No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ছায়া সিনেমা হল ও সেকালের দিনগুলি

    ছায়া সিনেমা হল ও সেকালের দিনগুলি

    Story image

    কলকাতা তখন সবে নগর হয়ে উঠেছে। সংসারের আর দশটা কাজের মধ্যে যোগ হয়েছে কিছু অভিনব অভ্যাস। চুল বাঁধায় যেমন এসেছে উড়ো জাহাজ, কামান, বা গোলাপ খোঁপার নিত্য বাহার, অন্যদিকে এক দুই তিন নম্বর দেওয়া চাকার ঘুর্ণিতে সুযোগ এসেছে একান্ত আলাপচারিতার দূরভাষ চর্চা। ‘আমার সাধের কোষ্ঠী পাথর মনের কথা বলরে সই’। ‘আসমানি তারা’ কাব্যের অন্তর্গত ফুল্ল নলিনীর টেলিফোনে সই নয়ন তারার সঙ্গে প্রথম কথা বলার অংশ। অপ্রকাশিত, লেখিকা ঈশ্বর প্রভারানী গুপ্তা। বঙ্গ বছরের ১৩২৫-এ। এরকম সময়ের কিছু পর থেকেই কলকাতার সংসার চর্চায় এল ছবি দেখার নতুন আলোড়ন। শুধু ছবি নয়, সঙ্গে নতুন কিসিমের থিয়েটারও। আর সেই থিয়েটারের অনেকটা অংশ জুড়ে রইলেন প্রাণের কবি রবীন্দ্রনাথ। স্টার থিয়েটার, এম্পায়ার থিয়েটার, নাট্য মন্দির, আর্ট থিয়েটার, রং মহলের পাশাপাশি দেখা গেল আরও অনেক অনেক সিনেমা হলেও কবির বিচিত্র উপস্থিতি। সেই আবেগের টান চলেছে বহুদিন আর বহুকাল। কখনো কবি কোনও সিনেমা হলের নাম দিচ্ছেন তো কখনো কবি নিজেই যোগ দিচ্ছেন সিনেমা নির্মাণের কর্মকাণ্ডে। ১৯২৯ সালের ডিসেম্বরে খবর প্রকাশ হল –

    ‘শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নূতন নাটক “তপতী”কে ব্রিটিশ ডমিনিয়ন ফিল্মস লিমিটেড চলচ্চিত্রে পরিণত করিয়াছেন। স্বয়ং বিশ্বকবি ইহাতে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছেন। এই চলচ্চিত্রে কবির পরিবারের অনেক ব্যাক্তি এবং তাঁহার ছাত্রগণ অবতীর্ণ হইয়াছেন। শান্তিনিকেতনে চিত্রটি তোলা হইয়াছে এবং ইহার সমস্ত আয়োজনই প্রায় শেষ হইয়াছে। আশা করা যায় যে, আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যেই উহার প্রদর্শন আরম্ভ হইবে। রবীন্দ্রনাথ নিজেই দৃশ্যপটের সজ্জা করিয়াছেন।

    ইহা ৮ রীলে সমাপ্ত হইবে এবং ইংরেজী নববর্ষে কলিকাতায় প্রদর্শিত হইবে। এই সর্ব্ব প্রথম রবীন্দ্রনাথ চলচ্চিত্রে অবতীর্ণ হইলেন। ঠাকুর পরিবারের কোনও মহিলা “তপতী”-র ভূমিকা গ্রহণ করিবেন। শ্রীযুক্ত ধীরেন্দ্র গাঙ্গুলি চলচ্চিত্রের প্রযোজনা করিবেন।’

    এমন খবর সেদিন কলকাতার সমাজবদ্ধ সংসারে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করল। এবার ঘরের মেয়েরাও ঘেরাটোপ ভেঙে সিনেমাগত পরান-যাপন করতে লাগলেন। কলকাতার অনেক ছোট ছোট সিনেমা হলেও কবি নিয়ে এলেন তাঁর পরিবারের নাট্য চর্চা। এরকমই একদিকে পূর্ণ থিয়েটারে দেখানো হচ্ছে শব্দমুখর চিত্র ‘মিডনাইট সান’ আবার একই সাথে সবাক চিত্রে রবীন্দ্রনাথের জাতীয় সঙ্গীত আবৃত্তি। একই ভাবে চিত্রা সিনেমা হলে একদিকে দেখানো হল বড়ুয়া প্রোডাকশনের ‘অপরাধী’ অন্য দিকে রবীন্দ্রনাথের জাতীয় সঙ্গীতের আবৃত্তি। এরকমই সময় রবি পরিবারের নাটক ও অভিনয় প্রদর্শন শুরু হল ছায়া সিনেমা হলেও। যে হলটি আজ দাঁড়িয়ে রয়েছে মানিকতলা বাজারের ঠিক উল্টো দিকে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডের ওপরে। আজ সেখানে এমন সব ছবির প্রদর্শনী হয় যে, কে বলবেন নিজের গড়পাড়ের বাড়ির কাছে লম্বা লম্বা পা ফেলে নিজেরই ছবি দেখতে এসেছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়ও! আসলে সেদিন কলকাতার মেয়েদের মনে যেমন এক নতুন উন্মাদনা অন্যদিকে কোথায় যেন একটা ‘গড সেভ দ্য কিং - গড সেভ দ্য কুইন’ থেকে ভারতবাসীর বেরিয়ে আসার নতুন প্রেরণা এই সিনেমা হলগুলি। বলতেই হয়, ভারতের অগ্নিমন্ত্রের যুদ্ধের দিনগুলোর পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে তখন থেকেই। সেরকমই একটি হল জীর্ণতার গন্ধ মাখা মানিকতলার ছায়া সিনেমা হল।

    Tags:

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @