রবীন্দ্রনাথের ঐতিহ্যকে মার্ক্সীয় চেতনায় বদলে নিয়েছিলেন বিষ্ণু দে

বাংলা কবিতা তিরিশের দশকে চেয়েছিল রবীন্দ্রনাথের সর্বাগ্রাসী প্রভাব থেকে মুক্ত হতে। তিরিশের কাব্যধারায় প্রথম যে কবি রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন, তিনি বিষ্ণু দে। রবীন্দ্রনাথও তরুণ সেই কবির মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন নতুন পথের সম্ভাবনা। আজ সেই কবি, প্রাবন্ধিক ও শিল্পসমালোচক বিষ্ণু দে’র ১১০তম জন্মবার্ষিকী।
বাংলা সাহিত্যকে রবীন্দ্রনাথ শুধু বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন তা নয়, বিশ্বের কাছে বাঙালি সংস্কৃতির প্রতিনিধি হয়ে উঠেছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকার করা যে সম্ভব নয়, তা বিষ্ণু দে বুঝেছিলেন। বিষ্ণু দে তাই নিজের কবিতায় বারবার রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন, এমনকি রবি ঠাকুরের গান থেকে ‘নাম রেখেছি কোমল গান্ধার’-এর মতো কাব্যগ্রন্থের নামকরণ করেছেন। এর পাশাপাশি তিনি লক্ষ করেছেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী বিধ্বস্ত দুনিয়া, যেখানে পুরোনো মূল্যবোধগুলি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে, রবীন্দ্রনাথের ঔপনিষদীয় প্রজ্ঞা সেখানে বেমানান। টিএস এলিয়টের পোড়ো জমিতে প্রবেশ করছে তখনকার কাব্যধারা, কিন্তু সেই নেতিবোধে আশ্রয় পেলেন না বিষ্ণু দে। মার্কসীয় দর্শনেই তিনি বিকল্প পথ খুঁজে নিলেন, যেখানে একাত্ম হয়ে যায় সৃজন ও সংগ্রাম। বিষ্ণু দে’র কবিতায় দেখা যায় রাবীন্দ্রিক ঐতিহ্য এবং মার্কসীয় চেতনার আশ্চর্য মেলবন্ধন।
বাংলার কাব্যজগতে বিষ্ণু দে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেননি কখনও। এমনকি তাঁর সমকালীন কবিদের তুলনাতেও তিনি স্বল্পপঠিত। তা সত্ত্বেও বিষ্ণু দে’র কবিতায় রয়েছে এমন মননরস যা পাঠককে বাধ্য করে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে। সেই ভাবনা শুধু মস্তিস্কের অবসর বিলাস নয়, তাতে পরিশ্রম লাগে, মেধা লাগে, অধ্যাবসায় লাগে।