ইচ্ছের দৌড়- পর্ব ৩

(দ্বিতীয় পর্বের পর)
ত্রিধারার জ্বরে যখন আমি আক্রান্ত, সেই সময় জোড় কদমে চলছে আমাদের ‘কবি কলম’ পত্রিকার চতুর্থ প্রকাশনের কাজ। নন্দনের সামনে আমাদের পত্রিকার সবাই মাসিক আলোচনা সভার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। পত্রিকারই এক লেখিকাকে অনবরত ফোন করা হচ্ছে-
“কীরে আর কত দূর?”
ওপার থেকে করুণ ও ভয়ার্ত কণ্ঠে উত্তর এলো-
“শোভন, কিছু মনে করিস না, আজ যেতে পারলাম না। শরীরটা হঠাৎ করে খারাপ হয়ে গেল। বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।”
ছোটো থেকে মেয়েদের সঙ্গে অবাধ মেলামেশা আর বন্ধুত্ব আমায় লিঙ্গ বৈষম্যের বেড়াজালে আটকে রাখেনি। বরং বন্ধুত্বের বাঁধনে বেঁধে রাখত সব সময়। আর মেয়েদের হঠাৎ করে শরীর খারাপ হওয়া আর কিছু নয়- তা হল পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব। আমার অজান্তে মুখ থেকে বেরিয়ে গেল-
“পিরিয়ডস হয়েছে নাকি?”
একটা ছেলে হয়ে কষ্টটা বুঝতে পারায় তার মনের খুশি আন্দাজ করতে পারলাম। কিন্তু সমাজ আর চক্ষু লজ্জার ভয়ে সম্মতিসূচক উত্তর দিল, “হুম রে।”
- ন্যাপকিন নিয়ে বেরোসনি?
- ডেট পেরিয়ে গেছে। হুট করে হয়ে গেল, তাই নিয়ে বেরোইনি।
- আচ্ছা চিন্তা নেই বাড়ি যা।
শুরুতেই বলেছিলাম ত্রিধারা জ্বরের কথা। এবার এখন আমাকে নতুন জ্বরে আক্রান্ত করল। মিটিং শেষে শুরু হল বান্ধবীদের কাছে প্রশ্ন করা।
আরও পড়ুন
ইচ্ছের দৌড়- পর্ব ২
- ওই কি শুধু একা? নাকি সবাই এই অসুবিধায় পড়ে?
প্রত্যেকের একটাই উত্তর- হ্যাঁ...
সেই তখন থেকেই নতুন একটা উদ্যোগ নিয়ে শুরু হল পথ চলা। সময়ে-অসময়ে ইন্টারনেট ঘাঁটলাম বিস্তারিত জানার জন্য। পড়াশোনা করলাম। বাড়িতে তখনও কিছু বলিনি। পড়ার টেবিল থেকে বইগুলো নামিয়ে পার্ট পার্ট করে খুলে চললাম। কলকাতার বাঁশদ্রোণীর বাথরুম, যেখান থেকে ত্রিধারার কাজ শুরু; এই কাজটিও শুরু করলাম ওই বাথরুম থেকেই।
আমার সাইকেলের চাকার সঙ্গে প্রশ্ন ঘুরছে মাথায়। সমাজ আমায় মেনে নেবে তো? মেয়েদের হাতেই আমাকে মার খেতে হবে না তো? বাবা-মা অপমানিত হবে না তো? সাইকেলটা হয়তো ওখানেই থামিয়ে বাড়ি ফিরে আসতাম। কিন্তু মনের জোড়, আর যা হবে দেখা যাবে- এই চিন্তা আমায় সেদিন সাইকেল থামাতে দেয়নি। লড়াই সব সময় একারই থাকে। তারপরেই তো সবাই পায়ে পা মেলায়।
(চলবে...)