No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    অপু্র ‘চপের’ সংসার

    অপু্র ‘চপের’ সংসার

    Story image

    ভর দুপুরে চপ পাওয়া খানিক দিবাস্বপ্নই বটে। বাঙালি বলে কথা। বিকেল গড়াবে, হালকা খিদে খিদে পাবে, তারপর না মন একটু ‘মুড়ি মুড়ি চপ চপ’… আড্ডা। ঠোঙায় শুধু মুড়ি চিবোতে চিবোতে বেরিয়ে পড়লুম।

    কিন্তু চপের হদিশ আকস্মিকভাবে দিয়ে দিলেন এক পথচারী বাবুমশাই।

    কিন্তু চপের হদিশ আকস্মিকভাবে দিয়ে দিলেন এক পথচারী বাবুমশাই।

    ‘এ কী, আজ বিভূতিভূষণের জন্মদিন, আর আপনি অপুর সংসারের চপ না খেয়ে, এমনি এমনি মুড়ি চিবোচ্ছেন!’

    অপুর সংসারের চপ! 

    সব জেনেটেনে বেরিয়ে পড়লুম।

    বিকেলের খিদে-পেটেয় চপের অঞ্জলি যে কী! ওই ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে বেসন ফেটিয়ে, সেই বসন্ত রূপ। তাতে কিনা হালকা করে পাতলা ফালি করা বেগুন, আলুর মাখা ডুব দিচ্ছে। তারপর ভরা ফুটন্ত তেলে অবগাহন স্নান! তার গায়ের চারপাশ দিয়ে খিদের বুদবুদ…. এইসব ভাবতে ভাবতে নেমে পড়লাম নাকতলায়। গীতাঞ্জলি মেট্রো স্টেশন।

    নেমে গড়িয়ার দিকে খানিক এগোতে না এগোতেই দেখবেন একটি মুদির দোকান। লেখা– অপুর সংসার।

    ঘাবড়াবেন না। সেখানে চপ তৈরির সমস্ত উপকরণ পাওয়া গেলেও, আপনাকে সেই নিয়ে চিন্তা করার কোনও প্রয়োজন নেই। আপনি ঠিক জায়গাতেই পৌঁছেছেন।

    শুধু নাক বাড়িয়ে দিন। গন্ধ আপনাকে বাকিটা পথ পৌঁছে দেবে।

    ছোট্ট দোকান। দোকানের মধ্য থেকেই ঘরে ঢোকার পথও চলে গেছে। সেখানে একটা বেতের মোড়ায় বসে মন ভালো করা হাসি নিয়ে জয়দুর্গা সাহা চপ ভেজে চলেছেন। সামনে কাচ দিয়ে ঢাকা তাক। ভিতরে বিস্কুট গুঁড়োয় সুসজ্জিত মাংসের চপ, ভেজিটেবল চপ, মোচার চপ, মাছের চপ, ফুলকপির চপ ময়ান বানিয়ে রাখা। আপনাকে গরম গরম সে নিজেকে সমর্পিত করবে বলে, তেলের দিকে ব্যাকুল নয়নে যেন চেয়ে আছে। সঙ্গে বেগুনি, ডালবড়া, আলুর চপ তো রইলই।

    দোকানে এক সময়ে টানা ক্যালিগ্রাফিতে লেখা ছিল– আদি অপুর সংসার। আদি কেন? কে অপু? জয়দুর্গাদেবীর পুত্র প্রবীর সাহা এসে নামের রহস্য ফাঁস করলেন। কী?

    তাঁর বড়দির মেয়ের ডাকনাম অপু। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, তাঁদের বিভূতিভূষণ প্রীতি। পাশে মুদি দোকান, যা প্রথমে চোখে পড়েছিল, সেটাই আদি দোকান। সংসারের যাবতীয় জরুরি জিনিস পাওয়ার আতিশয্যে এই নামের ছিমছাম আড়ম্বর, কিংবা বলা ভালো শোভা।পরবর্তীকালে দোকান সরে এলে, সেই ফাঁকা জায়গা কি পড়ে থাকবে? জয়দুর্গা দেবী এবং তাঁর স্বামী গৌরহরিবাবু সিদ্ধান্ত নিলেন চপের দোকান হবে। নাম থাকবে একই। কিন্তু এ–ও আজকালের কথা নয়।

    প্রায় দশ বারো বছর পেরিয়ে গেল, সেই গল্পের।চপে যে কী আছে, যা বারবার টেনে আনে খাদ্যরসিককে, তার মশলার সমীকরণ জয়দুর্গাদেবী হেসে মিলিয়ে দিতে দিতে বললেন– বয়স হচ্ছে। এখন আর রোজ দোকান খোলা সম্ভব হয় না। কী আর মশলা। ভালো লাগে, সবাই যখন ভালো বলে। সঙ্গে এই নাম। আলাদা কৌতূহল। ভালোবেসে করি, এই আর কী। সময়ও কেটে যায়। কতরকম মানুষের সঙ্গে চপ খাওয়ানোর ছুতোয় কতরকম কথা হয়। গল্প হয়। হাসি বিনিময় হয়। আর কীই বা আছে…

    এবং আবার সেই বেসনের ময়ান লাগানো মিহি হাসি। দোকান সামলাতে সামলাতে, এখন প্রবীরবাবুর নামই অপু হয়ে গেছে। পাড়ায় এবং আশেপাশে তিনি এই নামেই এখন পরিচিত। 

    বিদেশি ফাস্ট ফুডের যুগে, এমন আদর ঘেরা নামের দোকান দক্ষিণ কলকাতার এক গলির মুখে আড়ম্বরহীন দিব্য হাসিমুখে আছে। সে হাসিতে, এক ঠোঙা মুড়ি আর চপে কোনও অ্যাসিডিটির ভয় নেই।

    কত কী বলার ছিল যে –

    গিয়ে শুধু দোকানের সামনে দাঁড়ানোর অপেক্ষা। জয়দুর্গাদেবী নিজেই বললেন– কী খাবে?

    সিনেমাকে ভেবে, অপুর ছেলে কাজলের মতো কোনওরকম মড়া শালিখের প্রয়োজন নেই। শুধু পছন্দের চপে চোখ গেলেই জয়দুর্গাদেবী আপনার নজরের গতিপথ বুঝে, তেলের কড়ায় সেই চপ নামিয়ে দেবেন।

    আর তারপর ‘জয়দুর্গা’ বলে গরম গরম মুচমুচে হাওয়াই চটি সাইজের বেগুনি চালিয়ে দিন পেটের মণিকোঠায়। কেউ আপনাকে বলবে না– খাবার পরে ওটা একটা করে, কথা দিয়েছ। 

    সঙ্গে প্রেমিকা থাকলে, খাওয়ার শেষে অপর্ণার মতো ঠোঙা ফাটিয়ে ভয় দেখানোর প্র‌্যাকটিস তো রইলই ফ্রি–তে!

    তবে আর দেরি কেন!

     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @