অনামী কলমগুলি যেমন

সুবর্ণরেখার উজানে/১৬টি গল্পের সঙ্কলন/ নির্মাল্য ঘরামী
প্রথম প্রকাশ ২০১৩/পাঠক, ৩৬এ কলেজ রো, কলকাতা/১২০ পৃ
ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর স্নাতক, সরকারি আমলা এবং গল্পলেখক! সহজে এমন তো মেলে না এবং যদি মেলে তাহলে পিঠ চাপড়ে বাঃ বেশ বললেই তো চলে; যেমন শিশু প্রতিভাকে বলি, যেমন দৌড়ে বিরল নজির রাখা পঙ্গু প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য হাততালি দি’। নির্মাল্য সম্পর্কে তেমন পিঠ-চাপড়ানি কথা উচ্চারণ করা বুঝি সম্ভব নয়।
অন্নদাশঙ্কর, অচিন্ত্যকুমারের পথ বেয়ে পশ্চিমবঙ্গে এক সময় একগুচ্ছ লেখকের দেখা মিলেছিল যারা সরকারি আমলা। তখন আমলা-আঁতেলে যেন ছেয়ে গিয়েছিল লেখার দেশ। অবস্থা এমন হয়েছিল যে প্রধান সাহিত্য পত্রিকা খুললে হয় সংবাদপত্রের বড় বাড়ি নয়তো প্রশাসনের বড় বাড়ির কিছু মানুষের লেখা পেতে হত।
নির্মাল্য যদি তেমন কেউ হতেন তাহলে তাঁর লেখা আলোচনা ছাড়াই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা বা উপেক্ষায় সরিয়ে রাখলে ক্ষতি হত না। আর তেমন কেউ না হলেও তাঁর লেখা নিয়ে আলোচনার দায় থাকে না যদি তাঁকে লেখক বলে গ্রাহ্য না করা হয়। একথা মানতেই হবে যে, চরণে চরণে মিলিয়ে লিখলেই যেমন কবি হওয়া যায় না তেমন গদ্য লিখলেই সে গল্পকার নয়।
আলোচনার দায় স্বীকার করছি, স্বীকার করছি নির্মাল্য লেখক তথা গল্পকার এই সম্মান পাবার যোগ্য দাবিদার। কিন্তু কেন?
তাঁর লেখা আলোচ্য গ্রন্থটিতে আছে মোট ১৬টি গল্প। মূলত মানুষের কথা, তার সুখদুঃখের কথা, সংগ্রামের কথা নিয়েই গল্প। এমনকি প্রেমও গল্পের বিষয় হয়েছে। অন্তত একটি গল্প মনে পড়ায় সুবোধ ঘোষের ‘ভারত প্রেমকথা’। অযান্ত্রিক বা শবনম-এর মতো গল্প যার কলমে ফুটেছে তিনিই লিখেছেন ‘ভারত প্রেমকথা’। সে কাজ মোটেই সহজ ছিল না, প্রভূত সাহসেরও প্রয়োজন ছিল। সাহস আছে নির্মাল্যর একথা মানতেই হবে। তবে, তাঁর চাই আরও অভিজ্ঞতা।
আরও পড়ুন
শঙ্খ ঘোষের নতুন গদ্যের বই ‘নিরহং শিল্পী’
তাঁর লেখার ঢংটা সাবেকি। তাই প্রতিটি গল্পেই অন্ত-চমক। এর কি খুব প্রয়োজন থাকে? অন্তত একালের পাঠকের জন্য? প্রয়াত লেখক শৈবাল মিত্র একবার আমাকে বলেছিলেন – বাসে পাশাপাশি বসা দুইজনা যা গল্প করে তা কি গল্প? তা হতে পারে গল্পের উপাদান, গল্প নির্মাণ করতে হয়। কথাটা লেখক ভেবে দেখতে পারেন। আর, অবশ্যই যা পারেন না তা হল কলম থামাতে। আজ অথবা কাল নয়তো পরশু নির্মাল্যর লেখা তার যোগ্য মূল্য পাবে পাঠকের দরবারে এই আশা রাখি।
মহামিলনের মা/ ১৫টি গল্পের সঙ্কলন/ পার্থ সেনগুপ্ত
প্রথম প্রকাশ ২০১২/ উত্তরণ, আগরতলা, ত্রিপুরা/ পৃ ৮০
পেশায় সাংবাদিক পার্থবাবু লিখছেন অনেকদিন। তঁর প্রথম কবিতা সঙ্কলন প্রকাশিত হয় কলকাতা থেকে ১৯৮২ সালে। এটি তাঁর প্রথম গল্প সঙ্কলন(যদি না যৌথভাবে প্রকাশিত অন্য গল্পগ্রন্থটি হিসাবে রাখি)। ১৫টি গল্প আছে, সবই নানা সময়ে নানা পত্রিকায় প্রকাশিত। সরল সাধারণ মানুষের সাধারণ কথা, সঙ্কট, বেদনা, নিত্যদিনের সাধারণ অভিজ্ঞতার কথা নিয়ে নীচুস্বরে বলা গল্প; এরই সাথে যুক্ত লেখকের গভীর মানবতাবোধ এবং সেখানেই গল্পগুলি হয়ে ওঠে পাঠ্য। পাঠককেও লেখক উদ্বুদ্ধ করতে পারেন এক দায়িত্ববান প্রতিবেশীর মতো।