No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    সঙ্গীহারা একলা পাখির বিলাপে পদ্মার চরে পাখি শিকার নিষিদ্ধ করেন রবীন্দ্রনাথ   

    সঙ্গীহারা একলা পাখির বিলাপে পদ্মার চরে পাখি শিকার নিষিদ্ধ করেন রবীন্দ্রনাথ   

    Story image

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড়ো ছেলের নাম রথীন্দ্রনাথ। বড়ো মেয়ে মাধুরীলতার পরই তাঁর জন্ম হয়েছিল, ১৮৮৮ সালে। পরবর্তীকালে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর হয়ে উঠেছিলেন বিশিষ্ট কৃষিবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ এবং লেখক। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন তিনি। ছোটোবেলায় তিনি ছিলেন রুগ্ন। স্বাস্থ্য খুব একটা ভালো ছিল না। এই নিয়ে উদ্বেগে থাকতেন পিতা রবীন্দ্রনাথ। 

    রবি ঠাকুরের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্ব কেটেছে শিলাইদহে। জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে এখানে তিনি এসেছিলেন। এখানে বসেই রচনা করেন বেশ কিছু অমূল্য সাহিত্যগ্রন্থ। জগদীশচন্দ্র বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, প্রমথ চৌধুরীর মতো মণীষীরা শিলাইদহে আসতেন রবি ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করতে। 

    যে ঘটনার কথা বলছি, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বয়স তখন দশ-বারো বছর। শিলাইদহে মনের আনন্দে দিন কাটাতেন। ঘুরে বেড়াতেন পদ্মার খোলা চরে। বিশাল ফাঁকা চর, মানুষের বসতি নেই। যেখানে সেখানে জমে আছে জল। মানুষের কোলাহল থেকে দূরে এমন জায়গা পাখিদের কাছে খুব লোভনীয়। প্রচুর পাখির সমাগম হত সেখানে। আর তাদের মারতে হানা দিত শিকারিরা। 

    রবি ঠাকুরের কর্মচারীদের মধ্যেই কেউ কেউ ছিলেন দক্ষ শিকারি। তাঁদের থেকে শিকারের নেশা পেয়ে বসল বালক রথীন্দ্রনাথকে। মাঝেমাঝেই তিনি চলে যেতেন পদ্মাচরের বিলে। ঘাড়ে থাকত বন্দুক। ছেলের এহেন কাজকর্ম খুব একটা পছন্দ করতেন না রবি ঠাকুর। তবে বারণও করতেন না, কারণ, ঘন ঘন শিকারে গিয়ে রথীন্দ্রনাথের স্বাস্থ্য ক্রমেই উন্নত হচ্ছিল। কায়িক পরিশ্রম, পদ্মার নির্মল বাতাস সেবন, মনের আনন্দ – সব কিছুর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছিল শরীরে।

    ওই সময়ে পদ্মার চড়ে এক জোড়া চখাচখি এসেছিল। মনের আনন্দে তারা ঘুরে বেড়াত। চখাচখি দারুচিনি রং-এর এক প্রজাতির বড়ো আকারের হাঁস। এরা জোড়ায় থাকে। পুরুষ পাখিটিকে চখা আর মেয়েটিকে চখি বলা হয়। এই ধরনের পাখি নানা দেশে পাড়ি দেয় পরিযায়ী হয়ে। শীতকালে ঝাঁক বেঁধে বাংলাতেও আসে। 

    শিকারের সময়ে রথীন্দ্রনাথের প্রধান সঙ্গী হিসেবে থাকতেন ঠাকুরবাড়ির বোটের এক মাঝি। অসমসাহসী সেই মাঝি নিজেও ছিলেন অভিজ্ঞ শিকারি। তাঁর গুলির নিশানা ছিল অব্যর্থ। গুলি করে তিনি ওই দু’টি পাখির একটিকে মেরে ফেলেন। আরেকটি পাখি বেঁচে যায় প্রাণে। সে করুণ সুরে বিলাপ করতে থাকে। তার অনবরত ক্রন্দন নির্জন চরের নৈঃশব্দকে ভেঙে খানখান করে দেয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সংবেদনশীল মন আর স্থির থাকতে পারে না। তাঁদের জমিদারির অন্তর্গত পদ্মার চরে পাখি শিকার তিনি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। 

    তথ্যসূত্র-  মা নিষাদ, প্রভাতচন্দ্র গুপ্ত, রবীন্দ্র স্মৃতি, বিশ্বনাথ দে সম্পাদিত। 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @