ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল যেভাবে হয়ে উঠল আর.জি.কর হাসপাতাল

১৮৮৬ সাল। ব্রিটেনের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রের ডিগ্রি নিয়ে কলকাতায় ফিরলেন ডঃ রাধাগোবিন্দ কর। একমাত্র ধ্যান জ্ঞান কলকাতায় তৈরি করবেন একটি জাতীয় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। কিছুদিন পর একটি বৈঠক আহ্বান করলেন। সেখানে অংশগ্রহণ করলেন ডঃ মহেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, ডঃ অক্ষয় কুমার দত্ত, ডঃ বিপিন বিহারী মৈত্রর মতো সব নামী চিকিৎসকেরা। সেইদিনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল ব্রিটিশ সরকারের অধীনে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পৃথক একটি মেডিক্যাল স্কুল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। এই সিদ্ধান্ত থেকে বৈঠকখানা বাজার রোডে ক্যালকাটা স্কুল অব মেডিসিন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং শীঘ্রই তা বৌবাজার স্ট্রিটে স্থানান্তরিত হয়। ডঃ জগবন্ধু বসু এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম সভাপতি এবং ডঃ রাধাগোবিন্দ কর প্রথম সম্পাদক নির্বাচিত হন। বাংলা ভাষাকে শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসেবে স্থির করা হয়। এবং পঠন পাঠনের সময়কাল নির্ধারিত হয় তিন বছর। ১৮৮৭ সালের অগাস্ট মাসে এই স্কুলের নাম পরিবর্তন করে ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল রাখা হয়।
স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের তহবিল থেকে আট হাজার টাকা খরচ করে ধীরে ধীরে বক্তৃতাগৃহ, রোগবিদ্যা ও ভেষজের মিউজিয়াম, শবব্যবচ্ছেদের ঘর, গ্রন্থাগার এবং বহির্বিভাগীয় অনাবাসিক চিকিৎসা বিভাগ তৈরি করে। শবব্যবচ্ছেদের জন্য মৃতদেহ প্রথমে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে সংগৃহীত হয়। ১৮৯৭ সালে আবার স্থান পরিবর্তন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজের পাশে, আপার সার্কুলার রোডে স্থানান্তরিত করা হয় এই স্কুলকে। প্রথমে সামান্য কয়েকজন শিক্ষক এবং মাত্র আটজন ছাত্র নিয়ে শুরু হয় স্কুলের পঠনপাঠন। ১৮৯৯ সালে এই ছাত্রসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬০ জন। ১৮৯৮ সালে শ্যামবাজার এবং বেলগাছিয়ার মধ্যবর্তী একটি জায়গায় দশ বিঘা জমি কিনে নেওয়া হল। এখানে সত্তর হাজার টাকা খরচ করে তিরিশ বেডের একটি একতলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয়।
১৯০৪ সাল। যৌথভাবে কাজ শুরু করার পরিকল্পনা নিলেন কর্তৃপক্ষ। ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জেন্স অফ বেঙ্গল একত্রিত হয়ে তৈরি হল- ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জেন্স অব বেঙ্গল। বর্তমানে যে প্রতিষ্ঠানের নাম রাধাগোবিন্দ কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, অর্থাৎ যাকে আমরা আর.জি. কর নামে চিনি। আজ কলকাতার কাউকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় রাধাগোবিন্দ কর হাসপাতালের, তাহলে হয়ত তিনি উত্তর দিতে পারবেন না, বরং একটু অবাকই হবেন। কিন্তু এই হাসপাতালের আড়ালে রয়েছে এমনই সব ইতিহাস। একজন তরুণের লড়াই, পরিকল্পনা সবটাই বাস্তবে রূপায়িত হল। আর.জি. করের বয়স আজ ১৩৩ ছুঁইছুঁই। একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার ইতিহাসটা জানলে, নিশ্চিত একবার দেওয়ালের গায়ে হাত রাখতে ইচ্ছা করবে আপনার। কিছু শিক্ষক আর ছাত্রের স্বপ্ন এখনও দেখতে পাওয়া যাবে দেওয়ালের প্রতিটা ইটে।