০০গ্রাম
দুধ- ২ লিটার
মাখন/ঘি- ১ চামচ
লেবুর রস/সাদা ভিনিগার- হাফ কাপ/এক কাপ (প্রয়োজন বুঝে)
বেকিং পাউডার- ১/৮ ভাগ
ময়দা- দেড় চামচ
কেশর- সামান্য
সুতির পরিষ্কার সাদা কাপড়, ছাকনি
প্রণালি:
প্রথমে একটি পাত্রে ছাকনি বসিয়ে তাতে সুতির কাপড়টি ছড়িয়ে রাখুন। মিষ্টির জন্য একটি কড়াইয়ে এক লিটার দুধ মাঝারি আঁচে গরম করতে দিন ও ক্রমাগত নাড়তে থাকুন। দুধ গরম হয়ে এলে তাতে মাখন/ঘি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। দুধ ফুটতে শুরু করলে তাতে অল্প অল্প করে লেবুর রস/ভিনিগার মেশাতে থাকুন। দুধ কাটতে শুরু করলেই সামান্য নেড়ে সুতির কাপড় রাখা পাত্রে গরম অবস্থায় ঢেলে দিন এবং ঠান্ডা জলে ভালো করে ধুয়ে কাপড়টি চিপে জল ঝরিয়ে নিন। এরপর, কাপড়টি অন্তত দু’ঘণ্টা উঁচু জায়গায় ঝুলিয়ে রাখুন (জল সম্পূর্ণ ঝরে যাওয়ার জন্য)। জল ঝরে গেলে ছানাটি দেড় চামচ চিনি, বেকিং পাউডার ও ময়দা দিয়ে ভালো করে মেখে (যাতে কোনো দানা না থাকে) গোল গোল করে রসগোল্লার আকার দিন ও একটি পাত্রে রাখুন।
আরো পড়ুন
ঘরেই তৈরি করুন পেস্তা কুলফি
রসগোল্লাগুলো ভাজার জন্য এক কাপ চিনি ও এক কাপ জল নিয়ে সিরা তৈরি করতে হবে। সিরা যখন ফুটে উঠবে ওতে রসগোল্লাগুলো দিয়ে ঢাকা দিয়ে ভেজে নিতে হবে (কুড়ি মিনিট)। এরপর, ঢাকা তুলে মিষ্টিগুলোকে ছেঁকে নিয়ে একটি পাত্রে ঠাণ্ডা হতে দিন।
মালাই-এর জন্য একটি বড়ো কড়াইয়ে বাকি এক লিটার দুধ গরম করতে দিন অল্প থেকে মাঝারি আঁচে। এরপর চিনি/কনডেন্সড মিল্ক যোগ করুন ও ভালো করে মেশান। পাটালি গুড় অল্প করে মেশাতে থাকুন। এরপর, দুধ ঘন হয়ে প্রায় অর্ধেক না হওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন যাতে কোনো সর না পরে। দুধ ঘন হয়ে এলে ওতে রসগোল্লাগুলো দিয়ে দিন। উপর থেকে কেশর ছড়িয়ে দিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিলেই তৈরি রসমালাই।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা: শিখা চক্রবর্তী