‘জাতীয় শিক্ষক ২০২৩’ সম্মাননা পেলেন রঘুনাথপুর নফর একাডেমির প্রধান শিক্ষক ড. চন্দন মিশ্র

প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্ররা
রঘুনাথপুর নফর একাডেমি (এইচ এস)-এর সাফল্যের মুকুটে নতুন পালক যোগ করলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক, ডক্টর চন্দন মিশ্র। এবার সারা দেশের ৫০ জন শিক্ষককে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে থেকে ৫ সেপ্টেম্বর, শিক্ষক দিবসে ভারত সরকারের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে ভূষিত হলেন চন্দনবাবু। দিল্লিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু’র কাছ থেকে তিনি ‘জাতীয় শিক্ষক ২০২৩’ সম্মাননা গ্রহণ করেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে আগামী প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষার আলোয় পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষক চন্দন মিশ্র’র কথা না বললেই নয়। তবে তার আগে বলি স্কুলের ইতিহাস প্রসঙ্গে।
প্রধান শিক্ষক ড. চন্দন মিশ্র
রঘুনাথপুর নফর একাডেমি (এইচ এস), হাওড়া জেলার উপকণ্ঠে, পূর্বে হুগলির সীমানায় অবস্থিত একটি খ্যাতনামা স্কুল। বালি থানা বর্তমানে নিশ্চিদা থানা, তার আশেপাশের প্রাচীনতম স্কুল হচ্ছে এই রঘুনাথপুর নাফর একাডেমি (এইচ এস), যা প্রায় ১০০ বছর ধরে এলাকার হাজার হাজার মানুষের কাছে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করে চলেছে। আগে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি হুগলি জেলার অধীনে ছিল। ১৯৩২ সালে এটি হাওড়া জেলার অধিক্ষেত্রের অধীনে চলে আসে। বিখ্যাত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ১৯২০ সালে অভয়নগরের বিশিষ্ট ‘ধারা’ পরিবারের অন্তর্গত একজন মহান উদ্যোক্তা ও স্বপ্নদর্শী প্রয়াত নফর চন্দ্র ধারা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে, এটি একটি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে পশ্চাদপদ এলাকায়, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে যাত্রা শুরু করে, পরবর্তীকালে এই স্কুলটি ১৯৪৪ সালে একটি মিডল ও জুনিয়র প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে পড়ুয়াদের পড়ানো শুরু করে। তারও পরে এটি ১৯৯৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে উন্নীত হয়। বর্তমানে এটি একটি সরকার পোষিত উচ্চমাধ্যমিক স্কুল। স্কুলটি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ দ্বারা স্বীকৃত এবং অনুমোদিত। এই স্কুলে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ, এই সম্পর্কের ভিত্তিতেই এখানে পঠনপাঠন চলছে। শুরু থেকেই স্কুলটি কেবলমাত্র একাডেমিক ক্ষেত্রেই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্র বিশেষত খেলাধুলা, বিজ্ঞান-সেমিনার ইত্যাদিতে উল্লেখযোগ্য চিহ্ন রেখে চলেছে। বর্তমানে ৮০০ শিক্ষার্থীর সঙ্গে, তরুণ ও আধুনিক ভাবনার প্রধান শিক্ষক এবং কঠোর পরিশ্রমী, অত্যন্ত যোগ্য আন্তরিক ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ও কর্মরত নন-টিচিং স্টাফ রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি শুধু জেলাতে নয়, রাজ্যেও একটি খুব পরিচিত স্কুল। রুটিন একাডেমিক বিষয়গুলি ছাড়াও, এখানে বিভিন্ন ধরনের সহ-পাঠক্রমিক কার্যক্রম যথাযথ যত্ন এবং গুরুত্বের সঙ্গে সারা বছর চর্চা করা হয়। শিক্ষার আলো এলাকার প্রতিটি কোণে কোণে পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
জিম-এর মাধ্যমে শরীর চর্চার ব্যবস্থা রয়েছে স্কুলে
এবার প্রধান শিক্ষকের প্রসঙ্গে আসা যাক। প্রধান শিক্ষক ড. চন্দন মিশ্র’র ভাবনা, কাজ স্কুলকে সমৃদ্ধ করছে। চন্দন মিশ্র বর্তমানে অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাষ্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস-এর সদস্য। এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি চন্দন মিশ্র’র এই জাতীয় সম্মান পাওয়ার জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, “আমাদের সংগঠনের একজন যোগ্য সদস্য হিসেবে, তাঁর শিক্ষক জীবনের উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য ড. চন্দন মিশ্র রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাওয়ায় আমরা গর্বিত। তিনি যে স্বীকৃতি পেলেন তাতে বাংলার মুখ সারা দেশে আরও উজ্জ্বল করলেন।”
রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন ড. চন্দন মিশ্র
শিক্ষাদানে আইসিটি-র ব্যবহার বিষয়ে ড. চন্দন মিশ্র’র সাফল্য রয়েছে। তাঁর কথায়, “একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে আমি শ্রেণীকক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) প্রয়োগ উদ্ভাবন গ্রহণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে ইংরেজির শিক্ষক, নিজেই প্রত্যক্ষ করেছি আমার ছাত্র-ছাত্রীদের শেখার অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে ICT-এর প্রভাব। আমার মধ্যে ভাষা শিক্ষার চারটি স্তম্ভ-পড়া, লেখা, শোনা এবং কথা বলা --এই বিষয়গুলি আমি আইসিটি টুলগুলির একটি পরিসরে অন্তর্ভুক্ত করেছি, যেগুলি উভয়ই কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে স্বল্পমূল্যের পাঠক্রম হিসেবে এবং তা কাজে লাগছে। readalong.google.com –এর মতো টুল পড়া এবং গল্প বলার ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে আগ্রহ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। স্টোরিলাইন অনলাইন (storylineonline.net) হচ্ছে উচ্চারণের বিকাশে সাহায্যকারী আরেকটি অমূল্য সম্পদ।”
রঘুনাথপুর নফর একাডেমি (এইচ এস) বিদ্যালয়ের কৃতিত্ব:
● গত ৩ বছরে ৬ জন শিক্ষার্থী উদ্ভাবনী ধারণা প্রদর্শনের জন্য ইন্সপায়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে
ডিএসটি, নয়াদিল্লি থেকে
● ২০২০ সালে সমগ্র শিক্ষা মিশনের ICT ব্যবহারের জন্য সেরা স্কুল পুরস্কার
● ছাত্ররা কলা উৎসব, জেলা এবং রাজ্য স্তরের সাঁতারে সাফল্য পেয়েছে, ফুটবল, যোগব্যায়াম-এ সাফল্য লাভ করেছে
● ব্লক স্তরের যুব সংসদ প্রতিযোগিতা চ্যাম্পিয়ন ২০২২
● স্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য-- এই বিষয়ের উপর জাতিসংঘের প্রকল্প SUCHANA-তে সেমিফাইনালিস্ট
● প্রতিকূল পারিবারিক অবস্থা থেকে আসা শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকভাবে ভালো ফল করেছে পরীক্ষায়
● স্কুল সংস্কৃতিকে উন্নত করার জন্য স্কুলের কর্মীদের অসাধারণ টিম ওয়ার্ক।
এ ছাড়া স্কুলের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল ভালোই হয় বলে জানালেন প্রধান শিক্ষক। স্কুলে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে কো-এডুকেশন সিস্টেম চালু রয়েছে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ৮০০-র কাছাকাছি। উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সায়েন্স, আর্টস, কমার্স পড়ানো হয়।
স্কুলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফল ভালো এবং আশাপ্রদ হয়। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি, নিউট্রিশন, ভূগোল, কম্পিউটার সায়েন্স-এর ল্যাবরেটরি আছে। ভালো লাইব্রেরি আছে। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য খেলার মাঠ আছে, যার আয়তন ৮০ কাঠা। স্কুলের বিশেষত্ব হচ্ছে, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের অসাধারণ করে তোলা, শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার করে পড়ুয়াদের আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
_________________
তথ্য সূত্রঃ ড. চন্দন মিশ্র, প্রধান শিক্ষক, রঘুনাথপুর নফর একাডেমি (এইচ এস)
ছবি: সংগৃহীত
*কলকাতা, শহরতলি বা জেলার কোনও না কোনও স্কুলের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে গর্বের ইতিহাস রয়েছে, রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বুনিয়াদি গল্প। এবার সেদিকেই ফিরে তাকিয়ে চলছে নতুন ধারাবাহিক ‘আমাদের ইস্কুল’। সমস্ত পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন। চোখ রাখুন প্রতি বুধবার সন্ধে ৬টায়, শুধুমাত্র বঙ্গদর্শনে।