No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    বরফমানব ওটজি আর কয়েকটি আশ্চর্য মৃত্যু

    বরফমানব ওটজি আর কয়েকটি আশ্চর্য মৃত্যু

    Story image

    একাধিক নামে তিনি পরিচিত হয়ে রয়েছেন। কেউ বলেন ওটজি, আবার কেউ বলেন দ্য আইসম্যান। বাংলায় বরফমানব।

    ১৯৯১ সালে বিজ্ঞানীরা অস্ট্রিয়া-ইতালির সীমান্তবর্তী ওটজাল আল্পস নামে একটি জায়গা থেকে সম্পূর্ণ বরফ আচ্ছাদিত একটি মমি উদ্ধার করেন। অনুমান মমিটি ৫৩০০ বছরের পুরনো। বিজ্ঞানীরা ওই জায়গার নামানুসারেই মমিটির নামকরণ করেন ওটজি দ্য আইসম্যান। ওটজির মমিটিই এখন পর্যন্ত ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন মমি।

    মমিটি আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন এর মাধ্যমে বর্তমান যুগের মানুষের বহু জটিল রোগের উদ্ভবের কারণ জানা যাবে। গবেষণায় বিজ্ঞানীরা অনেক দূর এগিয়েওছেন, কিন্তু বিজ্ঞানীদের সেই গবেষণা ছাপিয়ে বরফমানব ওটজিকে ঘিরে ভয়ঙ্কর অভিশাপের গল্প জনপ্রিয় হয়ে ঊঠেছে। অনেকগুলো মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে ওটজি। কিন্তু আসল ঘটনা কী?

    ১৯৯১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জার্মানির নুরেমবার্গ থেকে আসা দুই পর্যটক হেলমুট আর এরিকা সিমন হিমালয় পর্বতমালা আল্পসে আরোহণ করছিলেন। হঠাৎ সেখানে এক আদি মানবের সন্ধান পান তারা। অবশ্য জীবন্ত নয়, একটি মমি। তাঁরা ভেবেছিলেন, দেহটি হয়তো কোনো হতভাগ্য পর্বতারোহীর হবে যে পাহাড়ে চড়তে গিয়ে মারা গেছে। পরের দিন একজন পুলিশ অফিসার ও এলাকার রক্ষণাবেক্ষণকারী ড্রিল মেশিন ও বরফ কাটার কুঠার দিয়ে মমিটি বরফের আচ্ছাদন থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। এর পরের দিন একটি পর্বতারোহীর দল সেই জায়গায় পৌঁছায় এবং ২২ সেপ্টেম্বর মমিটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। আইসম্যানের সঙ্গে বরফের নিচে মিলেছিল তার ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র। এর মধ্যে ছিল এক গুচ্ছ তীর, একটি ধনুক আর দস্তার তৈরি একটি কুড়াল। তার শরীরে ছিল ঘাসের গরম চাদর, একটি কোট, ছাগলের চামড়ার তৈরি ল্যাগিংস আর ভালুকের চামড়ার ক্যাপ।

    বরফমানবকে জানার চেষ্টা শুরু হল। হিসাব বলে, আজ থেকে পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে এই পৃথিবীতে বরফমানবের চলাফেরা ছিল। হোমো স্যাপিয়ন্স মানে বর্তমান মানবের নিকটতম আদি পুরুষের অন্যতম তারা। বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি খুঁজে বের করেছেন আইসম্যানের জীবিত বংশধরদের। একজন-দুজন নয়, ১৯ বংশধরকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞানীরা। ইনসব্রাক মেডিকেল ইউনিভার্সিটির লিগ্যাল মেডিসিন ইনস্টিটিউটের গবেষকরা দেশটির পশ্চিমে টাইরোল এলাকার রক্তদানকারীদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তার মধ্যে ১৯ জনের ডিএনএ নমুনার সঙ্গে ওটজি দ্য আইসম্যানের ডিএনএর সাদৃশ্য পাওয়া গেছে।

    বিশেষজ্ঞদের ধারণা, একই ধরনের ডিএনএ মিউটেশন নিকটবর্তী এলাকা সুইজারল্যান্ড এবং ইতালির দক্ষিণ টাইরোল এলাকাতেও মিলতে পারে। বিজ্ঞানীরা প্রায় ৩৭০০ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এছাড়াও তাদের পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। বিজ্ঞানীরা ডিএনএর সাদৃশ্য পাওয়া বংশধরদের এ বিষয়ে এখনো কিছু জানাননি। বছর বাইশ আগে বরফের নিচে খুঁজে পাওয়া ওটজির বরফাচ্ছাদিত দেহ নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন, ৫৩০০ বছর আগে ওই জায়গায় ওটজি কীভাবে এল সেটা জানারও চেষ্টা করছেন।

    আরও পড়ুন
    অদ্ভুত সব সৎকার

    ওটজির কলারবোনে ফুটো থাকায় ধারণা করা হয়েছিল সে তীরবিদ্ধ হয়ে মারা গেছিল। কিন্তু ব্রেইন স্ক্যান করার পর মনে হয় সে উঁচু জায়গা থেকে পড়ে মারা গেছে। সম্প্রতি জার্মানির ইউর্যারকের (ইউরোপিয়ান একাডেমি অব বোলজ্যানো) গবেষকরা আবিষ্কার করেন, খুব সম্ভবত তার মাথায় জোর আঘাত লেগেছিল। ২০০১ সালে অস্ট্রিয়ার ইনসব্রাক ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা ওটজির মস্তিষ্কের ক্যাট স্ক্যান করেন। স্ক্যানে দেখা যায় আইসম্যানের মাথার পেছনে কালো ক্ষত রয়েছে। এরপর বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্ত নেন, মাথায় আঘাতের কারণেই ওটজি মারা যায়। ডিএনএ নমুনা থেকে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল আনুমানিক ৪৫ বছর। তার উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। ওটজির দেহ ইতালির বোলজ্যানোতে বিশেষভাবে তৈরি এক জাদুঘরে সংরক্ষণ করা আছে। বিশেষভাবে তৈরি করা হিমঘরে রাখা ওটজির দেহকে দেখার জন্য অনেক দর্শনার্থী বেড়াতে আসেন।

    আইসম্যান বা বরফমানব ওটজি সম্পর্কে এখন প্রশ্ন হল, ওটজির মমি কি অভিশপ্ত? ওটজির দেহ আবিষ্কার, বরফের নিচ থেকে উঠিয়ে আনা ও পরবর্তীতে তার মমি নিয়ে গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই অস্বাভাবিকভাবে একই বছর মারা গেছেন। অনেকগুলো মৃত্যু যেমন রহস্য, সন্দেহ আর প্রশ্নের উদ্রেক করে তেমনই কয়েকটি মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। ৬৩ বছর বয়সে যদি কেউ মারা যায় তবে সেটিকে স্বাভাবিক ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু সেই ব্যক্তি যদি হন একজন বিজ্ঞানী যিনি ৫৩০০ বছর আগের বরফে জমে যাওয়া একটি মমি আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িত, তখন প্রশ্ন জাগে। শুধু কী তাই? একই বছর সেই মমির সঙ্গে সম্পর্কিত আরও সাতজনের যদি অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় তাহলেও কি প্রশ্ন তৈরি হবে না?

    বরফমানব ওটজিকে নিয়ে একটা বই লিখছিলেন আমেরিকান বংশোদ্ভূত মলিকুলার প্রত্নতত্ত্ববিদ টম লয়। কিন্তু এই বইটি লেখা যখন প্রায় শেষ এরকম সময়ে তার ব্রিজবেনে লেখককে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন চারদিকে ওটজির অভিশাপ নিয়ে নানা রকম কানাঘুষো শুরু হয়। অনেকেই ব্যাপারটি হেসে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু আস্তে আস্তে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হতে থাকে আরও কিছু নাম। বরফমানব ওটজির মমি নিয়ে গবেষণাকারী প্রত্নতত্ত্ববিদ হেলমুট সিমন; কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিওলজিক্যাল সায়েন্স বিভাগের পরিচালক, গবেষণা শুরুর পরই রক্তের নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে টানা ১২ বছর ভুগে মারা যান। সিমনের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের মাত্র এক ঘণ্টার মাথায় মারা যান শিকার ডিয়েটার ওয়ারন(৪৫)। তিনি অটজি দেহ উদ্ধারের কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এরপর প্রত্নতত্ত্ববিদ কনরাড স্প্লিন্ডার(৫৫), তিনিই প্রথম ওটজির দেহ পরীক্ষা করেছিলেন। বাদ যাননি ফরেনসিক টিমের প্রধান রেইনার হেন(৬৪)। এরপর পর্বতারোহী কার্ট ফ্রিটজ(৫২) যিনি হেনকে ওটজির মমির সন্ধান দিয়েছিলেন। ওটজিকে তার বরফাচ্ছাদিত সমাধি থেকে ওঠানোর ছবি তুলেছিলেন অস্ট্রিয়ান সাংবাদিক রেইনার হোয়েযল(৪৭), তিনিও মারা যান। বিজ্ঞানীরা অভিশাপের বিষয়টিকে পাত্তা না দিলেও অনেকের বিশ্বাস এই মানুষগুলোর মৃত্যুর সঙ্গে ওটজির মমির কোনো এক যোগসাজশ অবশ্যই রয়েছে। তাছাড়া ওই মৃত্যুগুলি এখনও পর্যন্ত রহস্য

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @