আমাদের বাংলাতেই ছিল প্রাচীন রাজা হরিশচন্দ্রের প্রাসাদ

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে সাভার উপজেলার রাজাসন এলাকার মজিদপুরে রয়েছে এক প্রত্নতাত্ত্বিক ঢিবি। ১৯ শতকের শেষ ভাগ পর্যন্ত এই ঢিবি মাটির নিচে চাপা পড়েছিল। উঁচুমতো এই জায়গাটাকে স্থানীয় লোকজন বলত ‘রাজবাড়ি ঢিবি’। ১৯১৮ সাল নাগাদ বিখ্যাত প্রত্নবিদ ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী রাজাসন গ্রামে এক খননকার্য চালিয়েছিলেন। মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছিল এমন কিছু জিনিসপত্র, যেগুলো প্রাচীন বৌদ্ধধর্মের নিদর্শন। যেমন ছিল কিছু বুদ্ধমূর্তি। গুপ্ত যুগের কিছু মুদ্রাও ছিল। ছিল একটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া বৌদ্ধবিহার। তখন গবেষকরা অনুমাণ করেন, খ্রিস্টীয় সপ্তম-অষ্টম শতকে এই অঞ্চল ছিল বৌদ্ধ ধর্মের একটা কেন্দ্র। ১৯৯০-৯১ সালে আবার এখানে খননকার্য হয়, পাওয়া যায় দেওয়ালযুক্ত এক বর্গাকার স্তূপ, ‘হরিকেল’ রৌপ্যমুদ্রা, ব্রোঞ্জের বুদ্ধমূর্তি এবং আরও অনেক কিছু। এইসব নিদর্শন এখন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
এখানে সব মিলিয়ে তিনটে বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছিল, যার একটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে রাজা হরিশচন্দ্রের প্রাসাদ হিসেবে। গবেষকরা বলে থাকেন, প্রাচীন বংশাবতী বা এখনকার বংশী নদীর বাঁ তীরে অবস্থিত ছিল প্রাচীন সর্বেশ্বর রাজ্য। এই রাজ্যের রাজধানী ছিল সম্ভার। পরবর্তীকালে এই ‘সম্ভার’ থেকেই জায়গাটির নাম হয়েছে ‘সাভার’। খ্রিস্টীয় সপ্তম-অষ্টম শতকে এখানে রাজত্ব করতেন রাজা হরিশচন্দ্র। বৌদ্ধ অধ্যুষিত এই জায়গাতে তখন মহাযান বৌদ্ধধর্মের প্রচলন ছিল। প্রখ্যাত ব্রিটিশ ভূবিদ, নৌ-প্রকৌশলী এবং ইতিহাসবিদ মেজর জেমস রেনেল এই সাভার এলাকায় জরিপ করে ১৭৬৭ সালে এক মানচিত্র তৈরি করেন। সাভারের বিপুল ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা তিনি জানিয়েছিলেন।
কিন্তু এই রাজা হরিশচন্দ্র কে ছিলেন? ইতিহাসবেত্তা পণ্ডিতেরা মনে করেন, তিনি ছিলেন পাল বংশের শাসক। সপ্তম-অষ্টম শতাব্দী নাগাদ সম্ভার নগর থেকে তিনি সর্বেশ্বর রাজ্য শাসন করতেন। তখন সর্বেশ্বর রাজ্যের অর্থনীতি খুব সমৃদ্ধ ছিল। আর সম্ভার নগর থেকে দেশ-বিদেশে চলত ব্যবসা-বাণিজ্য। যেহেতু পাশেই ছিল বংশাবতী বা বংশী নদী, তাই নদীপথেই প্রধানত ব্যবসাবাণিজ্য চলত। আরব ও মধ্য এশিয়া থেকে বণিকরা এখানে ব্যবসা করতে আসতেন।