No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    কৌশল বদলাচ্ছেন রাহুল, ভালই করছেন

    কৌশল বদলাচ্ছেন রাহুল, ভালই করছেন

    Story image

    ৬ মাস বাদে নিজের সংসদীয় ক্ষেত্রে গিয়ে রাহুল গান্ধী বলেছেন, ক্ষমতায় এলে ৬ মাসের মধ্যেই দেশের বেকারি ও কৃষকদের সমস্যার সমাধান করে দেবেন। কেউ বিশ্বাস করবেন? করার কারণ নেই। কিন্তু এই দাবির মধ্যে থেকে একটা কথা পরিষ্কার। কৌশল বদলাচ্ছেন রাহুল। এতদিনে বুঝেছেন, কেন্দ্র যা কিছু করবে শুধুই তার বিরোধিতা করে গেলে চিড়ে ভিজবে না। উত্তরপ্রদেশে প্রচারের সময় তিনি গোটা ব্যবস্থার ব্যর্থতার দায় চাপাতে চেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদির ওপর। যেন মানুষ জানেন না স্বাধীনতার পরের ৭০ বছরে মধ্যে কংগ্রেস শাসন করেছে ৫৫ বছর। ভোটাররা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তাঁকে। এবার তাই স্বপ্নের ফেরিওয়ালা নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে তিনি নামলেন স্বপ্নের প্রতিদ্বন্দ্বী ফেরিওয়ালা হিসাবে। ৬ মাসে দিনবদলের দাবি তারই অঙ্গ।

    আমেঠি সফরে প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে কংগ্রেস সহসভাপতি বলেছেন, ‘হয় প্রধানমন্ত্রী দেশের যুবকদের কাজের সুযোগ দিন। কৃষকদের সমস্যার সমাধান করুন। আর যদি তা না পারেন তা হলে ক্ষমতা থেকে সরে যান। ক্ষমতায় আসার ৬ মাসের মধ্যেই কংগ্রেস এই সমস্ত সমস্যার সমাধান করে ফেলবে।’ সেই সঙ্গে কংগ্রেস সহসভাপতি এই কথাও বলেছেন যে মোদি সরকার কংগ্রেস আমলে গৃহীত প্রকল্পগুলি রূপায়ণ করেই নাম কিনতে চাইছে। কিন্তু ঠিকঠাকমতো তৈরি না হয়ে নেমে পড়ছে। রাহুলের মতে, উপযুক্ত প্রস্তুতি না নিয়েই সরকার পণ্য এবং পরিষেবা কর (‌জিএসটি)‌ চালু করায় দেশের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে এই মোদিই যে কংগ্রেস সরকারের চালু করা গ্রামীণ রোজগার প্রকল্প নারেগার সমালোচনা করেছিলেন, সে কথাও উল্লেখ করেছেন রাহুল।

    রাহুলের কথা শুনে আমেঠি তো বটেই, গোটা দেশের কংগ্রেস কর্মীরা চাঙ্গা হতে পারেন। কংগ্রেস সূত্রের খবর, এবার কংগ্রেস সভাপতি হতে চলেছেন রাহুল। ইতিমধ্যেই তিনি নিজের পছন্দমতো টিম তৈরি করতেও শুরু করেছেন। অর্থনীতির হাল যখন বেশ খারাপ, ঠিক সেইসময়েই রাহুল গান্ধী এভাবে আসরে নামায় প্রতিপক্ষকে বাড়তি চাপের মধ্যে ফেলা যাবে বলে মনে করছে দল। কিন্তু প্রতিপক্ষকে বাদ রেখেও রাহুলের কৌশল দলের মধ্যে দু–তিনটে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবেই বলা যাবে তিনি সত্যিসত্যিই চ্যালেঞ্জার হিসাবে রিংয়ে ঢুকেছেন। এক, তাঁকে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। এতদিন তাঁর মধ্যে এই ধারাবাহিকতার খুব বেশি রকমের অভাব ছিল। দুই, কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারা তাঁকে কতটা গ্রহণ করেন তা দেখতে হবে। তাঁদের অনেকের মধ্যেই তাঁর সম্পর্কে আপত্তি ছিল। তিন, আরও কিছু ইতিবাচক বিষয় তাঁকে প্রচারে আনতে হবে। কারণ, এখন অর্থনীতির হাল খারাপ হলেও এক বছর পর (‌মোদি লোকসভা ভোট ছ মাস এগিয়ে আনতে পারেন)‌ অবস্থা তেমনই থাকবে, এমন নিশ্চয়তা নেই।

    এরপর আসবে বৃহত্তর রাজনৈতিক লড়াইয়ের বিষয়টি। মোদি একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। তিনি বলছেন, এখন কষ্ট করলে ভবিষ্যতে এক সফল, সুন্দর দেশ গড়ে উঠবে। তেমন দেশের চেহারা নাকি স্পষ্ট হবে ২০২২ সালে। তার অনেক আগেই লোকসভা ভোট হয়ে যাবে। আগামী বাজেটে গরিব মানুষের জন্য নিশ্চিতভাবেই কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মধ্যবিত্তদের জন্য থাকতে পারে আয়করে ছাড়। এ সবেরই লক্ষ্য হবে এই সব মানুষদের সঙ্গে টানা। আর তারপরের পরীক্ষাটা হচ্ছে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্ন। মোদি যে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মানুষে তার শরিক হবেন কিনা তা নির্ভর করবে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর। মোদির বিরুদ্ধে লড়তে হলে রাহুলকে সেই বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জণ করতে হবে। শুধু সরকার–বিরোধী হাওয়ার ওপর নির্ভর করে ভোট–বৈতরণী পার হওয়া সহজ হবে না। এইখানে রয়েছে রাহুলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, লড়াইটা হবে বিশ্বাসযোগ্যতার লড়াই।

    রাহুলের সফর শেষ হলেই আমেঠি পৌঁছবেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। সঙ্গে থাকবেন স্মৃতি ইরানিও। আগামী লোকসভা নির্বাচনে আমেঠিতে রাহুলকে হারানোর জন্য দল প্রাণপন চেষ্টা করবে, তা বিজেপি গোপন রাখেনি। কিছুদিন আগেই আমেথিতে ‘সাংসদ নিখোঁজ’ বলে বেশ কিছু পোস্টারও দেখা গিয়েছিল। এই সবেরই উদ্দেশ্য রাহুলকে বাড়তি সময় নিজের সংসদীয় ক্ষেত্রে আটকে রাখা। কিন্তু আমেঠিতে বিজেপি ততটা আত্মবিশ্বাসী বলে মনে হয় না। তাহলে রাহুল গান্ধীর এই সফর আটকাতে তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হত না। এইসব নিয়ে মাথা না–ঘামিয়ে বৃহত্তর প্রশ্নগুলো সামনে আনলে, এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে, রাহুল কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে ফেলতে পারবেন মোদিকে।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @