No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের হাত ধরে ফিরছে পালকি

    ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের হাত ধরে ফিরছে পালকি

    Story image

    গ্রামবাংলার সেই গা-ছমছমে ডাকাতের গল্প হোক বা ১৯ শতকের কলকাতার রাজপথ, বঙ্কিমচন্দ্রের ‘দেবী চৌধুরাণী’ থেকে সত্যেন্দ্রনাথের ‘পালকির গান’ – আমাদের সংস্কৃতিতে নানাভাবে নানা অনুষঙ্গে পালকি উঠে এসেছে বারবার। এককথায়, পালকি ছাড়া বাঙালির ঐতিহ্যকে কল্পনাই করা যায় না। আধুনিকতার দাপটে একটা সময় মোটর গাড়ির সঙ্গে টক্কর দিতে না পেরে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছিল এই ধ্রুপদী বাহন। শুধু দৈনন্দিন যাতায়াতের ক্ষেত্রেই নয়, যে সব সামাজিক অনুষ্ঠানে পালকি ছিল এক সময় পরম্পরার অঙ্গ, সেখানেও অনায়াসে প্রাচীন এই যানকে অর্বাচীন করে জায়গা করে নিয়েছিল হালফ্যাশনের নানা ডিজাইনের গাড়ি। তবে সম্প্রতি অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে আবার। কিছু লোক এখন রকমারি অনুষ্ঠানে পালকিকেই বেছে নেওয়া শুরু করেছেন। যুগের পাশাপাশি পালটে যায় মানুষের রুচি। সেই রুচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি হয় নতুন ধরনের ফ্যাশন। অনেক সময় তাতে আলাদা চমক আনতে পুরোনোকে নতুনভাবে উপস্থাপিত করা হয়। পালকির ফিরে আসার পেছনে রয়েছে এমনই ফ্যাশনের চাহিদা। 

    নতুন আঙ্গিকে পালকি ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা অবশ্য কয়েকটি ছোটো শহর আর গ্রামের ইভেন্ট ম্যানেজারদের মাথা থেকেই বেরিয়েছিল। পালকির গ্রাম বলে পরিচিত দাসপুরের দাদপুর, তার পাশাপাশি গোপীগঞ্জ, সরবেড়িয়াতেও ম্যাজিক দেখাছে পালকি। অনয় মাইতি, তাপস ভুইয়াঁর মতো ইভেন্ট ম্যানেজাররা বিয়ে, অন্নপ্রাশনের মতো অনুষ্ঠানগুলোতে পালকি ব্যবহার করে রোজগার ভালোই করছেন। কপাল ফিরেছে পালকির মালিক আর বেহারাদেরও। রবি পাখিরা, নয়ন দাস, উদয় দাস, বাবলু মালিকদের রয়েছে নিজস্ব পালকি। চাহিদা অনুযায়ী পালকি ভাড়া দিয়ে তাঁরা ৬-৮ হাজার টাকা রোজগার করে নেন। একেকটা পালকি তৈরি করতে মোটামুটি খরচ হয় ৪০ হাজার টাকার মতো। এছাড়া কয়েকবছর পরপর রয়েছে মেরামতের খরচ। তবে এইসব পালকির মালিকদের আলাদা পেশা রয়েছে। কেউই সংসার চালানোর জন্য পালকির ওপর নির্ভর করেন না।

    ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাগুলি বাজারের চাহিদা অনুযায়ী ঘোড়া, উট, পালকি দিয়ে অনুষ্ঠানগুলোকে আরও আনন্দমুখর করে তোলেন। তবে সময় অনুযায়ী পালকির সাজেও ঘটেছে বদল। বাংলার পরম্পরা অনুযায়ী বিয়ের সময় ব্যবহৃত হত দোলা। সেখানে বর-বউ মুখোমুখি বসত। ছোটো দরজা দিয়ে ভালোভাবে দেখা যেত না তাদের। এখন বিয়েবাড়িতে লোকজন ময়ূরপঙ্খী পালকি চাইছে বেশি। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাগুলোও বেশি খরচ করে এই ধরনের পালকি তৈরি করাচ্ছে। ময়ূরপঙ্খী পালকিতে সামনের দিকে মুখ করে পাশাপাশি বসে বর-বউ। তিন দিক থেকে তাদের দেখা যায়। পালকির সামনেটা ময়ূরের মুখের আদলে বানানো। পালকির ব্যবহার যত বাড়ছে, তত বাড়ছে বেহারাদের কদরও। দাসপুরের বেহারারা মেদিনীপুর, আরামবাগ, বর্ধমান, তমলুক, হলদিয়ার পাশাপাশি কলকাতা এবং হাওড়াতেও ভালো রোজগার করছেন।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @