No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ তীর্থ পর্যটন : পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় ছড়িয়ে আছে দুই মহামানবের স্মৃতি

    রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ তীর্থ পর্যটন : পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় ছড়িয়ে আছে দুই মহামানবের স্মৃতি

    Story image

    “পৃথিবীর ইতিহাস কয়েকজন আত্মবিশ্বাসী মানুষের ইতিহাস। সেই বিশ্বাসই ভিতরের দেবত্ব জাগ্রত করে।” – স্বামী বিবেকানন্দ।

    এই কথাগুলি বলেছিলেন সেই মনীষী, যিনি মানবতা এবং আধ্যাত্মিকতার বার্তা প্রচার করে সারা পৃথিবীর মন জিতে নেন। তাঁর প্রেরণা তথা গুরু ছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংস (Ramkrishna Paramhansa)। বিশ্বের নানা কোণ থেকে রামকৃষ্ণ (Ramkrishna) এবং স্বামী বিবেকানন্দকে (Swami Vivekananda) শ্রদ্ধা জানাতে প্রত্যেক বছর হাজার হাজার ভক্ত আসেন বাংলায়। পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) নানা জায়গায় দুই মহামানবের স্মৃতি ছড়িয়ে আছে। আমরা শুরু করছি ছোট্ট গ্রাম কামারপুকুর (Kamarpukur) থেকে, ১৮৩৬ সালে যেখানে রামকৃষ্ণ পরমহংসের জন্ম হয়।

    রামকৃষ্ণ ছোটোবেলায় যে হালদারপুকুরে স্নান করতেন, তার সংস্কার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে কামারপুকুর এখন জমজমাট পর্যটনকেন্দ্র। জয়রামবাটি মঠে আপনি দেখতে পাবেন শ্রী শ্রী মাতৃমন্দির এবং সারদা দেবীর বাড়ি।

    ১৯৫১ সালে রামকৃষ্ণ মিশন (Ramkrishna Mission) সেখানে নির্মাণ করে রামকৃষ্ণদেবের সুন্দর এক মন্দির। ভেতরে শোভা পাচ্ছে তাঁর মার্বেল মূর্তি। কামারপুকুরে গেলে সবার প্রথমে এই মন্দির আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবে। এছাড়াও রয়েছে গেস্ট হাউজ, লাইব্রেরি, দাতব্য চিকিৎসালয়, স্কুল এবং আরও বেশ কিছু আকর্ষণ। রামকৃষ্ণ ছোটোবেলায় যে হালদারপুকুরে স্নান করতেন, তার সংস্কার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে কামারপুকুর এখন জমজমাট পর্যটনকেন্দ্র। জয়রামবাটি মঠে আপনি দেখতে পাবেন শ্রী শ্রী মাতৃমন্দির এবং সারদা দেবীর বাড়ি। কামারপুকুর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে রয়েছে বিশালাক্ষী দেবীর মন্দির। প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির দিন ধুমধাম করে দেবীর পুজো হয়। ছোটোবেলায় গদাধর (শ্রীরামকৃষ্ণ) একদল ধার্মিক মহিলার সঙ্গে বিশালাক্ষী দেবীর পুজো দিতে গিয়ে সমাধিস্থ হন। স্থানীয় লোকেদের বিশ্বাস, তাঁর ওপর দেবী ভর করেছিলেন। কুটির শিল্পের জন্য জয়রামবাটি বিখ্যাত। বিশেষ করে আবলুস কাঠে বানানো হুঁকোর নল এবং জিলিপির মতো সুস্বাদু মিষ্টির জন্য।

    জয়রামবাটি-কামারপুকুরে কী কী দেখবেন

    রামকৃষ্ণ পরমহংস এবং সারদা দেবীর জন্মস্থান, যোগীর শিবমন্দির, বটগাছ, ভূতির খাল (এখানে শ্মশানে শ্রীরামকৃষ্ণ সাধনা করতেন) এবং আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

    কীভাবে যাবেন

    সড়কপথে কলকাতা (Kolkata) থেকে কামারপুকুরের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। ৩ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। দেখে এক রাতেই ফিরে আসতে পারেন। এছাড়া রামকৃষ্ণ মিশনের গেস্ট হাউজে থাকার ব্যবস্থা আছে। কামারপুকুর থেকে জয়রামবাটি ৬ কিলোমিটার দূরে।

    কাশীপুর উদ্যানবাটি

    কাশীপুরের এই বাগানবাড়িতে জীবনের শেষ কয়েক মাস কাটিয়েছেন শ্রীরামকৃষ্ণ। এই বাড়িতেই ১৮৮৬ সালে তাঁর মহাসমাধি হয়। এখানে রয়েছে সমৃদ্ধ এক গ্রন্থাগার। এছাড়া ধর্মীয় ক্লাস এবং ভজনের অনুষ্ঠান হয়। কল্পতরু উৎসব (পয়লা জানুয়ারি) এবং রামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ, সারদাদেবীর জন্মতিথি উপলক্ষ্যে আয়োজিত হয় বিশেষ উৎসব।

    কীভাবে যাবেন

    মধ্য কলকাতা থেকে গাড়িতে ৪৫ মিনিটের রাস্তা।

    সময় : সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১১টা এবং বিকেল সাড়ে ৩টে থেকে সন্ধে সাড়ে ৭টা।

    বেলুড় মঠ

    কাশীপুর থেকে গাড়ি নিয়ে সোজা চলে যান বেলুড় মঠ। এখানে সারা পৃথিবীর ভক্ত এবং ভ্রমণার্থীরা আসেন। নানা ধর্ম এসে মিলে যায় এই পুণ্যভূমিতে। হুগলি নদীর পশ্চিম তীরে প্রায় ৪০ একর জুড়ে বেলুড় মঠ। কলকাতা থেকে সড়কপথে যেতে সময় লাগে এক ঘণ্টার মতো। সবুজ গাছপালায় ঘেরা মনোরম জায়গা। শ্রীরামকৃষ্ণের মন্দির দেখলেই মনে জেগে ওঠে শ্রদ্ধা। সিঁড়ি দিয়ে উঠলে চোখে পড়বে, পদ্মফুলের ওপর ধ্যানস্থ হয়ে বসে আছেন রামকৃষ্ণদেব।

    দেখতে পাবেন বেদির ওপর সেগুন কাঠের ফ্রেমে অনন্য সুন্দর শামিয়ানা। গর্ভগৃহের দরজা নির্মাণ করেছেন এক চিনা কাঠশিল্পী। শ্রীরামকৃষ্ণ সমন্বয়ের প্রচারক হিসেবে সারা পৃথিবীতে খ্যাত। তাঁর এই মন্দিরেও প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য শিল্পরীতির সমন্বয় ঘটেছে। একটি ভেস্টিবুলের মাধ্যমে প্রার্থনাঘরের সঙ্গে জুড়ে আছে গর্ভগৃহ। যা অনেকটা গির্জার মতো। আবার বৌদ্ধ গুম্ফার মতো খিলানওয়ালা ছাদ, ঝুলন্ত ব্যালকনি এবং জমকালো থামও রয়েছে। জানলা এবং তোরণ রাজপুত ও মুঘল রীতিতে বানানো।  

    গর্ভগৃহের দরজা নির্মাণ করেছেন এক চিনা কাঠশিল্পী। শ্রীরামকৃষ্ণ সমন্বয়ের প্রচারক হিসেবে সারা পৃথিবীতে খ্যাত। তাঁর এই মন্দিরেও প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য শিল্পরীতির সমন্বয় ঘটেছে।

    ১৯২৯ সালের ১৩ মার্চ শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মতিথিতে এই মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্বামী শিবানন্দ। ঘুরে দেখুন সারদা দেবীর মন্দির, স্বামী ব্রহ্মানন্দের মন্দির, রামকৃষ্ণের পুরোনো মন্দির, স্বামী বিবেকানন্দের ঘর। আর রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দের মন্দির, যেখানে ১৯০২ সালে স্বামীজির পার্থিব দেহ ভস্মীভূত করা হয়।

    কীভাবে যাবেন

    কলকাতা থেকে সড়কপথে এক ঘণ্টার পথ

    সময় : সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ১১টা এবং বিকেল সাড়ে ৩টে থেকে ৫টা।

    এছাড়াও দেখতে পারেন বাগবাজারে মায়ের বাড়ি, বলরাম বাটি এবং উত্তর কলকাতার বিবেকানন্দ রোডে স্বামী বিবেকানন্দের পৈত্রিক বাসভবন ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @