No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    বাংলার নিজস্ব খাঁটি মধু  

    বাংলার নিজস্ব খাঁটি মধু  

    Story image

    প্রাচীন কাল থেকে আমরা মধু ব্যবহার করি। ঋকবেদেও বলা আছে তার গুণাগুণ। তবে গত কয়েক সপ্তাহে সারা ভারতে মধু বেচা-কেনায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বা সিএসই জানায়, এদেশে বিক্রি হওয়া বেশ কিছু নামি ব্র্যান্ডের মধুতে চিনির সিরাপ দেওয়া হয় ভেজাল হিসেবে। ডাবর, পতঞ্জলির মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডও তার মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে বাংলার এক ছোটো ব্র্যান্ড ‘দ্য বেঙ্গল স্টোর’ মানুষের কাছে সুন্দরবনের খাঁটি মধু পৌঁছে দিয়ে ভরসা জিতে নিচ্ছে। 

    সিএসই তার মিডিয়া রিপোর্টে বলেছে, “তদন্ত করে আমরা ব্যবস্থা নেব। ১৩টি ব্র্যান্ডের মধ্যে ১০টিই বিশুদ্ধতার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ। যা ক্রেতাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। আমাদের ওয়েবসাইটে নমুনা-সহ ল্যাবরেটারির রিপোর্ট দেওয়া আছে।”

    দ্য বেঙ্গল স্টোর’-এর পক্ষ থেকে রোহিত সেন বলেন, “যে মধু আমরা ক্রেতাদের পৌঁছে দিই, তা সরাসরি সুন্দরবনের মৌলিদের থেকে সংগ্রহ করা। তাঁরা মৌচাক থেকে মধু বের করেন, পাত্রে ভরে আমাদের সরাসরি দেন। গরম করেন না, কোনো কিছু যোগও করেন না। আমরা সেগুলিকে কাচের বোতলে ঢেলে কাস্টমারের হাতে তুলে দিই। আমাদের মধু তাই সবথেকে খাঁটি।” আইআইটি খড়গপুর (এএফটি ল্যাব)  -র পরীক্ষিত এবং প্রত্যায়িত সার্টিফিকেট দেখিয়েছেন রোহিত। সেখানে প্রত্যেক উপাদানের পরিমান উল্লেখ করা আছে শতাংশের হিসেবে। এইচএমএফ রয়েছে ২৬.৪৯, যা মধুর গুণগত মান বোঝায়। অর্থাৎ এই মধু খাঁটি, গরম করা হয়নি এবং বেশিদিন মজুদ করাও হয়নি। আইআইটি-র সার্টিফিকেট থেকে জানা যায়, ‘দ্য বেঙ্গল স্টোর’-এর মধুতে জল এবং চিনি নেই। বরং অন্যান্য জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের থেকে বেশি মাত্রায় নানা উপকারী খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ।

    সিএসই-র রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর সুন্দরবনের মধু সংগ্রাহকরাও সমস্যায় পড়েছেন। অন্য দিকে রিপোর্ট ভুল প্রমাণ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে বড়ো ব্র্যান্ডগুলি। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে বহু মানুষ বেছে নেন মধুকে। কিন্তু ভেজাল মধু উপকারের থেকে অপকার করে বেশি। চিনির সিরাপ মেশানো মধু খেলে ওবিসিটি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, সংক্রমণ এবং প্রদাহের আশংকা থাকে। সিএসই-র নজরে আসে, মধুর বিক্রি আকাশছোঁয়া হলেও উত্তর ভারতের মধু চাষিদের লাভ কমছে। ন্যাশানাল বি বোর্ড জানিয়েছে, ২০১৭-১৮ সালে ভারত থেকে রপ্তানি হয়েছে ১.০৫ লক্ষ মেট্রিক টন মধু, গত ১২ বছরের তুলনায় ২০০ গুণ বেশি। ভারতের মধু এখন বিশ্বের সব থেকে ভেজাল খাবার।    

    ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যানডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা এফএসএসএআই-র ছাড়পত্র এতদিন পেয়ে এসেছে বড়ো ব্যান্ডের মধু। যদিও জার্মানির গবেষণাগারে পরীক্ষা করলে চিনির সিরাপ ধরা পড়ছে। এভাবেই চলছে জালিয়াতি। ২০০৩ এবং ২০০৬ সালে সিএসই-র তদন্তে এমনই জালিয়াতির খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল সফট ড্রিংসে। 

    মিডিয়াকে সিএসই-র সুনীতা নারায়ণ জানিয়েছেন, মধুতে এমনভাবে চিনির সিরাপ মেশানো হয়, যা সাধারণ পরীক্ষায় ধরা পড়ে না। জার্মানির গবেষণাগারে নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেসোন্যান্স পদ্ধতি ব্যবহার করে তা শনাক্ত করা গিয়েছে। সারা পৃথিবীতেই এই পদ্ধতি এখন প্রয়োগ করা হয়। যারা ভেজাল মধু বিক্রি করছে, এই তাদের চিহ্নিত করা যায়। এবছরের আগস্ট থেকে বিদেশে রপ্তানি করার আগে এই পদ্ধতিতে মধু যাচাই করা বাধ্যতামূলক করে ভারত সরকার। 

    এরই মধ্যে এফএসএসএআই জানায়, সিএসই-র রিপোর্ট তারা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে। তবে বাংলার ছোটো ব্যান্ডের ওপর মানুষের নির্ভরতা আরো বাড়িয়েছে এই রিপোর্ট। তাই চলুন, স্থানীয় সংস্থার থেকেই এবার খাঁটি মধু সংগ্রহ করি। 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @