বিপ্লবীদের বোমা বানানোয় সাহায্য করতেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র রায় সারা জীবনই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রেখেছিলেন। তাঁর হাত ধরে ভারতের শিল্পায়ন এবং বিজ্ঞানচর্চার যে সমৃদ্ধ ধারা গড়ে উঠেছিল, তার ক্ষতি হতে পারে বিবেচনা করে প্রফল্লচন্দ্র কোনোদিনই সরাসরি বিপ্লবী আন্দোলনে অংশ নেননি। তবে গোপনে নানাভাবে বিপ্লবীদের সাহায্য করতেন। আজ সেই মনীষীর ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী।
প্রফুল্লচন্দ্র যখন ইংল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, সেখানে এক প্রবন্ধ রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। বিষয় ছিল, “সিপাহি বিদ্রোহের আগে ও পরে”। নিজের প্রবন্ধে ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থা যেভাবে ভারতীয় জনগণকে শোষণ ও নিপীড়ন চালাচ্ছে, তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র। জানতেন, এই লেখা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চটাতে পারে, বন্ধ হয়ে যেতে পারে তাঁর বৃত্তি, তা সত্ত্বেও তিনি পিছিয়ে যাননি। তাঁর লেখা প্রকাশিত হলে ব্রিটিশ শাসকরা রুষ্ট হন, তবে ইংল্যান্ডের বুদ্ধিজীবী সমাজ তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠেন। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেই প্রবন্ধ এক পুস্তিকার আকারে প্রকাশিত হয়।
১৯০৫ সালে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা করলে বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে নতুন জোয়ার আসে। বিপ্লবীরা যাতে গোপনে অস্ত্র কিনতে পারে, তার ব্যবস্থা করে দিতেন প্রফুল্লচন্দ্র। সারা বাংলা তো বটেই, ভারতের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক সভাসমিতিতে তিনি সভাপতিত্ব করতেন, বক্তৃতার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতেন স্বদেশী আন্দোলনের বার্তা। জগদীশচন্দ্র বসু এবং প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ল্যাবরেটরিতে ভগিনী নিবেদিতা তাঁর দলের ছেলেদের পাঠাতেন বোমা তৈরি শেখার জন্য। ব্রিটিশ গোয়েন্দারা প্রফুল্লচন্দ্রের সম্পর্কে বলত, “বিজ্ঞানীর বেশে বিপ্লবী”। আর প্রফুল্লচন্দ্র নিজে বলতেন, “আমি বৈজ্ঞানিক, গবেষণাগারেই আমার কাজ, কিন্তু এমন সময় আসে যখন বৈজ্ঞানিককেও দেশের আহ্বানে সাড়া দিতে হয়”।
স্বাধীনতা আন্দোলনের অহিংস পথেও প্রফুল্লচন্দ্রের অবদান ছিল। ১৯১৬ সালে কলকাতায় প্রথমবার মহাত্মা গান্ধির জনসভা তিনিই আয়োজন করেছিলেন। ১৯২১ সালে আসহযোগ আন্দোলনের সময়ে গান্ধিজির খাদি আন্দোলনের প্রসারেও তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন।
তথ্যঋণ – ভোরের কাগজ