রজনীকান্তের কথা শুনে দাড়ি ছিঁড়তে লাগলেন গোঁড়া মুসলমান

(১)
রজনীকান্ত পেশায় ছিলেন উকিল। উকিলদের আড্ডায় তিনি চমৎকার মজার গল্প শোনাতেন। একদিন তিনি উকিলের আড্ডায় বসে মজার মজার গল্প বলেছিলেন।
এক উকিলের কাছে একজন চাষী মক্কেল এসেছে। উকিল জিজ্ঞেস করলেন ‘বিয়ের সময় তোমার কত বয়স ছিল? চাষীটি বলল ‘সতেরো বছর।’
উকিল—তোমার স্ত্রীর বয়স কত ছিল?
চাষী—বারো বছর।
উকিল—এখন তোমার বয়স কত?
চাষী—আজ্ঞে তা ত্রিশ-বত্রিশ হবে।
উকিল—তাহলে তার স্ত্রীর বয়স কত
চাষী—প্রায় সাতচল্লিশ আটচল্লিশ হবে।
উকিল—সে কি! তোমার স্ত্রী হঠাৎ তোমার চেয়ে বড় হয়ে গেল কী করে?
চাষী—আজ্ঞে, ঐ কথাটাই কোনো ভদ্রলোককে আজ পর্যন্ত বোঝাতে পারলাম না। স্ত্রীলোকের বাড় যে বড় বেশী।
(২)
রজনীকান্ত নিজে উকিল হয়েও উকিলদের আড্ডায় বসে উকিলদের নিয়ে ঠাট্টা করতে ছাড়তেন না। একদিন তিনি আড্ডায় বসে এরকমই একটি মজার গল্প বলেছিলেন।
একদিন একটা রাখাল দুটো গরু নিয়ে যাচ্ছে। গরু দুটোর একটা রোগা। আরেকটা মোটা। একজন উকিল যাচ্ছিলেন সেই পথ দিয়ে। উকিলটি রাখালকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোর এই গরুটি এত মোটা আর অন্যটা এত রোগা কেন রে? খেতে দিস না নাকি?’ রাখালটি উকিলকে বলল ‘না না, তা নয়, মোটা গরুটা উকিল আর রোগা গরুটা তার মক্কেল।’
(৩)
কবি রসময় লাহা তাঁর সদ্য প্রকাশিত ‘ছাইভস্ম’ নামক বইটি একদিন রজনীকান্তকে উপহার দিলেন। রজনীকান্ত তখন তাঁর সদ্য প্রকাশিত ‘অমৃত’নামের কবিতার বইটি রসময় লাহাকে উপহার দিয়ে বললেন, ‘ছাইভস্ম’ দিয়ে ‘অমৃত’ নিয়ে যান।’
(৪)
একদিন রজনীকান্ত বসে আছেন রাজশাহীর বাড়ির বৈঠকখানা ঘরে। এমন সময় এক গোঁড়া মুসলমান মক্কেল এলেন তাঁর কাছে। বৈঠকখানা ঘরে একটা আয়না, চিরুনি আর ব্রাশ থাকত। মক্কেলটিকে বসতে বলে রজনীকান্ত মক্কেলের কাগজপত্র উল্টেপাল্টে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। হঠাৎ তাঁর চোখে পড়ল ঐ মক্কেলটি ঘরে রাখা চুল আঁচড়াবার ব্রাশটি দিয়ে তাঁর দাড়ি আঁচড়াচ্ছেন। এই দেখে রজনীকান্তের মাথায় একটা দুষ্টবুদ্ধি চাপল। তিনি ঐ মক্কেলটিকে বললেন ‘আপনি যে ব্রাশ দিয়ে দাড়ি আঁচড়াচ্ছিলেন ওটা কোন জানোয়ারের রোঁয়ায় তৈরি জানেন? যার নাম শুনলে আপনারা কানে আঙুল দেন।’ এই কথা শুনে গোঁড়া মুসলমানটি তক্ষুনি ব্রাশটি ছুঁড়ে ফেলে ‘তোবা তোবা’ করতে করতে দাড়ি ছিঁড়তে লাগলেন। রজনীকান্ত নির্বিকার।
(ঋণ – মনীষীদের রসিকতা / শান্তা শ্রীমানী)