পটলের মাধুকরীতে সাবেক বাংলার স্বাদ

পটল নামে লোক ভালো
পটল চেরা চোখ ভালো।
পটল খেতে ভালো যে--
কিন্তু পটল তুলবে কে?
এই গভীর জিজ্ঞাসার সামনে আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেছেন কবি অন্নদশঙ্কর রায়। বলিহারি ভাগ্য বটে পটলের। আর কোনো সবজিকে ক্ষেত থেকে তোলার সঙ্গে এমন বিচ্ছিরি মানে জড়িয়ে নেই। শুধু এই কারণে নয়, পটলের ভাগ্য এমনিও খারাপ। খেতে মিষ্টি নয়, টক নয়। শুধু শুধু খাওয়া যায় না। তার ওপর বাইরে মোটা খোসা, ভিতরে দানা। এমন দুর্ভাগ্য নিয়ে কটা ফলই বা জন্মায় বলুন তো? ফল বলতে ভুরু কোঁচকালেন! দেখেছেন, পটল যে ফল সেটাও মাথায় থাকে না।
কিন্তু এমন মন্দ ভাগ্য নিয়েও সেই কবে থেকে বাংলার হেঁসেলের অধিকার নিয়ে বসে আছে পটল। কবে থেকে, তার কোনো হিসেব নেই। পটল বাংলার মাঠে-ঘাটে, ক্ষেতে ফলত। কোন রসিক যে এর লুকোনো স্বাদ আবিষ্কার করেছিলেন, কে জানে। তারপর পটলকে ঘিরে কত্ত পদ জন্মাল। পটলের পেট ফাঁপা করে, ভিতরে পুর দিয়েও তৈরি হল জিভে জল আনা সব রান্না। আর, অনেক রান্নায় পটলই প্রধান চরিত্রে। মধ্যযুগে লেখা নানা কাব্যে, এমনকি কৃত্তিবাসী রামায়ণের কোনো কোনো পুঁথিতে পটলের পদের সন্ধান মেলে। তাহলেই বুঝুন!
আরো পড়ুন
জিভে জল আনা নিরামিষ ভাপার হদিশ
আজো একটা সাবেক পদেরই কথা। সাবেক, তবে সাধারণ নয়। এই পদে পটলের সঙ্গে জুটি বেঁধেছে নারকেল। দুটিকে প্রেমে মাখোমাখো করে রাঁধলে যা স্বাদ হয়, তা মুখে বলার নয়। নিরামিষ হলে কী হবে, এই পদ যে কোনো আমিষ পদকেও টেক্কা দেবে স্বাদে। এই পদের নাম? ধরে নিন ‘পটলের মাধুকরী’।
উপকরণ :
পটল- আধ কেজি
আলু- ২টো (ছোটো ছোটো টুকরোয় কাটা)
আদা-কাঁচালঙ্কা বাটা- দেড় চামচ
গোটা কাঁচালঙ্কা- ৪টে
পোস্তবাটা- ৩ চামচ
নারকেলবাটা- ৩ চামচ
ধনেগুঁড়ো- ১ চামচ
জিরেগুঁড়ো- হাফ চামচ
লঙ্কাগুঁড়ো- ১ চামচ
হলুদগুঁড়ো- ১ চামচ
এলাচ- ৩টে
ঘি- ১ চামচ
সরষের তেল বা সাদা তেল, কালোজিরে, নারকেল কোড়া, নুন, চিনি পরিমাণমতো।
প্রণালি:
পটলগুলো ভালো করে ধুয়ে মাঝখান থেকে দু’ভাগ করে লম্বাকারে কেটে নিন। এরপর, আলু ও পটল নুন-হলুদ মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখুন। ওই কড়াইতেই প্রয়োজনমতো তেল দিয়ে কালোজিরে ও গোটা কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিন। আদা-কাঁচালঙ্কাবাটা দিয়ে দু-তিন সেকেন্ড নেড়ে সমস্ত গুড়োঁ মশলাগুলো ও পরিমাণমতো নুন, চিনি দিয়ে দিন এবং সামান্য জল যোগ করে মশলাটা মাঝারি আঁচে কষিয়ে নিন।
এরপর, ভেজে রাখা আলু ও পটলগুলো দিয়ে দিন এবং সবটা একসঙ্গে নেড়ে মিশিয়ে নিন। সবটা মিশিয়ে পোস্তবাটা ও নারকেলবাটা দিয়ে দিন ও সামান্য গরম জল দিয়ে নেড়ে আলু সিদ্ধ হয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। সব সিদ্ধ হয়ে এলে অন্য একটি কড়াইতে কুড়িয়ে রাখা নারকেল খানিকটা শুকনো ভেজে ছড়িয়ে দিন এবং ঘি গরম করে তাতে এলাচ দিন। এলাচের সুবাস বেরোলেই সেটি তরকারির উপর ঢেলে দিন এবং সবটা নেড়ে একবার মিশিয়ে নিন। পরিবেশন সময় নারকেল কোড়া ছড়িয়ে পরিবেশন করুন এই সুস্বাদু খাবার।
ছবি: তর্পিণী ভুঁইঞা