বাংলার অতীত-বর্তমান মাতোয়ারা মুসুর-ডিমের বাহারে

“হংস-ডিমে কিছু তোল বড়া।”
মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর চণ্ডীমঙ্গল। কালকেতু তখন নিদয়ার গর্ভে। নিদয়ার সাধ হল বড়া খাবে। হাঁসের ডিমের বড়া। শুধু চণ্ডীমঙ্গল না, বড়ার কথা রয়েছে মনসামঙ্গলের নানা কাব্যেও। তবে, সেইসব ডালের বড়া। সেই কবে থেকে বাংলাদেশের খাদ্যাভ্যাসে জড়িয়ে আছে মুসুর, মুগডালের কিংবা ডিমের বড়া। সময় বদলেছে। আধুনকতার ছোঁয়ায় খাদ্যাভ্যাসে নানা বদল এসেছে আমাদের। নানা পদ জুড়েছে। নানা পদ হারিয়েও গেছে চিরতরে। কিন্তু, ডালের বড়ার সঙ্গে বাঙালির সম্পর্ক ঘোচেনি।
সে খাবারে শিকড় গাঁথা থাকে, তাকে নিয়ে খানিক পরীক্ষানিরীক্ষাও করা যায়। যেমন ধরুন, চণ্ডীমঙ্গলের ডিমের বড়া আর মনসামঙ্গলের ডালের বড়াকে যদি মিলিয়ে দেওয়া যায়! স্বাদ যে আরো খোলতাই হবে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। বেসন, ডিমের বড়া তো অনেক বাড়িতেই হয়। কিন্তু, ডাল ও ডিমের যুগলবন্দি খুব প্রচলিত নয় মোটেই। এবারে, এই ডুয়েটকে আরো জোরদার করতে বড়াগুলোকে ঢেলে দিন লোভনীয় ঝোলে। নানা মশলার বাহারে মাখামাখা ঝোলের ভিতর ডিম ও মুসুর ডালের বড়া। বাংলার সাবেক হেঁসেলের স্বাদকে যেন বুনে ফেলা আজকের স্বাদের ভিতর।
মুসুর-ডিমের বাহার --- ভাত বা রুটি যাই দিয়েই খান, জিভে জল আসবেই। তাহলে, আর কী! এবার দেখেই নেওয়া যাক রেসিপিটা।
উপকরণ:
মুসুরডাল বাটা- ১৫০ গ্রাম
পেঁয়াজকুচি- ১টা মাঝারি আকারের
পেঁয়াজবাটা- ১টা মাঝারি আকারের
টমেটোবাটা- ১টা মাঝারি আকারের
রসুন-আদা-কাঁচালঙ্কা বাটা- ১ চামচ
কাঁচা লঙ্কা কুচি- ২টো
হলুদগুঁড়ো- ২ চামচ
জিরেগুঁড়ো- ২ চামচ
ধনেগুঁড়ো- ২ চামচ
গরম মশলা গুঁড়ো- ১ চা-চামচ
লঙ্কাগুঁড়ো- ১ চামচ
শুকনো লঙ্কা গোটা- ২টো
তেজপাতা- ১টা
গোটা জিরে- সামান্য
ডিম-২টো
নুন, চিনি, সাদা তেল প্রয়োজনমতো
আরও পড়ুন
সাতক্ষীরার গোপন স্বাদের রং রেশরাঙায়
প্রণালী:
প্রথমে, ডালবাটার মধ্যে পেঁয়াজকুচি, জিরেগুঁড়ো, হলুদগুঁড়ো, ধনেগুঁড়ো, জিরেগুঁড়ো, (১ চামচ করে) কাঁচা লঙ্কাকুচি, নুন আর ডিম দিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে। এবার, কড়াইয়ে তেল দিয়ে, তেল গরম হলে তাতে মুসুর-ডিমের মিশ্রণটি দিয়ে ছোটো ছোটো বড়া ভেজে নিতে হবে হালকা বাদামি করে। তারপর, বড়াগুলি একটি পাত্রে তুলে রাখতে হবে।
এবার, ওই কড়াইতেই প্রয়োজনমতো তেল রেখে তাতে তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা, গোটা জিরে-ফোড়ন দিয়ে প্রথমে পেঁয়াজবাটা দিতে হবে। তারপর, একে একে আদা-রসুন-কাঁচালঙ্কাবাটা ও টমেটোবাটা, নুন, বাকি গুঁড়ো মশলাগুলো দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে তেল না ছাড়া পর্যন্ত। তেল ছাড়লে তাতে এক কাপ জল দিয়ে দিতে হবে। জল ফুটলেই তাতে ভেজে রাখা বড়াগুলো দিয়ে দিতে হবে। এরপর, মিনিট দুই-তিন পর গরম মশলাগুঁড়ো দিয়ে ঢাকা-চাপা দিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিলেই তৈরি মুসুর ডিমের বাহার।