No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    সৈয়দ শামসুক হক-এর কবিতা

    সৈয়দ শামসুক হক-এর কবিতা

    Story image

    সৈয়দ শামসুল হক 


    এখন মধ্যরাত

    এখন মধ্যরাত।
    তখন দুপুরে রাজপথে ছিলো মানুষের পদপাত।
    মিছিলে মিছিলে টলমল ছিলো সারাদিন রাজধানী।
    এখন কেবল জননকূল ছল বুড়িগঙ্গার পানি
    শান্ত নীরব
    নিদ্রিত সব।
    ওই একজন জানালায় রাখে তার বিনিদ্র হাত
    ছিলো একদিন তার
    উজ্জ্বল দিন, ছিলো যৌবন ছিলো বহু চাইবার।
    সারা রাত চষে ফিরেছে শহর খুঁজেছে সে ভালোবাসা।
    পেতেছে সে হাত জীবনের কাছে ছিলো তারও প্রত্যাশা পাওয়া না পাওয়ার
    প্রশ্নে হাওয়ার
    বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে এখন সারারাত হাহাকার।

    পথে ওড়ে ধুলো, ছাই ওড়ে শুধু পথে যে আগুন ছিলো
    একদা সে জ্বেলে ছিলো।
    হৃদয়ে এখন সৌধের ভাঙা টুকরো আছাড় খায়।
    আলো নিভে যায়, নিভে যায় আলো একে একে জানালায়।
    থেমে যায় গান
    তারপরও প্রাণ
    বাঁশিটির মতো বেজে চলে যেন সবই আছে সবই ছিলো।

     

    তুমিই শুধু তুমি

    তোমার দেহে লতিয়ে ওঠা ঘন সবুজ শাড়ি।
    কপালে ওই টকটকে লাল টিপ।
    আমি কি আর তোমাকে ছেড়ে
    কোথাও যেতে পারি?
    তুমি আমার পতাকা, আমার কৃষির বদ্বীপ।

    করতলের স্বপ্ন-আমন ধানের গন্ধ তুমি
    তুমি আমার চিত্রকলার তুলি।
    পদ্য লেখার ছন্দ তুমি−সকল শব্দভুমি।
    সন্তানের মুখে প্রথম বুলি।

    বুকে তোমার দুধের নদী সংখ্যা তেরো শত।
    পাহাড় থেকে সমতলে যে নামি-

    নতুন চরের মতো তোমার চিবুক জাগ্রত-
    তুমি আমার, প্রেমে তোমার আমি।

    এমন তুমি রেখেছ ঘিরে-এমন করে সব-
    যেদিকে যাই-তুমিই শুধু-তুমি!
    অন্ধকারেও নিঃশ্বাসে পাই তোমার অনুভব,
    ভোরের প্রথম আলোতেও তো তুমি!

     

    কিছু শব্দ উড়ে যায়

    কিছু শব্দ উড়ে যায়, কিছু শব্দ ডানা মুড়ে থাকে,
    তরল পারার মতো কিছু শব্দ গলে পড়ে যায়।
    এমন সে কোন শব্দ নক্ষত্রের মতো ফুটে থাকে_
    তুমি কি দেখেছো তাকে হৃদয়েশ্বরের আয়নায়?
    দ্যাখোনি যখন কালো অন্ধকার উঠে আসে_ গ্রাসে।
    যখন সৌজন্য যায় কবরে মাটি কল্পতায়,
    যখন স্তব্ধতা গিলে খেতে থাকে কামুকেরা ত্রাসে,
    তখন তাকিয়ে দেখো শুদ্ধতার গভীর ব্যাথায়_
    আমার ঠোঁটের থেকে একটি যে শব্দ একদিন
    ফুটেছিলো এই ঠোঁটে তোমারই যে দেহস্পর্শ তাপে,
    আজ সেই শব্দ দ্যাখো পৃথিবীর বুকে অন্তরীণ_
    তবু তারই উচ্চারণে বৃক্ষপাতা বারবার কাঁপে।
    পড়ে নিও তুমি তাকে, দেখে নিও আকাশে নয়তো
    সেই শব্দ ‘ভালোবাসি’ নক্ষত্রের মতোই হয়তো।।

    একেই বুঝি মানুষ বলে
    নষ্ট জলে পা ধুয়েছো এখন উপায় কি?
    আচ্ছাদিত বুকের বোঁটা চুমোয় কেটেছি।
    কথার কোলে ইচ্ছেগুলো বাৎসায়নের রতি,
    মানে এবং অন্য মানে দুটোই জেনেছি।
    নষ্ট জলে ধুইয়ে দেবে কখন আমার গা,
    তোমার দিকে হাঁটবে কখন আমার দুটো পা?
    সেই দিকে মন পড়েই আছে, দিন তো হলো শেষ;
    তোমার মধ্যে পবিত্রতার একটি মহাদেশ
    এবং এক জলের ধারা দেখতে পেয়েছি-
    একেই বুঝি মানুষ বলে, ভালোবেসেছি।
     

    পরানের গহীন ভিতর - ১

    জামার ভিতর থিকা যাদুমন্ত্রে বারায় ডাহুক,
    চুলের ভিতর থিকা আকবর বাদশার মোহর,
    মানুষ বেকুব চুপ,হাটবারে সকলে দেখুক
    কেমন মোচড় দিয়া টাকা নিয়া যায় বাজিকর ৷
    চক্ষের ভিতর থিকা সোহাগের পাখিরে উড়াও,
    বুকের ভিতর থিকা পিরীতের পূর্ণিমার চান,
    নিজেই তাজ্জব তুমি – একদিকে যাইবার চাও
    অথচ আরেক দিকে খুব জোরে দেয় কেউ টান৷
    সে তোমার পাওনার এতটুকু পরোয়া করে না,
    খেলা যে দেখায় তার দ্যাখানের ইচ্ছায় দেখায়,
    ডাহুক উড়ায়া দিয়া তারপর আবার ধরে না,
    সোনার মোহর তার পড়া থাকে পথের ধূলায় ৷
    এ বড় দারুণ বাজি, তারে কই বড় বাজিকর
    যে তার রুমাল নাড়ে পরানের গহীন ভিতর ৷

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @