No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ইচ্ছের দৌড়- শেষ পর্ব 

    ইচ্ছের দৌড়- শেষ পর্ব 

    Story image

    “মনের জোর বাড়ল। পড়ার টেবিল আসতে আসতে বন্ধন বাক্সতে পরিণত হল। কলকাতার ৭০টি পে অ্যান্ড ইউজ টয়লেটে এই ব্যবস্থা গড়ে তুলি। এখন বহু মানুষ পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এটাই চেয়েছিলাম আমি। আমি শুধুমাত্র কলকাতার প্যাডম্যান নই, একজন দায়িত্ববান নাগরিক হিসাবে কাজ করতে চাই। এই সমাজের জন্য, সমাজের মানুষগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করতে চাই। সব দায় সরকারের নয়, দেশের মানুষেরও কিছু দায়িত্ব থাকে। আর সেগুলো আমাদের কর্তব্য।”

    (চতুর্থ পর্বের পর আজ শেষ পর্ব) 

    আগের চারটি পর্ব জুড়ে মনের অনেক কথা বলেছি। প্রথম চিন্তা ভাবনা, তার অগ্রগতি, আগামীর পরিকল্পনা সবটাই তুলে ধরেছি আপনাদের কাছে। তবে একটা কথা যেটা না বললে অনেক কিছু না বলা হয়ে যাবে, সেটা হল চায়ের দোকান কিংবা বাস-ট্রাম-মেট্রো যাতায়াতের পথে বহুবার গলা ফাটিয়ে অনেককে বলতে শুনেছি ‘ভারতের কিছু হবেনা’। তাদের কাছে একটাই প্রশ্ন, ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনারা কতটা সাহায্য করছেন? আজ আমরা ছোটো ছোটো কাজগুলো নিয়ে চিন্তা করছি, শুধুমাত্র অপরিণত মানসিকতা আর অন্ধবিশ্বাসের ধারণায় কেন অন্ধকারে পড়ে থাকব। ‘হবেনা হবেনা’ না  বলে বরং হওয়ার জন্য কিছু করি, হাতে হাত মিলিয়ে দেশের জন্য কিছু করার চেষ্টা। অথবা যারা সত্যিই কাজ করছে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। জানেন তো কেউ যখন কোনো কাজ করে তার অনুমতি গ্রহণের জন্য এক টেবিল থেকে অন্য টেবিল দৌড়ে যেতে হয়। সেই কষ্টগুলো কখনো কখনো কাজ ছেড়ে যেমন আছি তেমনই থাকি- এসবের দরকার নেই বলে চলে আসতে ইচ্ছা করে।

    আবারও পরক্ষণে মনে হয় নতুন জিনিস নতুন চিন্তা ভাবনা সহজে কেউ গ্রহণ করে না। আসতে আসতে গ্রহণ করে। লড়াই করতে হবে হবে। হবে না, হচ্ছে না, না বলে হওয়ার জন্য কিছু করতে হবে। মা বাবা প্রথম থেকেই আমার পাশে ছিল। অন্য বাড়ি হলে হয়তো তাদের তাদের স্বপ্ন পূরণের দৌড়ে আমায় শুনতে হতো “এসব করে কিচ্ছু হবেনা। ভালো করে পড়াশোনা করো। তারপর বিদেশ চলে যাও।” 

     

    ট্রান্সজেন্ডার ওয়াশরুম তৈরির সময়েও বাবা-মা বলেনি “তুমি ওদের মতো হয়ে যাবে। যেও না।” আবার স্যানিটারি প্যাড নিয়ে কাজ করার সময়ও বলেননি মেয়েদের এসব নিয়ে কিছু কোরো না। এসব তো নিষিদ্ধ ব্যাপার। জনসমক্ষে নিয়ে আসতে নেই।” বরং এটাই বলেছে, “এটা দরকার ছিল। কেউ করেনি, কিন্তু তুমি করেছ। কাউকে না কাউকে তো করতেই হত।” তাই আপনাদের কাছে একটাই আবেদন, ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন। দেখবেন আপনি, আপনার প্রিয় মানুষ, চারপাশ সব কিছু বদলে গেছে। আর আমাদের দেশের অগ্রগতি আমাদের হাতেই। আমার স্বপ্নগুলো একটু হলেও পূরণ করার চেষ্টা করছি। এই লড়াইয়ে যারা আমার পাশে থেকেছেন তাঁদের প্রতি কি আমি কৃতজ্ঞ? না, বরং ভালোবেসে বুকে টেনে নেওয়াটুকুই থাকুক। আর যাঁদের জন্য এই কাজগুলো করলাম, দেশ-বিদেশ থেকে সম্মান পেলাম, তাঁরা তো আমার পাশে রইলেনই। আগামী দিনে সমাজের জন্য আরও কাজ করতে পারব, এই আশা রাখি। 

    (সমাপ্ত)

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @