জিভে-জল আনা নিরামিষ-পাতুরির গপ্পো

পাতুরি বলতে বাঙালি অজ্ঞান। পাতুরি ভালোবাসে না, এমন বেরসিক বাঙালি খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। পাতায়-মুড়ে রান্না বলে নাম পাতুরি। কলাপাতার ওই পোড়া-পোড়া গন্ধই বাঙালির রসনাকে বাড়িয়ে তোলে কয়েকগুণ। তা, এই পাতুরি বলতেই প্রথমে কী কী মনে আসে আপনাদের? ভেটকি-পাতুরি আর ইলিশ-পাতুরি? এসব তো গেল আমিষ-পদের কথা। আর, নিরামিষ-পাতুরি? হ্যাঁ, পাতুরি নিরামিষও হয়, আর তারও একইরকম জিভে-জল আনা স্বাদ। এমনিতেই, বাঙালির হেঁসেল এক আশ্চর্য জায়গা। সেখানে আমিষ-নিরামিষ দুইজাতের পদেরই বাহার। কারও আমিষ ছাড়া মুখে কিছুই রোচে না, কেউ কেউ নিরামিষ খান ভালোবেসে। তবে, ঘোর আমিষাশীরাও কিন্তু এই নিরামিষ-পাতুরি খেয়ে রীতিমতো প্রেমে পড়ে যাবেন। এই দেখুন, নিরামিষ-নিরামিষ করে এতক্ষণ বকবক করলেও পদের নামটাই এখনও বলিনি। আজ আমার রান্নাঘর থেকে রইল সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর পনিরের পাতুরির রেসিপি।
পনির শব্দটা ফার্সি। কেউ বলেন পনিরের জন্ম মধ্যপ্রাচ্যে, কেউ বা বলেন প্রাচীন ভারতে আর্যরাও পনিরের ব্যবহার জানত। ঋগ্বেদে, চড়ক-সনহিতায় নাকি পনির-জাতীয় দুগ্ধজাত পদার্থের উল্লেখ আছে। এসব অবশ্য পণ্ডিতদের ব্যাপার। আম-বাঙালির পনিরের ঠিকুজি-কুষ্ঠি জেনে এত লাভ নেই। তবে, এটা সত্যি পনিরের পদের বাহারে মিশেছে মধ্যপ্রাচ্য ও এ’দেশীয় নানা স্বাদের মিশেল। তবে, পাতুরির অধিকার আপাতত শুধুই বঙ্গদেশের প্রাপ্য। এখন দেখে নেওয়া যাক এই পাতুরির বানাতে কী কী লাগবে আর বানাবেনই বা কীভাবে।
উপকরণ :
পনির- ৩০০গ্রাম
সরষে- ২ চামচ
পোস্ত- ৪ চামচ
নারকেল কোড়া- ৩ চামচ
টক দই- ২ চামচ
২-৩টে কাঁচালঙ্কা (ঝাল বুঝে)
নুন, চিনি স্বাদমতো
সরষের তেল- ২ চামচ
সামান্য জল
আরও পড়ুন
বনলতা সেনের প্রিয় খাদ্য
প্রণালী:
প্রথমে পনির নিয়ে আয়তাকার কয়েক-টুকরোতে কেটে নিন। তারপর, একটি পাত্রে খানিক জলে সামান্য নুন দিয়ে গরম করে, সেই জলে পনিরের টুকরোগুলোকে মিনিট ৩ রেখে তুলে নিন। পনিরের মধ্যে যাতে নুনটা ঢোকে, তাই এটি করা। পরের ধাপে এগোনোর জন্য পোস্ত, সর্ষে, নারকেল-কোড়া, কাঁচালঙ্কা, নুন, চিনি ও সামান্য জল সহযোগে মিক্সি বা বাটনায় বেটে,একটি পাত্রে তুলে রাখুন। (অল্প-পরিমান জিনিস থাকলে চেষ্টা করবেন বাটনাতেই বাটার। তাতে, রান্নায় একটা আলাদা স্বাদ যোগ হয়)। এরপর, কলাপাতাগুলোকে প্রমাণ-মাপে কেটে নিয়ে অল্প আঁচে তাওয়ায় সামান্য সেঁকে নিতে হবে। এই হল পনির-পাতুরি তৈরির প্রথম ধাপ।
এবার, পনিরের টুকরোগুলোকে বেটে রাখা উপকরণের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিন। বাটা-উপকরণ ভালো করে মাখিয়ে ও এক চামচ সরষের তেলসহ এক এক করে পনিরের টুকরোগুলোকে ভালো করে কলাপাতায় মুড়ে সুতো দিয়ে বেঁধে দিন। এরপর, তাওয়ায় সামান্য তেল দিয়ে কলাপাতায় মোড়া পনিরের টুকরোগুলোকে সেঁকতে থাকুন, যতক্ষণ না কলাপাতার পোড়া একটা সুগন্ধ নাকে আসে। সেঁকার সময় বারবার উলটে উলটে দেবেন, যাতে কলাপাতার দুই প্রান্তই সমান আঁচ পায়। কলাপাতার রঙ বাদামি হয়ে এলেই বুঝবেন পনিরের পাতুরি তৈরি। পরিবেশনের আগে, চাইলে একটা করে কাঁচালঙ্কাও গুঁজে দিতে পারেন পাতুরির ভিতর। এরপর অপেক্ষা, সরু চালের গরম গরম ভাতের সঙ্গে সুস্বাদু পনিরের পাতুরির জাদুতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার।