No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    নিউ এম্পায়ার থিয়েটার হল

    নিউ এম্পায়ার থিয়েটার হল

    Story image

    সেটা কলকাতার তিরিশের দশক। উত্তরের চিৎপুর পাড়ায় মূলত যারা থিয়েটারের নক্ষত্র তারা সকলেই প্রায় অস্তমিত। অমরেন্দ্রনাথ দত্ত বা গিরিশ ঘোষের থিয়েটার ধারণা আস্তে আস্তে বিলুপ্তির পথে যেতে শুরু করেছে। মাইকেলের লেখা থেকে থিয়েটার তৈরির প্রবণতাও তখন নিবু নিবু। এই রকম একটা সময়ে কলকাতার সাহেব পাড়ায় নবহুল্লোড়ের আয়োজন। পিয়ানোতে গান তোলা ব্যালে নাচের সঙ্গে পরিচিত হওয়া কিংবা ইউরোপীয় প্লে বা নাটকের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি কলকাতার মানুষকে তখন নতুন দিশা দেখাচ্ছে। এই রকম একটা সময়ে মানে সন ১৯৩২-এ নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হঠাৎই কলকাতায় প্রপার্টি কিনতে শুরু করলেন। তার মধ্যে একটি হল নিউ এম্পায়ার থিয়েটার হলটি। দেখা গেল সেখানে নিয়মিত বিলিতি ব্যালে নাচের আসর বসে। মানুষের পরিচয় ঘটতে থাকে বিভিন্ন ধ্রুপদী ব্যালে নাটকের সঙ্গে। বিলিতি ব্যালের ধরনধারণ ইত্যাদি দেখে কলকাতার মানুষজন মোহিত হয়ে যায়। শুধুমাত্র নাচের ভঙ্গিতে বা শব্দের ঝঙ্কারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে নাটক তৈরি করা যায় তা এই নিউ এম্পায়ারে এসে দেখতে লাগল কলকাতার মননশীল ও সৃজনশীল ব্যক্তিরা।

    ওদিকে শান্তিনিকেতনে তখন মহড়া চলছে। নাটকের নবধারা নিয়ে আসছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। একের পর এক নাটক লেখেন আর তাকে মঞ্চস্থ করার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। এবারের মহড়া চলছে যে নাটকটিকে নিয়ে তার নাম ‘নটীর পূজা’। মাঝেমধ্যে কলকাতা জোড়াসাঁকো বাড়িতেও রিহার্সাল চলে ‘নটীর পূজা’র। এই নাটকটিকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের মনের মধ্যে রয়েছে অনেক আশা নিরাশার দোলাচল। দেখতে দেখতে ১৯৩২-এ আনন্দবাজারে বিজ্ঞাপন পড়ল রবিবাবুর নটীর পূজা অভিনীত হতে চলেছে নিউ এম্পায়ারে। সেদিন জনগণের ভিড় উপচে পড়ল ধর্মতলা চত্বরে। দেখা গেল ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যের আঙ্গিকের সঙ্গে লোক আঙ্গিক মিশিয়ে রবীন্দ্রনাথ তৈরি করেছেন এক নতুন শৈলী। সেই থেকে সময়ে সময়ে নিউ এম্পায়ারে বাঙালির সৃজনশীল কর্মের উপস্থাপনা চলতে থাকে। তারই সূত্র ধরে কখনও কলকাতার মানুষ সেখানে দেখেছে উদয়শঙ্কর বা অমলাশঙ্করের বিখ্যাত জুটি নৃত্য কখনও বা প্রত্যক্ষ করেছে শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্রের বহুরূপীর নাট্য প্রযোজনা। সেই ধারা কিছুকাল আগে পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ইউদিমেনুইন বা জুবিন মেটার মত দিকপাল শব্দসঙ্গীতকারেরা এখানে বাজনা ও অর্কেস্ট্রার ঝঙ্কার তুলে গিয়েছেন। পাশাপাশি ওয়ার্নার ব্রাদার্সের ছবিগুলিও দেখানোর জন্য বাছাই করা হল এই প্রেক্ষাগৃহটিকে।

    আজকে প্রেক্ষাগৃহটি চলমান কিন্তু স্থাপত্যের সেই বৈভব আজ কার্যত ম্রিয়মাণ। তা ছাড়া নাম মাহাত্ম্যর জৌলুসও আজ আর তেমনভাবে নেই। তবুও কলকাতার বুকেই এতগুলো সোনার জলে লেখা ইতিহাসের দিনলিপি সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘নিউ এম্পায়ার’ প্রেক্ষাগৃহটি। আজকে অগুন্তি মানুষের জানার সময় হয়তো নেই বাংলার তথা কলকাতার নিজস্ব সংস্কৃতি যে ভাবে সেদিন পাশ্চাত্যের বাতাসে ভেলা ভাসিয়েছিল সেই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণটি সাক্ষী হয়েই আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রেক্ষাগৃহটি। আজ প্রেক্ষাগৃহটির সাথে জুড়ে রয়েছে কর্পোরেট তকমার কতগুলি খাবার দোকান মানুষ সেখানে যায় বর্তমানের রসনা তৃপ্তির নয়া ধাঁচের সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে দিতে। কিন্তু সাংস্কৃতিক অদল বদলের যে সৃজনশীল ঘটনাগুলি এই বাড়িটির সঙ্গে জড়িয়ে রইল তা ভেবে দেখার মুহূর্তটুকুও কারও হাতে নেই।

    Tags:

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @