জিভে জল আনা নিরামিষ ভাপার হদিশ

‘মরা মাচানের দেশ
ক’রে তোল মশগুল
ঝিঙে ফুল।’
ঝিঙে ফুল সত্যি বড়ো মায়াবী দেখতে। তাকে নিয়ে তাই অনায়াসে কবিতা লিখেছেন নজরুল ইসলাম। কিন্তু, ঝিঙে ফলটির বরাত মন্দ। সে আজীবন পড়ল সবজির ভাগে। ফল তার হওয়া হল না। দেখতে সে বদখত। রান্না না করে খাওয়াও যায় না। তাকে নিয়ে তাই কবিরা উতলা হননি বিশেষ। সুকুমার রায় অবশ্য লিখেছিলেন—‘তোমাদের ঐ ঝিঙের ক্ষেতে চিংড়ি গজায় যত’। কিন্তু, এ তো আর ঝিঙের স্তুতি করে লেখা নয় মোটে।
তবে, এহেন ঝিঙে কিন্তু বাংলার হেঁসেলে মোটে অপাংক্তেয় নয়। সেই কবে থেকে ঝিঙের কত পদে বুঁদ হয়েছে বাংলার মানুষ। রান্নার বাহারে তার স্বাদ খোলতাই হয়। খাদ্যগুণের কথা তো বাদই দিলাম। আজ ঝিঙেরই একটি পদের কথা। ঝিঙে ভাপা। সরষে-পোস্ত-নারকেলবাটা সহযোগে রাঁধা এই পদ খেলে হাত চাটতেই হবে। আদ্যন্ত নিরামিষ এই ভাপাও যে এত সুস্বাদু হতে পারে, না চাখলে বিশ্বাসই হবে না। হয়তো ঝিঙে ফল নিয়ে পদ্যও লিখতে ইচ্ছে হতে পারে তারপর। কে জানে!
উপকরণ:
ঝিঙে- ২টো বড়ো আকারের (একটু বড়ো টুকরো করে কাটা)
সরষেবাটা- ৩ টেবিল-চামচ (৩টে কাঁচালঙ্কা-সহ)
নারকেলবাটা- ১ টেবিল-চামচ
পোস্তবাটা- ২ টেবিল-চামচ
গোটা কাঁচালঙ্কা- ৪টে
হলুদ গুঁড়ো, নুন, চিনি, সরষের তেল প্রয়োজনমতো, লাগলে সামান্য জল।
প্রণালি:
সরষে বাটার আগে ঘণ্টা দুই ভিজিয়ে রাখুন। তারপর কাঁচালঙ্কা সহযোগে বেটে নিন। একটি স্টিলের টিফিন বাক্সে বা ঢাকা দেওয়া যায় এমন অ্যালমোনিয়ামের পাত্রে ঝিঙের টুকরোগুলো সমস্ত বাটা মশলা দিয়ে ভালো করে মেখে নিন। তার সঙ্গে প্রয়োজনমতো নুন, চিনি, হলুদ গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে মিশ্রণটি তৈরি করে নিন। প্রয়োজন মনে হলে সামান্য জল যোগ করুন। এবার, উপর থেকে সরষের তেল, কাঁচালঙ্কা দিয়ে পাত্রের মুখ বন্ধ করে কুকারে বা কড়াইয়ে বসিয়ে দিন। পনেরো মিনিট পর গ্যাস বন্ধ করে দিন। পাত্র খানিক ঠান্ডা হলে ঢাকনা খুলুন এবং গরম ভাতের সঙ্গে খান অতুলনীয় নিরামিষ ঝিঙে ভাপা।
ছবি: তর্পিণী ভুঁইঞা