No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    অন্নদাশঙ্কর রায়ের ছড়া

    অন্নদাশঙ্কর রায়ের ছড়া

    Story image

    পারিবারিক
    হাঁ গো হাঁ
    পটলের মা
    বর্গীরা পৌঁছালো বর্মা
    আসতে কি পারে
    গঙ্গার ধারে
    এদিকে যে রয়েছেন শর্মা।

    থাক হে থাক
    পটলের বাপ
    শুনেছি অমন কত বাক্
    তুমি যদি না যাও
    বেহালাটি বাজাও
    আমি যাই, পটলাও যাক।


    ভেলকি
    চন্ডীচরণ দাস ছিল
    পড়তে পড়তে হাসছিল।
    হাসতে হাসতে হাঁস হল
    হায় কী সর্বনাশ হল!
    বিশ্বমোহন বল ছিল
    ঘাসের ওপর চলছিল।
    চলতে চলতে ঘাস হল
    হায় কী সর্বনাশ হল!
    নন্দগোপাল কর ছিল
    ডুব দিয়ে মাছ ধরছিল।
    ধরতে ধরতে মাছ হল
    হায় কী সর্বনাশ হল!
    বন্দে আলি খান ছিল
    গাছের ডাল ভাঙ্গছিল।
    ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে গাছ হল
    হায় কী সর্বনাশ হল!


    কেউ জানে কি
    হা হা
    সত্যভূষণ রাহা
    যে কথাটা বললে তুমি
    সত্য বটে তাহা!
    চামচিকেরা ঝুলকালি খায়
    কেউ জানে না আহা!
    হো হো
    ইন্দুভূষণ গোহো
    এই কথাটা জানলে পরে
    ভাঙ্গবে তোমার মোহ!
    গাংচিলেরা নাসপাতি খায়
    কেউ জানে না ওহো!


    ব্যাঙের ছড়া
    ব্যাঙ বললেন ব্যাঙাচ্চি
    দাঁড়া তোদের ঠ্যাঙাচ্ছি।
    তা শুনে কয় ব্যাঙাচ্চি,
    আমরা কি স্যার, ভ্যাঙাচ্ছি?


    বাতাসিয়া লুপ
    ছটা কুড়ি
    ট্রেন ছেড়েছে শিলিগুড়ি।
    ডিং ডং
    ছাড়িয়ে গেলো কার্সিয়ং
    ঝুম ঝুম
    এবার বুঝি এলো ঘুম।
    টিং টং
    ঘুম থেকে যায় দার্জিলিং
    ইয়া ইয়া
    এই কি সেই বাতাসিয়া?
    চুপ চুপ
    সামনে বাতাসিয়া লুপ
    নমো নমো
    বিশ্বমাঝে উচ্চতম।


    ভূষন্ডী
    ভূষন্ডী কয়
    শোন রে উল্লুক
    এতদিন ছিল
    মগের মুল্লুক


    ত্রিকালদর্শী
    সামরাজ্য রামরাজ্য
    দেখলি একে একে
    বাকী থাকে কমরাজ্য
    হয়তো যাবি দেখে।


    কেন এমন ভাগ্যি
    কেন এমন ভাগ্যি হলো
    সরষের তেল মাগগি হলো
    কেউ জানে না মাখনের কী খবর!
    টুইডেলডাম রাজা, তোমায়
    ছি ছি ছি!
    এখন থেকে রাজা হবেন
    টুইডেলডী
    কেন এমন ভাগ্যি হলো
    শাক সবজি মাগগি হলো
    কেউ দেখে নি মাছের এত দর।
    সব চলে যায় রাজার পাতে
    এঁটো কুড়োয় হাড় হাভাতে
    কেউ জানে না কী আছে এর পর।
    টুইডেলডী রাজা, আরে
    রাম রাম বাম!
    এখন আবার রাজা হবেন
    টুইডেলডাম!

    ফতেপুর সিক্রী
    শেষটা আমি ঠিক করেছি
    দেশটা করে বিক্রী
    গন্ডা কয়েক গড়িয়ে দেবো
    ফতেপুর সিক্রী
    আয় রে বাঙাল, আয়রে
    আয় রে কাঙাল, আয়রে
    দেনার দায়ে জন্মভূমি
    হলো তোদের ডিক্রী
    নাকের বদলে নরুন পেলি
    ফতেপুর সিক্রী।


    গিন্নী বলেন
    যেখানে যা কিছু ঘটে অনিষ্টি
    সকলের মূলে কমিউনিষ্টি।
    মুর্শিদাবাদে হয় না বৃষ্টি
    গোড়ায় কে তার? কমিউনিষ্টি।
    পাবনায় ভেসে গিয়েছে সৃষ্টি
    তলে তলে কেটা? কমিউনিষ্টি।
    কোথা হতে এলো যত পাপিষ্ঠি
    নিয়ে এলো প্লেগ কমিউনিষ্টি।
    গেল সংস্কৃতি, গেল যে কৃষ্টি
    ছেলেরা বললো কমিউনিষ্টি।
    মেয়েরাও হতে পায় কী মিষ্টি।
    সেধে গুলি খায় কমিউনিষ্টি।
    যেদিকে পড়ে আমার দৃষ্টি
    সেদিকেই দেখি কমিউনিষ্টি।
    তাই বসে বসে করছি লিষ্টি
    এ পাড়ার কে কে কমিউনিষ্টি।


    কোন নেতার মৃত্যুকে
    ভাই
    স্বর্গে নরকে যেখানেই হোক ঠাঁই
    দেখবে সেথায় মুসলমানও আছে
    কিন্তু ওদের তাড়াবার পথ নাই।


    বাজার
    বলো কী হে, বলরাম
    কচু কেন এত দাম
    ঢ্যাঁড়স এমন কেন মাগগি!
    জানেন না গঙ্গায়
    জাহাজ আসে না, হায়!
    পাচ্ছেন, এই ঢের ভাগ্যি!


    ঢ্যাঁড়স
    ঢ্যাঁড়স বলেন রেগে
    এ কেমন কথা!
    সকলের দাম বাড়ে
    আমার অন্যথা!
    মুখ থেকে এই বাত
    যেই বেরিয়েছে
    হাটে গিয়ে দেখি, হায়
    ঢ্যাঁড়সও বেড়েছে।


    চুনোপুঁটি
    আমরা চুনোপুঁটি
    হেতের হলে ভোঁতা
    হেতের বলতে দুটি
    পাত্তা পাবো কোথা?
    কলম আর গলা
    বৃথাই কথা বলা।
    হেতের দাও শান
    কোরো না খানখান
    কে জানে সে কবে
    তোমারও দিন হবে
    তীক্ষ্ণ হোক ফলা
    ধন্য হবে বলা।


    জরুরী জারি গান
    ইস্কাবনের বিবি রে
    জরুরী তাঁর কেল্লা
    বাইরে যে তার বাহার কত
    কত রঙের জেল্লা রে, কত ব্রাশের জেল্লা!
    – আহা বেশ বেশ বেশ!
    বিশ্ববাসীরা বলে, ও যে
    দুর্গাবতীর দুর্গ
    আর কিছুদিন সবুর করো
    হবে স্বর্গপুর গো, ভূ-ভারতের স্বর্গ!
    – আহা বেশ বেশ বেশ!
    সংশয়ীরা বলে, হবে
    দ্বিতীয় ক্রেমলিন
    নির্বিচারে বন্দীরা যার
    অন্তরালে লীন হে, অন্তরে বিলীন!
    – নাকি বেশ বেশ বেশ
    ভাগ্যে হঠাৎ পড়ল ধ্বসে
    মহৎ ত্রাসের কেল্লা
    নয় পাঠানের নয়কো লোহার
    ফাঁপা তাসের কেল্লা রে ফাঁকা তাসের কেল্লা!
    – হা হা বেশ বেশ বেশ


    অযোধ্যা কান্ড
    অযোধ্যায় ফিরলেন রাম রাও
    হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম আমরাও
    এবার তোমরা যারা
    মাস শেষে গদীহারা
    ঘরে বসে হাত পা কামড়াও।


    বুদ্ধি শুদ্ধি লোপ
    বাধলে গৃহযুদ্ধ
    চক্ষু করি রুদ্ধ
    আমি যেন বুদ্ধ
    বাধলে গৃহযুদ্ধ
    কর্ণ করি রুদ্ধ
    আমি যেন শুদ্ধ


    শ্যামকুলিজম
    বলছি সখি, শোন লো কুই
    শ্যাম আর কুল রাখবো দুই।
    বিপ্লবই আমার প্রিয়
    সকলকরূপে বরণীয়
    কিন্তু আমার আলম্বন
    বিধানসভার নির্বাচন।
    নির্বাচনের ফাঁকে ফাঁকে
    শ্যামের বাঁশি আমায় ডাকে
    গদী করি বিসর্জন
    আসন করি বিবর্জন
    কী হবে ছাই বিধানসভায়
    মন্ত্রী হতে কেই বা লাফায়!
    দিক ভেঙ্গে ওই সভা মন্দ
    নয়তো আমি ডাকবো বন্ধ
    আমার দাবি নির্বাচন
    নইলে হবে বিপ্লাবন।


    শ্রেণীযুদ্ধ
    ঘোষ বোস মিত্তির
    চট্টো ও বন্দ্যো
    শ্রেণীতে শ্রেণীতে এঁরা
    বাধালেন দ্বন্দ্ব।
    শ্রেণীশত্রুরা কারা
    কী মহান সত্য
    মুখো আর গঙ্গো
    দে আর দত্ত।


    বাইরে ও ভিতরে
    বাইরে কোঁচার পত্তন
    ভিতরে ছুঁচোর কেত্তন
    রাম রাম হরে হরে!
    বাইরে ভি আই পি
    ভিতরে খোলা ছিপি
    রাম রাম হরে হরে!
    বাইরে ধলা টুপী
    ভিতরে কালা রূপী
    রাম রাম হরে হরে!
    বাইরে হিল্লী দিল্লী
    ভিতরে গ্রাম্য বিল্লী
    রাম রাম হরে হরে!


    শুনহ ভোটার ভাই
    শুনহ ভোটার ভাই
    সবার উপরে আমিই সত্য
    আমার উপরে নাই।
    আমাকেই যদি ভোট দাও আর
    আমি যদি হই রাজা
    তোমার ভাগ্যে নিত্য ভোগ্য
    মৎস মাংস খাজা।
    শুনবে আমার নাম?
    আমি টুইডেলডাম।
    শুনহ ভোটার ভাই
    সবার উপরে আমিই সত্য
    আমার উপরে নাই।
    আমাকেই যদি ভোট দাও আর
    আমি যদি হই রাজা
    সাতখুন আমি মাপ করে দেব
    তোমার হবে না সাজা।
    নামটি আমার কী?
    আমি টুইডেলডী।


    হাটে হাঁড়ি
    নাইকো এখন মারামারি
    ভাবছি হাটে ভাঙ্গবো হাঁড়ি
    নাইকো এখন ভোটাভুটি
    কে খেয়েছে কত কোটি।


    দুই ভাই
    টোকাটুকি করে যে
    গাড়ী ঘোড়া চড়ে সে
    পড়ে শুনে করে পাস
    দুঃখী সে বারো মাস।


    অবাক দুগ্ধপান
    খবরটা শুনে আমি মুগ্ধ
    গণেশজী খেয়েছেন দুগ্ধ।
    বিমোহিত হব শুনি যদি
    ইঁদুরনী খেয়েছেন দধি।


    লিমেরিক
    এক যে ছিল মানুষ
    নিত্য ওড়ায় ফানুষ
    অবশেষে এক দিন
    ব্যপার হলো সঙ্গীন –
    ফানুষ ওড়ায় মানুষ।।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @