ধ্বংসের মধ্যে দেখা স্বপ্ন — ঘরে ফেরার দৃশ্য দেখালেন প্রমিত পাল

ওরা হাঁটছে। হাঁটছে মাইলের পর মাইল। ওরা উড়ে যাচ্ছে। ঠিকানাহীন। অথবা ঠিকানার উদ্দেশ্যে। অথবা রাস্তাই একমাত্র ঠিকানা। মাইলের পর মাইল। হাতে পুঁটলি। কোলে শিশু। হাঁটতে হাঁটতেই পরিচয় হয়ে যাচ্ছে পাশের মানুষটির সঙ্গে। তারা বন্ধু হয়ে যাচ্ছে। দেশ তাদের নাম দিয়েছে পরিযায়ী শ্রমিক। পরিযায়ী। ঠিক পাখির মতোই। ওদের উড়ে যাওয়াও তাই। কেউ লড়াই করে ফিরে আসছেন বাড়ির দাওয়ায়— কেউ স্টেশনেই মারা যাচ্ছেন— তাঁর দুই শিশু 'মা মা' বলে ডাকলেও মা সাড়া দিচ্ছেন না— রাষ্ট্র মায়েদের বাঁচতে দিচ্ছে না, রাষ্ট্রের সমস্ত বিধানের কাছে পরাজিত হয়ে যান দেশের প্রতিটি ঘরের মা। মা শূন্য এই দুনিয়ার ভার তখন সেই রাষ্ট্রের উপরেই গিয়ে পড়ে। তখন সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে মায়েদের আঁচলের কাছে হেরে যায় রাষ্ট্রব্যবস্থা। জল্লাদ রাষ্ট্রব্যবস্থা।
নিজের কাজ এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বলছেন প্রমিত পাল
ঠিক এমনই এক চিত্র প্রায় এক মাস আগে সবার ঘুম কেড়েছিল। শিল্পীরা সেসব দৃশ্য, যন্ত্রণা নিজেদের মতো নতুনভাবে সৃষ্টি করেছিলেন। প্রায় এক মাস আগেই আমরা দেখেছি দিল্লি থেকে প্রায় ৫০,০০০ পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি ফিরছেন পায়ে হেঁটে। লকডাউন চলাকালীন তাঁরা প্রত্যেকেই বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কীভাবে তাঁরা বাড়ি ফিরবেন, এ কথা বড়োবাবুরা বলে দেননি। অতএব হাঁটাই ছিল তাঁদের একমাত্র পৌঁছানোর উপায়। তাঁরা হাঁটছেন ২০০ মাইল – ৪০০ মাইল – ৭০০ মাইল।
তারই মধ্যে হঠাৎ করে এই বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বয়ে গেল ভয়াবহ সাইক্লোন আমফান। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হল। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গদর্শন শুরু করেছিল ‘ঘরে ফেরা’ সিরিজ। গৃহবন্দি অবস্থায় চিত্রশিল্পীরা কীভাবে এইসব পরিস্থিতি দেখতে চাইছেন বা মোকাবিলা করছেন, তা তাঁদের বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে তুলে ধরছেন। আজ ঘরে ফেরা সিরিজে রইলেন শিল্পী প্রমিত পাল। তাঁর কাজ জুড়ে রইল চরাচর ব্যাপী সহস্র চোখ— কেউ হাঁটেন, কেউ ছোটেন, কেউ রাতের তারা গোনেন, আবার কেউ ফেটে পড়েন স্বজন হারানোর চিৎকারে।
চিত্রশিল্পী— প্রমিত পাল