জলপাইগুড়ির প্রাচীন জল্পেশ মন্দিরের মেলা

শিবরাত্রির দিন থেকে রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন মেলা জল্পেশ মন্দিরে শুরু হয়েছে। এই মেলা ও এই মন্দির এখন উত্তরবঙ্গে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। কলকাতা ছাড়া অসম, ভুটান থেকেও অনেক ব্যবসায়ী মেলায় এসেছেন তাঁদের পসরা নিয়ে। মেলায় বসেছে লোকসঙ্গীতের আসরও।

এই ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যমণ্ডিত মন্দিরটি জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়িতে অবস্থিত। এর পাশেই রয়েছে জর্দা নদী। কারও কারও মতে, দশম শতকে মন্দিরটি গড়ে ওঠে। তবে ইতিহাসবিদরা বলেন, সপ্তদশ শতাব্দীতে যখন এই মন্দির নতুন ভাবে সংস্কার করা হয় সেই সময় থেকেই মন্দির চত্বরে মেলা শুরু হয় শিব চতুর্দশীতে। কোচবিহারের রাজা প্রাণনারায়ণ ১৬৩২ থেকে ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দ এবং তার পুত্র মোদনারায়ণ ১৬৬৫ থেকে ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দির সংস্কার করেন। পুরাণ অনুযায়ী, এই মন্দির হাজার বছরের পুরনো। অনেকেই বলেন, দিল্লির মুসলমান স্থপতিরা এই মন্দির তৈরি করেন বলে মন্দিরের চূড়া এখনও গম্বুজাকৃতি। মন্দিরটি ১২৪ ফুট দীর্ঘ এবং ১২০ ফুট প্রশস্ত। এর উচ্চতা ১২৭ ফুট। মন্দিরে রীতি মেনে শিব চতুর্দশীতে মেলা শুরু হলেও এখন মেলার একটি ভাগ শুরু হয় জেলা পরিষদের মন্দির ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক গিরীন্দ্রনাথ দে জানালেন, মেলা চলবে দশ দিন ধরে। দুই বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেলা বসেছে। মন্দির দর্শনের সঙ্গে সঙ্গে ভক্তরা মেলায় ঘুরছেন।
আরও পড়ুন
যেখানে দাঁড়িয়ে আজকের পুতুলনাচ
মন্দিরে নারায়ণ, কালী, কুবেরেশ্বর এবং ভ্রামরী দেবীর মূর্তিও আছে। মন্দির কমিটি তাদের বাজেট থেকে মন্দির কিছু সংস্কার করেছে। তার বাইরে পর্যটন দপ্তর তাদের ফান্ড থেকে মন্দির লাগোয়া আনুষঙ্গিক বিভিন্ন সাজানোর কাজ করে দিয়েছে। মন্দির কমিটি ভক্তদের কাছ থেকে দশ টাকা থেকে একশো টাকা পর্যন্ত টিকিট বাবদ একটা সহযোগিতা নিয়ে চলেছে। তা দিয়ে মন্দিরের বিভিন্ন সংস্কার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। সম্পাদকের কথায়, বিগত ভূমিকম্পে মন্দিরের কিছু ক্ষতি হয়েছে। তারা তাই মন্দির উন্নয়নে আরো কাজ করতে চান। তবে মন্দিরে নারায়ণ আর কালী মন্দির প্রাচীন নয়। এই দেবদেবীর বিগ্রহ হালে তৈরি হয়েছে। মেলার সময় সেখানে লক্ষ-লক্ষ দর্শনার্থীর ভিড় হয়। তার বাইরে শ্রাবণ মাসেও লক্ষ লক্ষ ভক্ত সেখানে ভিড় করেন। অনেকেই মানত করে তিস্তা থেকে হেঁটে হেঁটে কাঁধে বাঁক নিয়ে মন্দির পৌঁছনো।