No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ‘আমিই আমার নিজের অনুপ্রেরণা’- ফ্রিদা

    ‘আমিই আমার নিজের অনুপ্রেরণা’- ফ্রিদা

    Story image

    ফ্রিদা কাহলো নিজেই একটি আত্ম-প্রতিকৃতির নাম। আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে ঘরের একটা কোণে শান্ত প্রকৃতির মেয়েটি অনায়াসে নিজেকে এঁকে ফেলতে পারতেন। ক্যানভাসই যেন তার আয়না। নিজের রূপ, বয়স যা যা তিনি হতে চেয়েছিলেন বা যা যা হতে পারতেন সবটার কোলাজ যেন ক্যানভাসে ধরা থাকত। মেক্সিকোর ছোট্ট শহর কোইয়াকানে জন্ম ফ্রিদার। বাড়ির নাম ‘লা আসা কাজুল’, যার বাংলা অর্থ নীল বাড়ি। বাড়িই যেন আস্ত একটা পেপার, তাতে নীল রঙের ছোঁয়ায় ক্রমশ নিজেকে নতুন ভাবে দেখতে চাইলেন ফ্রিদা। এই আত্ম-প্রতিকৃতির মাধ্যমে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন নারীর আপাত সৌন্দর্য অর্থাৎ আদর্শ ফেমিনিন বিউটি নিয়ে। নারীর সৌন্দর্য আসলে কী, এই ছিল তাঁর জীবনভর অনুসন্ধানের বিষয়। ট্র্যাজিডিতে ভরা জীবন। শৈশবে এক সড়ক দুর্ঘটনার পর থেকে আজীবন বিভিন্ন স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন। এই অসুস্থতার কারণে আত্মীয়-পরিবার-বন্ধুমহল থেকে প্রায় দূরেই থাকতে পছন্দ করতেন। আর এসবের বেশ বড়োসড়ো প্রভাব পড়েছে তাঁর কাজে।

    স্বল্পায়ু জীবনে ফ্রিদা এঁকে ফেলেছেন ৬০টি আত্ম-প্রতিকৃতি। তবে তাঁর কোনও প্রতিকৃতিই নিজস্ব সৌন্দর্য প্রকাশের হাতিয়ার নয়। বরং প্রতিটি ছবিই হয়ে উঠেছিল নিজস্ব ফিজিক্যাল এবং সাইকোলজিক্যাল জীবনের ডাকবাক্স। এহেন ফ্রিদার জন্মদিনেই কলকাতায় গতবারের মতো তাঁকে শ্রদ্ধা জানালেন ১৭ জন চিত্রশিল্পী। ফ্রিদা, শিল্পীদের চোখে ধরা দিয়ে অন্য মাত্রায় উঠে আসবেন এই প্রদর্শনীতে। ভিতেশ নাইকের ছবিতে দেখা যাবে অল্পবয়সী ফ্রিদাকে। আমব্রেলা কাট পোশাক পরে রয়েছেন সুন্দরী ফ্রিদা। মাথায় অসংখ্য প্রজাপতি। সুবীর দে’র ছবিতে আবার আটপৌরে গ্রাম্য ফ্রিদার হাতে একটি ছাগল ছানা, মাথায় গুচ্ছ সাদা ফুল। ভাস্কর চিত্রকরের ছবিতে ফুটে উঠেছে এক মহীয়সী নারী, যাঁর একহাতে প্রজাপতি, আরেক হাতে গোলাপ। আবার গোপাল চন্দ্র নস্করের ছবিতে শোভা পেয়েছেন বন্য ফ্রিদা। চারপাশে ফুটে আছে অসংখ্য পদ্ম। সুন্দর আর সত্যের সহজ ব্যাখ্যা মিলবে এইসব ছবিতে। এই প্রদর্শনীতে গেলে দেখা যাবে নারীবাদী চিন্তা চেতনার সম্পূর্ণ স্রোতের বাইরের কথা বলতে চেয়েছেন শিল্পীরা। শিল্পীদের অধিকাংশই বাঙালি। ফ্রিদাকে নিয়ে বাঙালির এই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অতুলনীয়।

    ফ্রিদার আত্ম-প্রতিকৃতির মধ্যে ধরা পড়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক নানারকম ইস্যু। এই প্রদর্শনীতে দেখা যাবে ফ্রিদার আত্ম-প্রতিকৃতির অনুষঙ্গ হয়ে উঠছিল নানাধরনের ধর্মীয় সিম্বল, তাঁর নিজস্ব এথনিক আইডেন্টিটির নানা চিহ্ন, যার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন তোলা হচ্ছে শিল্পী হিসাবে বা প্রেমিকা কিংবা স্ত্রী হিসাবে নিজের ব্যক্তিত্বকে। তিনি তাঁর বোল্ডনেস কিংবা সূক্ষ্ম গোঁফের রেখায় নিজেকে চিরাচরিত সমাজের বিপরীতে দাঁড় করিয়েছিলেন। ফ্রিদার ১১২তম জন্মদিনে বাংলার শহর কলকাতার এহেন প্রয়াস সত্যিই আকর্ষণীয়।

    মহানির্বাণ রোডে আর্ট এক্সপোজার এবং রেঞ্জের আয়োজনে প্রদর্শিত ফ্রিদা কাহলোর আত্ম-প্রতিকৃতিকে নতুনভাবে দেখার প্রয়াস শুরু হয়েছে ৬ জুলাই থেকে, চলবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত। বেলা ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। প্রদর্শনীর নাম দেওয়া হয়েছে ‘My own muse’ অর্থাৎ আমার নিজের অনুপ্রেরণা। ফ্রিদা কাহলো বারবার বলতেন, ‘আমিই আমার নিজের অনুপ্রেরণা’। সেখান থেকেই এই প্রদর্শনীর এহেন নাম। প্রদর্শনী চলছে কলকাতার আর্ট এক্সপোজার গ্যালারিতে। চিত্রশিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন অদিতি সারোগি, অতীশ মুখার্জি, অভিজিৎ মুখার্জী, ভাস্কর চিত্রকর, গোপালচন্দ্র নস্কর, পাপড়ি ঘোষ, রাধিকা আগরওয়াল, রামকুমার মান্না, শ্রীলা মুখার্জি, সুবীর দে, তাপস দাস, ভিতেশ নাইক প্রমুখ।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @