No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    বাংলার প্রথম স্বাধীন নবাবের গল্প

    বাংলার প্রথম স্বাধীন নবাবের গল্প

    Story image

    বাংলা মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল সম্রাট আকবরের সময়কালে। আকবর তাঁর বিশাল সাম্রাজ্যকে ১২টা সুবাহ বা প্রদেশে ভাগ করেছিলেন, তার মধ্যে বাংলা ছিল একটি। কখনও রাজমহল, কখনও ঢাকা থেকে বাংলা প্রদেশকে শাসন করতেন মুঘলদের পাঠানো আঞ্চলিক শাসকেরা। এই সব প্রাদেশিক শাসকদের বলা হল সুবাহদার। মুর্শিদকুলি খান মুঘল সম্রাটদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাংলায় চালু করেন স্বাধীন নবাবি শাসনব্যবস্থা। খাতায় তিনি মুঘল সম্রাটের অধীনে একজন কর্মচারী ছিলেন ঠিকই, তবে বাস্তবে তিনি স্বাধীনভাবে নিজের প্রশাসন চালাতেন। ওই সময় মুঘলদের কেন্দ্রীয় প্রশাসন এতটাই অকর্মণ্য হয়ে পড়েছিল যে তাদের পক্ষে বাংলায় নবাবের ওপর কোনো জোরজবরদস্তি করা সম্ভব ছিল না।

    মুর্শিদকুলি খানের জন্ম হয়েছিল দাক্ষিণাত্যের বুরহানপুর অঞ্চলের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে। যতদূর অবধি জানা যায়, ছোটোবেলাই তাঁকে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল সাফি ইস্পাহানি নামের একজন বণিকের কাছে। সাফি ইস্পাহানি তাঁর নাম রাখেন মহম্মদ হাদি এবং তাঁকে পারস্যে নিয়ে গিয়ে নিজের ছেলের মতো লালন-পালন করতে থাকেন। হাদি ভারতে ফিরে এসে বেরার অঞ্চলে মুঘল প্রশাসনের অধীনে দেওয়ানি বা রাজস্ব বিভাগে চাকরি নেন। তাঁর কাজে খুশি হয়ে ১৬৯৮ সালে তাঁকে হায়দ্রাবাদের দেওয়ান করে পাঠান স্বয়ং মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব। এই সময় থেকেই তিনি ঔরঙ্গজেবের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠতে থাকেন, যার প্রভাব মহম্মদ হাদির জীবনে খুবই ইতিবাচক হয়েছিল। ১৭০০ সালে ঔরঙ্গজেব তাঁকে করতলব খান উপাধি দিয়ে বাংলার দেওয়ান পদে নিযুক্ত করেন। মহম্মদ হাদি চলে আসেন ঢাকায়।

    তখন বাংলার সুবাহদার ছিলেন সম্রাটের নাতি আজিমউদ্দিন। বেহিসেবি সুবাহদার এবং তাঁর মোসায়েবরা ইচ্ছেমতো রাজস্বের টাকা নষ্ট করতেন। ওদিকে রাজকোষের তখন বেহাল দশা। আর করতলব খান চাইতেন বাংলার রাজস্ব বাড়িয়ে সেটা সম্রাটের কাছে পাঠাতে। ফলে দেওয়ান আর সুবাহদারের বিবাদ শুরু হয়। আজিমউদ্দিন শুরু করেন দেওয়ানকে মারার ষড়যন্ত্র। দেওয়ান করতলব খান সেকথা ঔরঙ্গজেবকে জানালে সম্রাট দেওয়ানকে ভাগীরথীর তীরে মখসুদাবাদে নিজের দপ্তর সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন আর আজিমউদ্দিনকে পাঠিয়ে দেন পাটনায়। তখন শিবাজির সঙ্গে যুদ্ধ করে ঔরঙ্গজেবের রাজকোশ প্রায় নিঃশেষ। মহম্মদ হাদি সম্রাটের এই দুর্দিনে বাংলার প্রশাসনিক আয় বাড়িয়ে ১ কোটি টাকা রাজস্ব তুলে দেন ঔরঙ্গজেবের হাতে। ঔরঙ্গজেব এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে করতলব খানকে নতুন উপাধি তো দেনই, তার সঙ্গে অনুমতিও দেন মখসুদাবাদ শহরের নাম পাল্টে নিজের নামে রাখতে। দেওয়ানের নতুন উপাধি মুর্শিদকুলি খান থেকে মকসুদাবাদের নাম হয় মুর্শিদাবাদ। এরপর ওড়িশার সুবাহদার আর বিহারের দেওয়ানের পদেও যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় তিনি।

    ১৭০৭ সালে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুর্শিদকুলি খানকে দাক্ষিণাত্যে পাঠানো হলেও আবার তাঁকে ১৭১০ সালে ফিরিয়ে আনা হয় বাংলায়, অতিরিক্ত সুবাহদারের পদে। চার বছর পর তাঁকে বাংলার সুবাহদার নিযুক্ত করেন মুঘল সম্রাট। এই ১৭১৭ সালে তিনি দিল্লির দরবারে অভিজাতদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সুযোগে বাংলার দেওয়ান আর সুবাহদার দুটো পদকে একত্রিত করে নিজেকে বাংলার নবাব বলে ঘোষণা করেন। ঢাকা থেকে বাংলার রাজধানী সরিয়ে আনেন মুর্শিদাবাদে। তৈরি করেন বাংলার এক নিজস্ব শক্তিশালী প্রশাসন। তবে নবাব ছিলেন অপুত্রক। ১৭২৭ সালে মৃত্যুর আগে দৌহিত্র অর্থাৎ মেয়ের ছেলে সরফরাজ খানকে নিজের উত্তরাধিকারী মনোনীত করেছিলেন। কিন্তু নানা কারণে পরবর্তী নবাব হন সুজাউদ্দিন খান। নবাব মুর্শিদকুলি খানের কবর রয়েছে কাটরা মসজিদের সিঁড়ির নিচে। 

    তথ্যসূত্র – আধুনিক ভারতবর্ষের ইতিহাস (১৭০৭-১৯৬৪), সিদ্ধার্থ গুহ রায় ও সুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়; ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ; অনুশীলন। 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @