No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    প্রথম বাঙালি কোটিপতির গল্প 

    প্রথম বাঙালি কোটিপতির গল্প 

    Story image

    বাংলাতেও এমন মিলিয়নিয়ার ছিলেন তবে! সুদূর আমেরিকা পর্যন্ত যার সপ্তডিঙা ছুটত! তরতরিয়ে যার ভাগ্য দৌড়েছিল বৃহস্পতির দিকে। নাহ, তবে ভাগ্যের দোহাই দিয়ে তাঁর পরিশ্রমকে ছোটো করা ঠিক নয়। তাঁর সুবিশাল বাড়িখানার বিশালত্ব হ্রাস পেলেও সম্পূর্ণ উবে যায়নি আজও। আমরা সে বাড়িকে চিনি ছাতুবাবু লাটুবাবুর বাড়ি হিসেবেই। তবে তাদের আড়ালের মানুষটি তাদের পিতা শ্রীযুক্ত রামদুলাল দে।

    বিডন স্ট্রিটের ৬৭ এ-বি-সি-ডি- বাড়িগুলিতে একসময় ছিল রামদুলাল বাবুরই দাপট। আজ অবশ্য সে দাপট লোকস্মৃতিতেও নেই। থাকবার কথাও নয়। তবু প্রথম বাঙালি কোটিপতি বলে কথা। রামদুলাল বাবু অবশ্য জন্মেছিলেন দমদমের কাছে রেকজানি গ্রামে, ১৭৫২ সালে। বর্তমান দমদম বিমানবন্দরের কাছেই নাকি ছিল সেই গ্রাম। ছোটোবেলাতেই পিতৃমাতৃহীন হয়েছিলেন রামদুলাল। একমাত্র নাতিকে মানুষ করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন রামদুলালের ঠাকুমা। হাটখোলার দত্তবাড়িতে তিনি নাকি নিয়েছিলেন রাঁধুনির কাজ। অল্প বয়স থেকে রামদুলালও লেগে পড়েছিল কাজে। জাহাজ-ব্যবসায়ী মদনমোহন দত্তের কাজে হাতেখড়ি। তারপর নিজের দক্ষতাতেই শিপসরকারের পদে উন্নতি। রামদুলাল সেখানেই শিখেছিলেন ব্যবসার আধুনিক ধরনধারণ। শিখেছিলেন বুক-কিপিং পদ্ধতিতে হিসেব রাখার কাজ। কাজে নিষ্ঠা তো তাঁর ছিলই। আর সবথেকে বেশি ছিল সততা। তারপর একদিন সেই সততার পুরস্কারেই তাঁর জুটে গেল একলক্ষ টাকা। নিলামে একটি ডুবে-যাওয়া জাহাজ কিনে হাতে পেয়েছিলেন একলক্ষ টাকা। সততার সঙ্গেই তা তুলে দিয়েছিলেন মালিকের হাতে। তার পুরস্কার হিসেবেই মদনমোহন তাঁকে সে টাকা ফিরিয়ে দেন। 

    আরও পড়ুন
    এক যে আছে রাজভবন

    ব্যস! এইবার সে টাকা দিয়ে স্বাধীন ব্যবসা। রামদুলাল দের জাহাজ দৌড় দিল পশ্চিম গোলার্ধের আটিলান্টিক মহাসাগরের তীরে সুদূর আমেরিকায়। তাঁর হাত ধরেই আমেরিকার সঙ্গে বাংলার বহির্বাণিজ্যের যোগাযোগ।  বোস্টন সালেম ফিলাডেলফিয়া নিউইয়র্ক - পর্যন্ত সেসময় দৌড়ত রামদুলালের জাহাজ। ইংরেজরা যখন আমেরিকার বাণিজ্যে বাধ সাধতে ব্যস্ত, তখন এই রামদুলালই ছিলেন তাদের বলভরসা।  নিজের দুই কন্যার নামে জাহাজের নাম রেখেছিলেন রামদুলাল- কমলা ও বিমলা। আর রামদুলালের নামে জাহাজ চলত সুদূর আমেরিকা থেকে।

    কোটি কোটি টাকা রোজগার করেছিলেন তো বটেই, পাশাপাশি দানও করেছিলেন সুপ্রচুর। হিন্দু কলেজ নির্মাণে, মাদ্রাজের দুর্ভিক্ষে। আর হ্যাঁ, কোটিপতি মানুষের খরচের হাতও মোটেই কম ছিল না। দুই ছেলের বিয়েতে প্রায় সাতদিন ধরে চলেছিল মজলিস। প্রথম দু-দিন ছিল সাহেবদের জন্যে বরাদ্দ, আর পরের দিনগুলিতে ছিল দেশি মানুষের ভিড়। ইস্তেহারও নাকি বেরিয়েছিল সেই মর্মে।

    যাইহোক সেসব দিন আজ অতীত। আজকাল অবশ্য কোটিপতি ব্যবসায়ীর মানেও গেছে পালটে, অর্থও। তাই বাঙালির গরিমালিপিতে আরো হয়তো দীর্ঘকাল রাজত্ব করে যাবেন একা রামদুলালই।

    ছবিসূত্র – flickriver, facebook 


     

    Tags:

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @