No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    চোখের আলোয় স্বর্গ দেখায় যাদব পটুয়া

    চোখের আলোয় স্বর্গ দেখায় যাদব পটুয়া

    Story image

    পট-চিত্রের গবেষক ও আলোচক সুধাংশুকুমার রায় আদিবাসীদের মধ্যে প্রচলিত এ জাতীয় পটের খবর প্রথম তুলে ধরেন। পরলোকের জীবন যাত্রার ধারা বিবরণীর এমন চেহারা দেখে তিনি মনে করতেন প্রাগৈতিহাসিক বাংলার সাথে মিশরীয় সভ্যতার কোথাও একটা সম্পর্ক ছিল।

    পটুয়া বাড়ির দুয়ারে সকাল সকাল এসে হাজির হলেন। বাড়ির লোকজনও তাতে একটু শান্তির আশা দেখল চোখে। আসলে গ্রাম সুবাদে যে মানুষটি চলে গেলেন এবার হিসেব মতো তাঁর স্বর্গে রাস্তা দেখাতে পারে এক মাত্র এই যাদব পটুয়াই।  তার পর শুরু হয় পটুয়ার অন্যান্য ক্রিয়া কর্ম। এই ক্রিয়া কর্মই আমাদের মনে করিয়ে দেয় কোথায় যেন মিশরের পরলোকের জীবন যাত্রা বোধের সঙ্গে এমন বিশ্বাস তো বাংলার গ্রাম জীবনেও টিকে আছে। তাই এই চক্ষুদান পটটি দেখতে দেখতে আমাদের ফিরে যেতে হবে গ্রাম বাংলার মেদিনীপুর ও তৎসংলগ্ন প্রান্ত জেলা বা ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মানচিত্রে। সেখানে এই ধরনের পট তৈরির রেওয়াজ আছে যাকে বলে ‘চক্ষুদান পট’। এই পটের শিল্পী জাদুকররা হলেন সাঁওতাল সমাজভূক্ত। সেই সমাজের যাদব পটকার-রা এই চিত্র রচনা করে থাকেন।

    যাদব পটকার-রা যে তিনটি কারণে পট আঁকেন তার একটি কারণ হল পারলৌকিক। মানুষ মারা গেলে সেই মৃতের বাড়িতে যাদব পটকার এসে উপস্থিত হয়। সে এসে  ঘোষণা দেয় দেবতা মারাংবুরু তাকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে জানিয়েছেন যে, সেই বাড়ির কেউ মারা গিয়েছে কিন্তু তাঁর স্বর্গ সুখ কপালে নেই। কারণ ওই মৃত ব্যক্তির আত্মা  ইহজগতে নানা ধরনের পাপ কাজ সম্পাদন করার জন্য পরলোকে গিয়ে চক্ষুহীন অবস্থায় কষ্ট পাচ্ছে। তাই মারাংবুরু তাঁকে বলে দিয়েছেন সে যেন ওই মৃত জনের একটি চিত্র সম্পাদন করে তাঁকে চক্ষু দান করেন। তাই কার্যত দেবতার নির্দেশ মতোই তাঁর এখানে আগমন।

    এই কথা বলে যাদব পটুয়া সেই বাড়ির লোকজনকে চক্ষুহীন মানুষের পট দেখাতে শুরু করে দেয়। আর তার পর একে একে গল্প রচনা করতে শুরু করে। স্বর্গের সুখ কাকে বলে, স্বর্গে কি ভাবে শেষের দিনের বিচার হয়, সবের কথাই গান ও গল্পের আড়ালে বর্ণনা করতে থাকে যাদব পটুয়া। ওদিকে মৃতের আত্মীয় স্বজনরা এসব কথা যতই শোনেন ততই তাঁরা অনুশোচনায় ভুগতে থাকে আর পটুয়ার পটে চক্ষু হীন অবয়ব দেখতে থাকেন। আর তাঁর পর মুহূর্তেই সেই ছবি দেখে কাঁদতেও শুরু করে দেন। সেই কথাকে বিশ্বাস করে তাঁরা পটুয়ার প্রতি অন্য রকম সম্ভ্রমও দেখাতে শুরু করেন।

    এই সব শেষ হবার পর মৃতের পরিবারের মানুষ জন যাদব পটুয়াকে  অনুরোধ করে মৃত ব্যক্তির চক্ষু এঁকে দেওয়ার জন্য। আর ঠিক তাঁর পরেই যাদব পটকার পয়সা, চাল, সবজি, গামছা ও অন্যান্য জিনিসের পরিবর্তে মৃতের আত্মার ছবিতে চোখ দান করেন। তাই এই পটের নাম চক্ষুদান পট। পট-চিত্রের গবেষক ও আলোচক সুধাংশুকুমার রায় আদিবাসীদের মধ্যে প্রচলিত এ জাতীয় পটের খবর প্রথম তুলে ধরেন। পরলোকের জীবন যাত্রার ধারা বিবরণীর এমন চেহারা দেখে তিনি মনে করতেন প্রাগৈতিহাসিক বাংলার সাথে মিশরীয় সভ্যতার কোথাও একটা সম্পর্ক ছিল।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @