No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    বাংলার পুতুলে স্থায়ী হলেন বিলেতের রানি

    বাংলার পুতুলে স্থায়ী হলেন বিলেতের রানি

    Story image

    কলকাতার পাশেই হাওড়া। এক-নদী ফারাক মাত্র। ব্রিজ পেরোলেই পৌঁছে যাওয়া। তবু কলকাতার সঙ্গে স্বভাবগতভাবেই যথেষ্ট ফারাক হাওড়ার। এই জেলা মূলত পশ্চিমবঙ্গের শিল্প তালুক হিসেবেই পরিচিত। হাওড়ার অনেকগুলি অঞ্চলেই তৈরি হয় এক বিশেষ ধরনের পুতুল, গড়ন গঠনে খানিকটা ষষ্ঠী পুতুল জাতের কিন্তু ষষ্ঠী পুতুল নয়। দক্ষিণ পাতিল, নরেন্দ্রপুর, জগতবল্লভপুর অঞ্চলের মানুষেরা এমন পুতুলকে আদর করে বলেন রানি পুতুল। হাওড়া জেলার শিল্পীরা আজ প্রায় বহুদিন ধরে দু’খোল ছাঁচে বানিয়ে চলেছেন এমন রানি পুতুল। পুতুলটি পোড়ামাটির। অবশ্য তারপরও কোনো শিল্পী পুতুলে রঙ বোলান। কেউবা মিশিয়ে দেন অভ্র। তবে পুতুলের একটাই রং - গোলাপি। রানির পরনে দেখা যায় ঘাগরা-র মতো পোশাক। এ-বাংলার লোকশিল্পে পুতুলের যে বিরাট সীমানা, সেখানে এই পুতুলের রকমসকম ও চরিত্রের বয়ান অনেকটাই আলাদা।

    এখন প্রশ্ন হল এই পুতুলের রানিটি কে? বাংলার যত ধরনের পুরনো কথা ও কাহিনি রয়েছে সেখানে কিন্তু রাজা-রানিদের কোনো অভাব নেই। কিন্তু ঠাকুমা বা ঠাকুরদাদার রূপকথার ঝুলিতেও আমরা দেখি রাজা-রানিদের ভিড়। কিন্তু সেখানে যে সব সুয়োরানি বা দুয়োরানিদের কাহিনি মেলে তাদের চেহারার বর্ণনার সঙ্গে হাওড়ার এই পুতুল রানির কোনো মিল পাওয়া যায় না।

    শিল্পীদের জিজ্ঞেস করলেও এর সমর্থনেই উত্তর মেলে। তাঁরা বলেন, এমন পুতুলের অনুপ্রেরণা তাঁরা রূপ কথা থেকে তুলে আনেননি। পূর্বপুরুষের মুখ থেকে শোনা বা জানা রক্ত-মাংসের এক রানিই তাঁদের পুতুলের আদর্শ। পুতুল গবেষকরা বলে থাকেন, এমন রানির আদলের মধ্যে আসলে মিশে আছে বিলিতি গন্ধ। তা ছাড়া মুখের আদলও একটু গোলগাল। এমন রানির হদিশ পেতে গেলে আমাদের উঁকি দিতে হবে সুদূর ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়ার রাজমহলে।

    ভারতবর্ষের প্রতি ভিক্টোরিয়ার ভালবাসার কথা আজও জানা যায় বইয়ের পাতা ওল্টালেই। তিনি যেভাবে কোম্পানির শাসন বাতিল করেছিলেন, কিংবা যেভাবে তাঁর সমস্ত রাজকর্মচারীদের ভারতবর্ষের দিকে আদর ও দরদ দিয়ে তাকাতে বলেছিলেন তা ভারতবাসীকে মুগ্ধ করেছিল। ১৮৭৬ থেকে তিনি ভারত সম্রাজ্ঞী হন। আপামর হিন্দুস্থানের জনগণ সেদিন তার নাম দিয়েছিল ‘কাইজার-ই-হিন্দ’।

    সব মিলিয়ে নাগরিক সমাজে তখন রানিকে নিয়ে হুল্লোড়। এমনকি তার প্রভাব পড়ল অন্যান্য ছবিতেও। কালীঘাটের পটুয়া যখন ঝাঁসির রানির ছবি আঁকছেন, তখনও তাঁরা ঝাঁসির রানির মাথায় ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়ার মতো অবিকল চেহারার মুকুটটি এঁকে দিচ্ছেন। পাশাপাশি হাওড়া জেলার দক্ষিণ পাতিল বা জগতবল্লভপুরের নরেন্দ্রপুর গ্রামের শিল্পীরা যে রানি পুতুল বানালেন, তার আদলের মধ্যে শিল্পীরা নিয়ে এলেন কুইন ভিক্টোরিয়ার মুখের গোলগাল গঠনটি। সেই থেকে আজও কুইন ভিক্টোরিয়া গ্রামীণ এক শিল্পে বেঁচে রইলেন সকলের আদরের রানি পুতুল হয়ে। শিল্প ঐতিহাসিকরা দেখেছেন অভ্র মেশান লাল বা ম্যাজেন্টা রঙের রানি পুতুলের পোশাকে অথবা চুলের বিন্যাসেও রয়ে গিয়েছে বিলিতি প্রভাব। শিল্পীরা বলে থাকেন, তাঁদের পূর্বপুরুষরা রানি ভিক্টোরিয়ার আদলেই তৈরি করেছিলেন এমন পুতুল। বর্তমানে জগতবল্লভপুরের শিল্পী দিবাকর পাল পরিবার-পরম্পরায় আজও বানিয়ে চলেছেন এমন রানি পুতুল।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @