No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ঘরে ফিরবে নোবেল?

    ঘরে ফিরবে নোবেল?

    Story image

    রাজ্য পুলিশ-সিআইডি-সিবিআই। এখন আবার সিবিআই-এর হাত থেকে রাজ্য পুলিশের হাতে মামলা ফেরা নিয়ে বিস্তর দড়ি টানাটানি। এরই মধ্যে ১৪ বছর অতিক্রান্ত। তবুও অধরা গুরুদেবের নোবেল।

    রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার খুঁজে পাওয়া নিয়ে সিবিআই-এর সামনে কোনও আশার আলো নেই। দু-দু বার আদালতের কাছে ক্লোজার রিপোর্ট পেশ করেছে সিবিআই। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে সিবিআই-এর কাছে কোনও ‘লিড’ নেই এই মামলার তদন্তে। ফলে তারা এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে কোনও কাজই করছে না, জানিয়েছেন সিবিআই-এর এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক।

    অবশ্য আশায় আছেন রাজ্য পুলিশের কয়েকজন শীর্ষকর্তা। বিশেষ সূত্রে খবর, রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কারের সঙ্গে যে ৪৩টি সামগ্রী চুরি হয়েছিল উত্তরায়ন থেকে, তার মধ্যে অন্তত দু-টি খোওয়া যাওয়া জিনিস গত এক বছর ধরে রাজ্য পুলিশের কাছে আছে। বলা ভাল উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছেন তাঁরা। সৌজন্যে রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষকর্তা। যদিও সরকারিভাবে বিষয়টিকে গোপন রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

    তবে কি পাওয়া সম্ভব হারানো নোবেল পুরস্কার? এক শীর্ষ আইপিএসের কথায়, ‘নোবেল পুরস্কারের সঙ্গে আরও কয়েকটি জিনিস চুরি হয়েছিল। চুরির সঙ্গে যুক্ত ছিল একটি নির্দিষ্ট দল। যেহেতু কয়েকটি চুরি যাওয়া সামগ্রীর সন্ধান পেয়েছি আমরা, তার সূত্র ধরে নোবেল পুরস্কারটি খুঁজে পাওয়া অসম্ভব নয়।’

    এখনও পর্যন্ত রাজ্য পুলিশের কাছে নোবেল পুরস্কারটি কার জিম্মায় রয়েছে সে-বিষয়ে কোনও খবর নেই। তবে কারা ঘটনাটির সঙ্গে যুক্ত সে-বিষয়ে তারা অবহিত। কিন্তু চোরেদের মধ্যে মূল মাথা বলে যাকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন গোয়েন্দারা, গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়েছে ন’বছর আগে। দলে তার শাকরেদদের খোঁজে মরিয়া গোয়েন্দারা।

    এমনই এক শাকরেদকে পাঁচ মাস আগে বোলপুর থেকে তুলে আনেন গোয়েন্দারা। তারপর কলকাতা পুলিশের একটি ডাকাতি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে, নিজেদের হেফাজতে নেন। তার জিজ্ঞাসাবাদে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য না পাওয়ায়, তার নারকো-অ্যানালিসিস টেস্ট করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তার নারকো পরীক্ষায় কোনও সূত্র পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশের ডাকাতি মামলায় জামিন পেয়েছে সন্দেহভাজন ব্যক্তি।

    গোয়েন্দা সূত্রে খবর, গত বছর এপ্রিল মাস নাগাদ রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা নোবেল চুরির সম্পর্কে কিছু লিড পান। সেই তথ্য নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত করে একটি বিষয়ে সুনিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা যে উত্তরায়ন থেকে নোবেল পুরস্কার ও অন্যান্য ৪৩টি সামগ্রী চুরির পিছনে মাথা ছিল কয়েকজন বিদেশি। কিন্তু চুরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল স্থানীয় কয়েকজন চোরকে। চুরির পর, ওই জিনিসপত্র নিয়ে মুর্শিদাবাদ সীমান্ত দিয়ে তা পাচার হয়ে যায় বাংলাদেশে। এবং এর পিছনে ছিল একজন জার্মান ভদ্রলোক। বাংলাদেশে চোরাই নোবেল মেডেল বিক্রির চেষ্টার প্রমাণ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। কিন্তু সেই চুরি যাওয়া নোবেল কার কাছে বর্তমানে তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন গোয়েন্দারা। তবে খোওয়া যাওয়া সামগ্রীর মধ্যে যে দুটি উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছেন গোয়েন্দারা, তার সূত্র ধরে গুরুদেবের নোবেল পুরস্কার উদ্ধার সম্ভব বলেই বিশ্বাস রাজ্য পুলিশের কর্তাদের।

    ইতিমধ্যে সিবিআই দু-দুবার মামলার তদন্ত বন্ধ করেছে। তাদের তদন্ত চলাকালীনও বহু অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকে তথ্য পেয়েছিলেন সিবিআই-এর অফিসারেরা। ঘোষিত পুরস্কারের লোভে দাগি চোরেদের নাম বলে দিয়ে বাজিমাত করতে চেয়েছেন বহু লোক। এমনকি পরিচিত শত্রুকে ফাঁসানোর জন্য সিবিআই-এর কাছে ফোন করে অনেকে নোবেল-চোর সম্পর্কে গোপন খবরও দিয়েছেন। আর এইসব খবরের ওপর ভিত্তি করে, তদন্তে ঝাঁপিয়ে শেষমেশ নিরাশ হতে হয়েছে সিবিআই-এর গোয়েন্দাদের। একসময় বিষয়টি এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে, ঘোষিত টেলিফোন নম্বরটি প্রত্যাহার করে নেয় সিবিআই।

    আসলে ভুয়ো খবরের পিছনে ছুটতে গিয়ে বহু ক্ষেত্রে সিবিআই-এর তদন্তের অভিমুখ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। দলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এক সিবিআই অফিসারের কথায়, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমন সুন্দর গল্প সাজিয়ে আমাদের খবর দেওয়া হত যে আমরা সেগুলির তথ্যতল্লাশ করতাম। শেষ পর্যন্ত দেখা যেত, ব্যক্তিগত রাগ মেটাতে অনেকেই সেই খবর দিত সিবিআই-কে।’

    এমনই এক খবরের তথ্য-তল্লাশ শেষে ক্ষোভের বদলে হাসিতে ফেটে পড়েছিলেন কয়েকজন অফিসার। ফোনে পাওয়া খবরের ওপর ভিত্তি করে বর্ধমান থেকে এক স্কুলশিক্ষককে তুলে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন সিবিআই-এর অফিসারেরা। ওই শিক্ষক মাঝেমধ্যেই শান্তিনিকেতন আসতেন। অনেকক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর, কোনও সূত্র না পেয়ে হতাশ অফিসারেরা খবরদাতার নাম নিয়ে ফেলেন সন্দেহভাজন শিক্ষকের সামনে। সেই নাম শুনে সন্দেহভাজনের ভিরমি খাওয়ার জোগাড়। পরে তিনি স্বীকার করে নেন যে, ফোনে যে-ব্যক্তি তাঁর সম্পর্কে খবর দিয়েছেন, সেই ভদ্রলোকের স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর গোপন সম্পর্ক সম্প্রতি জানাজানি হয়ে যায়!

    “গাড়ি-বাড়ি যা চাইবি কিনে দেব। শুধু বলে দে, কে চুরি করেছিস!’ এই কথা শুনে ভিরমি খাওয়ার জোগাড় ৪৯ বছরের নীতা দেবীর। কী বলছে বাবুরা!

    উল্টোদিকে বসে দু-জন। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে তার দিকে। উত্তরের প্রত্যাশায়। মাথা নিচু করে বসে নীতা দেবী। উত্তর তার জানা নেই। তবুও হাল ছাড়তে নারাজ উল্টোদিকে বসা দুই দুঁদে আইপিএস অফিসার।

    সেই ডিসেম্বর মাসের ১৯ তারিখ, লায়েকবাজারের শ্বশুরবাড়ি থেকে তাকে তুলে এনেছিল পুলিশবাবুরা। তারপর থেকে একটাই প্রশ্ন – কে চুরিটা করেছিল, প্রথমে বুঝতে না পারলেও, পরে নীতা দেবী বুঝেছেন যে, পুলিশবাবুরা চুরি হয়ে যাওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কারটা খুঁজছেন।

    চারদিন টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর যখন কিছু পাওয়া গেল না, তখন নীতা দেবীকে নিয়ে বিহার পাড়ি দেয় গোয়েন্দারা। নীতা দেবীর স্বামী তপনের খোঁজে। রঘুনাথপুর থেকে তপনকে নিয়ে সোজা হাজির বোলপুরের এসডিপি অফিসে। আবার একপ্রস্থ জেরা তপনকে। গোয়েন্দাদের বিশ্বাস ছিল যে, রবীন্দ্রনাথের নোবেল চুরি করা ব্যক্তিদের সম্পর্কে ধারণা আছে দাস দম্পতির। কয়েকদিন জিজ্ঞাসাবাদের পরই, গোয়েন্দারা বুঝতে পারেন যে, দাস দম্পতির কাছে নোবেল চুরি নিয়ে বিশেষ কোনও খোঁজ নেই। ফলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

    রাজ্য পুলিশ সূত্রে খবর, দাস দম্পতির মতো প্রায় ৩০ জনের সঙ্গে কথা বলেও আসল নোবেল চোরের হদিশ করতে পারেননি গোয়েন্দারা।

    তাহলে হঠাৎ কী এমন হল যে, চুরির ১২ বছর পর, রাজ্য পুলিশ এত তৎপর নোবেল উদ্ধার করতে!

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @