No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ঐতিহাসিক জমিদারবাড়ির সন্ধানে চলুন বোলপুরের কাছে পার্বতীপুরে 

    ঐতিহাসিক জমিদারবাড়ির সন্ধানে চলুন বোলপুরের কাছে পার্বতীপুরে 

    Story image

    সিউড়ি-বোলপুর রোডের সেকমপুর বাস স্টপ সারাদিনই থাকে বেশ জমজমাট। সেখান থেকে মাত্র তিন কিলোমটার দূরে পার্বতীপুর নামের এক শান্ত নিরিবিলি গ্রামের দেখা মিলবে। বীরভূম জেলার ছোট্ট এই গ্রামের ইতিহাস কিন্তু তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। তার সঙ্গে বাড়তি পাওনা এখানকার সবুজ মনোরম প্রকৃতি – যার মায়াবী সৌন্দর্য মনের সব অবসন্নতা দূর করে দেয়।

    পার্বতীপুর গ্রামের দুর্গামন্দির 

    বক্রেশ্বর আর চন্দ্রভাগা – দুই নদীর সংগমস্থলে পার্বতীপুর গ্রামের অবস্থান। ইতিহাস থেকে জানা যায়, জমিদার ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় পার্বতীপুরের কাছারি বাড়ি থেকে নিজের জমিদারি পরিচালনা করতেন। ১৭ শতকের একেবারে শেষভাগে এই জমিদারির পত্তন হয়েছিল। স্থানীয় লোকেরা বলে থাকেন, মাত্র দুই পয়সার বিনিময়ে ত্রৈলোক্যনাথ শুরু করেছিলেন তাঁর জমিদারি। তিনি ছিলেন প্রজাদরদি। জমিদারির সীমানা বাড়ানোর বদলে প্রজাসাধারণের কল্যাণই ছিল তাঁর লক্ষ্য।

    গ্রামে প্রবেশ করলে প্রথমেই দেখা যাবে, পরপর দাঁড়িয়ে আছে পাঁচটি শিব মন্দির। সেগুলো এমনভাবে নির্মিত, প্রথম দর্শনে একই মন্দিরের পাঁচটি চূড়া বলে মনে হতে পারে। ডান দিকের মন্দিরটি ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় এবং বাম দিকেরটি তাঁর ছোটো ভাই চন্দ্রমোহনের স্মৃতিতে তৈরি। পুরীর মন্দিরের তিনটি শিখরের আদলে নির্মিত মাঝখানের মন্দিরগুলি। উৎসর্গ করা হয়েছে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার উদ্দেশ্যে। ত্রৈলোক্যনাথের দুই পুত্র বিষ্ণু ও গিরিশ এবং একমাত্র কন্যা কল্যাণেশ্বরীর স্মৃতিতে এগুলি বানানো হয়েছে।

    এই জমিদারবাড়ি নির্মাণ করিয়েছিলেন ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের বংশধরেরা 

    পার্বতীপুরের আরও দুটি পুরোনো মন্দির ভ্রমণার্থীদের আকর্ষণ করে। তার মধ্যে একটি হল সিংহ চিহ্নিত দুর্গামন্দির। ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের ভাগ্নের বংশেরা আজও সেখানে নিত্যপূজা করে থাকেন। কালী মন্দিরটিও সুপ্রাচীন। তবে গোপাল মন্দির পার্বতীপুরের সবথেকে পুরোনো দেবালয়। তবে এটি কে স্থাপন করেছিলেন তা জানা যায় না। গ্রামের প্রবীণরা বলেন, এই মন্দিরে কৃষ্ণের অষ্টধাতু মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ত্রৈলোক্যনাথের পিতা নীলমাধব ঋষি। পরবর্তীকালে সেই মূর্তি চুরি হয়ে যায়।

    গোপাল মন্দির

    ত্রৈলোকনাথ নিজে যে প্রাসাদ তৈরি করিয়েছিলেন, তা ধ্বংস হয়ে তলিয়ে গিয়েছে মাটির নিচে। তবে, অবশিষ্টাংশ এখনও দেখতে পাওয়া যায়। ভগ্নপ্রায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাঁর বংশধরদের নির্মিত অট্টালিকা। গাছপালায় ঢেকে গিয়েছে বিশাল কাঠামো। গ্রামের আরেক প্রান্তে কাছারি বাড়ির দেখা মিলবে। পুরোনো এই বাড়ির কিছু অংশ সংস্কার করে নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে। 

    ত্রৈলোক্যনাথের প্রাসাদ আজ ধ্বংসস্তূপ 

    গ্রামের আরেকটি দর্শনীয় স্থান ত্রৈলোক্যনাথের ছোটো ভাই চন্দ্রমোহনের প্রাসাদ। ভগ্নপ্রায় এই প্রাসাদের দোতলায় ওঠার সিঁড়ি আজও ব্যবহারের উপযোগী। ছাদে উঠলে গোটা গ্রামটি দেখা যাবে। প্রাসাদের নিচে একটি গোপন সুড়ঙ্গ আছে। সুড়ঙ্গের ভিতর দুর্ভেদ্য অন্ধকার। কী কারণে এটি নির্মিত হয়েছিল, তা আজও জানা যায় না।

    চন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের প্রাসাদ 

    ইতিহাসের কুহেলিকা যেন সমস্ত গ্রামটিকে ঢেকে রেখেছে। সেই রহস্যময়তার স্বাদ পেতে চাইলে পার্বতীপুরকে রাখতেই হবে আপনার ভ্রমণ প্ল্যানে।

    চন্দ্রমোহনের প্রাসাদে রয়েছে এই গোপন সুড়ঙ্গ 

    কীভাবে যাবেন
    সড়কপথে কলকাতা থেকে গাড়ি করে পার্বতীপুর যেতে মোটামুটি সাড়ে চার ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। বোলপুরগামী নিয়মিত রুটের বাসে করেও এই গ্রামে যেতে পারেন। ট্রেনে বোলপুর যাওয়ার পথে এই গ্রাম পড়বে। সিউড়ি-বোলপুর রোডের সেকমপুর বাস স্টপে নেমে টোটো করেও পার্বতীপুর যাওয়া যায়। এখন করোনা মহামারির কারণে রেলপথ বন্ধ থাকলেও সড়কপথে আপনি সহজেই চলে যেতে পারবেন একটি গাড়ি নিয়ে। 
    অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
    পার্বতীপুরের কাছেই রয়েছে বক্রেশ্বর উষ্ণ প্রস্রবণ, শান্তিনিকেতন, বোলপুর, সিউড়ির মতো বেশ কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্র। সুযোগ মতো চলে যেতে পারেন এই জায়গাগুলিতেও।
    কোথায় থাকবেন
    বোলপুর থেকে একদিনে পার্বতীপুর ঘুরে আসা যায়। শান্তিনিকেতনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিজস্ব দুটি ট্যুরিজম প্রপার্টি রয়েছে। তার মধ্যে রঙ্গবিতান ট্যুরিজম প্রপার্টি এই মুহূর্তে খোলা। রঙ্গবিতান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন। এছাড়া ফোন করতে পারেন ৮৬৯৭৯৮৪৯৬০ নম্বরে। আশা করা যাচ্ছে, শান্তবিতান ট্যুরিস্ট প্রপার্টি খুলে যাবে খুব শিগগিরই। এটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন। নিজের মতন করে ঘুরে আসার পরিকল্পনা করে নিন। আত্মীয়, পরিজন, বন্ধুদের নিয়ে পার্বতীপুর তো যাবেনই, সঙ্গে আশেপাশের অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রগুলিও দেখতে ভুলবেন না। 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @