No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের স্থপতি ছিলেন এক বঙ্গসন্তান

    ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের স্থপতি ছিলেন এক বঙ্গসন্তান

    Story image

    আলিপুর চিড়িয়াখানার সামনে কলকাতা কর্পোরেশনের মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার ব্রাডফোর্ড লেসলি মিস্ত্রিদের কাজ বোঝাতে গিয়ে ভারি নাস্তানাবুদ হচ্ছেন। সমস্যাটা ভাষার। সাহেব ঠিকঠাক কথা বলতেই পারছেন না, তাই কাজ পণ্ড হচ্ছে। অনেকটা সময় ধরে এই ব্যাপার দেখছিলেন এক বাঙালি যুবক। শেষমেশ তিনি এগিয়ে গিয়ে সাহেবের সঙ্গে কথা বললেন। সাহেবের নির্দেশ প্রাঞ্জলভাবে বাঙালি মিস্ত্রিদের বুঝিয়ে দিলেন। লেসলি সাহেব তো মহাখুশি। তখনই সেই যুবককে তিনি প্রস্তাব দিলেন, পলতায় জল প্রকল্প নির্মাণের দায়িত্ব তিনি নিতে পারবেন কিনা। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময় দিলেন ২৪ ঘণ্টা। যুবকের মনে কিন্তু দ্বিধা নেই কোনো। রাজি হয়ে গেলেন তিনি।

    এই যুবকের নাম রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। কিংবদন্তী বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার এবং উদ্যোগপতি। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল নির্মাণের দায়িত্বে ছিল মার্টিন বার্ন কোম্পানি। স্যার টমাস অ্যাকুইনাস মার্টিনের সঙ্গে অংশীদারিত্বে রাজেন্দ্রনাথ এই কোম্পানি গড়ে তুলেছিলেন ১৮৯২ সালে। ১৯০৬ সালে মার্টিন মারা গেলে রাজেন্দ্রনাথই হন ওই কোম্পানির সিনিয়র পার্টনার। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল নির্মাণের ভার লর্ড কার্জন দিয়েছিলেন প্রখ্যাত স্থপতি উইলিয়াম এমারসনকে। এমারসন সেই কাজের জন্য টেন্ডার ডাকলেন। সেই অনুযায়ী রাজেন্দ্রনাথও আবেদন করলেন। রাজেন্দ্রনাথের পরিকল্পনা শুনে এমারসন এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তাঁর কোম্পানিকেই দিলেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল নির্মাণের গুরুভার। এই বিশ্বখ্যাত স্থাপত্য নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ১৯০৬ সালে, যা ১৯২১ সালে সমাপ্ত হয়।

    বসিরহাটের ভ্যাবলা গ্রামে তাঁর জন্ম। বাবাকে হারিয়েছিলেন মাত্র ৬ বছর বয়সে। সেই বিপর্যয় কাটিয়ে তিনি স্কুলের পাঠ নেন, এবং তারপর ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বেন বলে। তখন শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়াশোনা হত প্রেসিডেন্সিতেই। রাজেন্দ্রনাথ ৩ বছর ইঞ্জিনিয়ারিং-এর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিলেন, কিন্তু স্বাস্থ্যের কারণে মূল পরীক্ষায় বসা হয়ে ওঠেনি তাঁর। এদিকে স্বাধীন ব্যবসা করার জেদ চেপে বসেছে তাঁর মাথায়। তখনই আলিপুর চিড়িয়াখানার সামনে স্যার লেসলির সঙ্গে তাঁর দেখা। বাকিটা ইতিহাস।

    মার্টিন বার্ন কোম্পানি ছাড়াও ইস্কো, স্ট্যান্ডার্ড ওয়াগন বার্ন কোম্পানি, স্টিল কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার মতো সংস্থাগুলির কর্ণধার ছিলেন। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ছাড়াও হাওড়া ব্রিজ, বেলুড় মঠ ও মন্দির, টিপু সুলতান মসজিদ, কলকাতার বিধানসভা ভবন নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে তাঁর নাম। গ্রামেগঞ্জে রেল পরিষেবাকে আরও ছড়িয়ে দিতে ছোটো লাইন বা ন্যারো গেজ তৈরি করেছিল তাঁর সংস্থা মার্টিন। গড়ে উঠেছিল মার্টিন লাইট রেলওয়ে। হাওড়া-আমতা, বারাসত-বসিরহাট, বক্তিয়ারপুর-বিহার, আরা-সাসারামপুর, দিল্লি-সাহরানপুরের মতো পথে চালু হল মার্টিন লাইন। সমস্তটাই ছিল স্যার রাজেন্দ্রনাথের উদ্যোগ। বিশ্বকর্মার বরপুত্র এই বাঙালির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কলকাতার ডালহৌসি অঞ্চলে একটি রাস্তার নাম রাখা হয়েছে তাঁর নামে। সেই আরএন মুখার্জি রোড এখন মহানগরের ব্যস্ততম রাস্তাগুলির একটি। 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @