No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    নলিনী বাগচি : মুর্শিদাবাদের প্রথম শহিদ

    নলিনী বাগচি : মুর্শিদাবাদের প্রথম শহিদ

    Story image

    ২৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (KIFF 2022) গত ১৭ ডিসেম্বর ‘শর্ট অ্যান্ড ডক্যুমেন্টারি প্যানোরামা’ বিভাগে শিশিরমঞ্চে প্রদর্শিত হল পরিচালক সুমিত ঘোষ (Sumit Ghosh) নির্মিত ১৪ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র ‘Nalini Bagchi: The First Martyr of Murshidabad’ (নলিনী বাগচি: মুর্শিদাবাদের প্রথম শহিদ)। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে এ যাবৎ যেসব চলচ্চিত্র বা তথ্যচিত্র হয়েছে সেগুলিতে মূলত অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বহুল আলোচিত বা পঠিত ব্যক্তিত্বদেরকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম আলোচিত কত শত দেশপ্রেমিকরা প্রায় আড়ালেই রয়ে গেলেন, নলিনী বাগচি (Nalini Bagchi) তাঁদেরই একজন। মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) জেলার প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী শহিদ হিসাবে ইতিহাসে তাঁর নামোল্লেখ রয়েছে।

    স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে এ যাবৎ যেসব চলচ্চিত্র বা তথ্যচিত্র হয়েছে সেগুলিতে মূলত অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বহুল আলোচিত বা পঠিত ব্যক্তিত্বদেরকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম আলোচিত কত শত দেশপ্রেমিকরা প্রায় আড়ালেই রয়ে গেলেন, নলিনী বাগচি তাঁদেরই একজন।

    এই তথ্যচিত্র থেকে নলিনী বাগচি সম্পর্কে খুঁটিনাটি অনেক অজানা তথ্য উঠে আসে। নলিনী বাগচির পুরো নাম নলিনীকান্ত বাগচি। মুর্শিদাবাদের কাঞ্চনতলা গ্রামে ১৮৯৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ভুবনমোহন বাগচি। আদি নিবাস ছিল নদিয়া জেলার শিকারপুরে। স্থানীয় স্কুলে পাঠ শেষ করার পর নলিনী ভর্তি হন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে। দরিদ্র পরিবারে জন্মালেও মেধাবী ছাত্র হওয়ার কারণে গাঁয়ের জমিদারের অর্থসাহায্যে তাঁর উচ্চশিক্ষা চলতে থাকে। এই বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ ছিল মাস্টারদা সূর্য সেন-সহ অগ্নিযুগের বহু বিপ্লবীদের আখড়া। কলেজে পড়াকালীন নলিনী অনুশীলন সমিতিতে নাম লেখান। পুলিশের হয়রানি এড়াতে বহরমপুর থেকে পাটনার বাকিপুর এবং পরে ভাগলপুর কলেজে পড়াশুনো করেন। আইএ পাশ করার তিনি আত্মগোপন করেন এবং দানাপুরের সৈন্যদের মধ্যে বিদ্রোহ সৃষ্টি করেন।

    মৃত্যুর আগে পুলিশি অত্যাচারেও নিজেদের পরিচয় ফাঁস করেননি। বরং পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের উত্তরে সদর্পে জানান, “Stop dog! Don’t disturb me. Let me die in peace.”

    এরপর দলের নির্দেশে গৌহাটির আটগাঁও-এর গোপন ডেরায় আশ্রয় নেন। ১৯১৮ সালের ১২ জানুয়ারি পুলিশের সঙ্গে এক সশস্ত্র যুদ্ধের পর সতীশচন্দ্র পাকড়াশির সঙ্গে পালিয়ে ছদ্মবেশে অসুস্থ অবস্থায় কলকাতায় আসেন। একজন বিপ্লবী বন্ধুর শুশ্রূষায় সুস্থ হয়ে ঢাকার কলকাতা বাজারের গোপন ডেরায় আশ্রয় নেন। ১৯১৮ সালের ১৫ জুন পুলিশ তাঁদের ঘিরে ফেললে গুলি বিনিময় হয়। সঙ্গী তারিণীপ্রসন্ন মজুমদার ঘটনাস্থলেই মারা যান। নলিনী মারাত্মক আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হন। ১৬ জুন ঢাকা জেলেই তিনি বীরের মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুর আগে পুলিশি অত্যাচারেও নিজেদের পরিচয় ফাঁস করেননি। বরং পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের উত্তরে সদর্পে জানান, “Stop dog! Don’t disturb me. Let me die in peace.”

    সুমিত ঘোষের তথ্যচিত্রটি ইতিহাস নির্ভর এবং গবেষণামূলক। নেপথ্য-কণ্ঠের সঙ্গে সঙ্গে বিষয়ানুগ ভৌগোলিক অবস্থানকেও দেখানো হয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিত্বের মুখে নলিনী বাগচি প্রসঙ্গে নিজস্ব বক্তব্যকেও তুলে ধরা হয়েছে, যেটি নেপথ্য-কণ্ঠের একঘেয়েমি কাটিয়ে বিষয়টিকে মনোগ্রাহী করে তুলেছে। চিত্রগ্রহণ এবং চিত্র-সম্পাদনা প্রশংসনীয়। সব মিলিয়ে সুমিত ঘেষের এই তথ্যচিত্রটি একটি ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থাকল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২১ ডিসেম্বর নন্দন-৩-এ ‘Nalini Bagchi: The First Martyr of Murshidabad’ তথ্যচিত্রটি পুনরায় প্রদর্শিত হল।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @