কুঞ্জে ‘অলি’ গুঞ্জে তবু...

সাল ১৯৪৭। ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার বছর। বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ভেঙে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য (ভারত) ও পূর্ব বাংলা/পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশ (পাকিস্তান) গঠিত হল। ভারত বিভাজনের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী, ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস ও অন্যান্য প্রশাসনিক কাজকর্ম এবং রেলপথ ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় সম্পদ দুই রাষ্ট্রের মধ্যে বিভক্ত করে দেওয়া হল। ভারত বিভাজনের আগে পাঞ্জাব অঞ্চলে যে ধর্মীয় দাঙ্গা বেঁধেছিল, তাতে উভয় ধর্মের ২০০,০০০ থেকে ৫০০,০০০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। ইউএনএইচসিআর-এর হিসেব অনুসারে, ১ কোটি ৪০ লক্ষ হিন্দু, শিখ ও মুসলমান ভারত বিভাজনের ফলে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। যার ফলে ঘটেছিল মানব ইতিহাসের বৃহত্তম দেশত্যাগের ঘটনা।
ঠিক সেই বছর ভারতের সর্ববৃহৎ এবং একমাত্র সাংস্কৃতিক শহর তিলোত্তমা কলকাতার বুকে নির্মিত হল অলিম্পিয়া বার এন্ড রেস্টুরেন্টের। স্বাধীনতার স্বাদ তখন মনে-প্রাণে। মানুষ নতুন করে হাসতে শিখছে। ভালোবাসতে শিখছে। তার ঠিক ৩৪ বছর পর অর্থাৎ ১৯৮১ সালে এই বারের নাম পাল্টে হয় আজকের জনপ্রিয় অলি পাব। তৃষ্ণার্ত যুবক-যুবতীর অন্যতম ডেস্টিনেশন। অলি পাব আসলে ঋতুদের বৈচিত্র্য। এই যেমন ভরা গ্রীষ্মে গলা ভেজানো, শীতের জুবুথুবু চেয়ার কিংবা শেষ বসন্তের ছোঁয়ায় অলি পাব সারাবছর জমজমাট। শীতকালের পার্ক স্ট্রিটের সমস্ত রং তখন অলির গায়ে-গতরে। কী অপূর্ব শোভা তার। একবার অন্তত ঢুঁ না মারলে ধরা যাবে না যে!
নেশাতুর চৈত্রের বিকেল আর অঢেল চানাচুর মিক্সের গুণে প্রত্যেকটি দিন অলি পাব হয়ে ওঠে তিলোত্তমার অন্যতম শ্রেষ্ঠ রোম্যান্টিক জায়গা। ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর পার্ক স্ট্রিটের অলি পাবে ঘটে যায় বড়োসড়ো এক অঘটন। আগুনে পুড়ে যায় তিন হাজার স্কোয়্যার ফুটের এই রেস্তোরাঁর বেশ কিছু সোফা সেট এবং চেয়ার-টেবিল৷ অলি পাব এখনও ধারণ করে চলেছে পুরোনো কলকাতার গন্ধ, পার্ক স্ট্রিট ঘরানা। শোনা যায়, মহানায়ক উত্তমকুমারেরও পছন্দের রেস্তোরাঁ ছিল এই অলি পাব৷ এখনও শহরের বহু ‘সেলিব্রিটি’র সান্ধ্যকালীন আড্ডা বসে এখানেই৷ পুরোনো কলকাতার মানুষজন এখনও মনে করেন, পুরোনো পার্ক স্ট্রিট কালচার যদি এখনও কোথাও থাকে, তবে তা অলি পাবেই আছে৷ কারণ এত সভ্য-ভদ্র পানশালা পৃথিবীর কোথাও নেই।
তৃষ্ণার্ত যুবক-যুবতীর অন্যতম ডেস্টিনেশন। অলি পাব আসলে ঋতুদের বৈচিত্র্য। এই যেমন ভরা গ্রীষ্মে গলা ভেজানো, শীতের জুবুথুবু চেয়ার কিংবা শেষ বসন্তের ছোঁয়ায় অলি পাব সারাবছর জমজমাট।
অলি পাব মানেই প্লেট ভর্তি স্টেক আর চিকেন আলা কিভ, মিক্সড গ্রিল প্ল্যাটার, চিকেন লিভার, প্রন মশালা, রোস্ট চিকেন আরও কত কী! অলি পাবে অ্যালকোহলের দামও বেশ সাধ্যের মধ্যে। অনেকেরই ভয়ে ভয়ে নেশার গ্লাসে প্রথম চুমুক এখানেই। সেই নেশার টানে ফিরে এসেছেন আবার। পাশাপাশি নির্ভেজাল আড্ডা তো রয়েইছে। কবিতায় আছে, “এ কলকাতার মধ্যে আছে আরেকটি কলকাতা”। এই আরেকটি কলকাতার মধ্যে একেবারে উঁচুর সারিতে পড়বে অলি পাব। ডিসেম্বরের রাতের শহর তার সমস্ত সৌন্দর্য নিয়ে জেগে ওঠে। পার্ক স্ট্রিটের অলি-গলি ঠিক তেমনই। তরুণ থেকে বৃদ্ধ প্রত্যেকের সান্ধ্য-আড্ডার আবাসস্থল। অলির সমস্ত কর্মীদের ব্যবহার ভীষণ বন্ধুত্বপূর্ণ। তাঁদের আপ্যায়ন আপনাকে প্রাণিত করবে নিশ্চিত। ২১, পার্ক স্ট্রিট ঠিকানায় অপ্রস্তুত টুকরো হাসির জন্য কেউ একজন অপেক্ষা করে বসে আছে। মঞ্জরি ফুটতে আর কতক্ষণই বা!