No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    মণিমালা চিত্রকর

    মণিমালা চিত্রকর

    Story image

    ছোট থেকেই গান শুনতে ও গাইতে ভালবাসতেন মণিমালা। চিত্রকর বাড়িতে বেড়ে ওঠার জন্য শিখেছেন পট আঁকতে ও গান গাইতে। তার উপরে ভারতখ্যাত বর্ষীয়ান পটশিল্পী দুখুশ্যাম চিত্রকর হলেন মণিমালার দাদু।  দাদুর কাছেই মণিমালা শিখেছেন কিভাবে পটচিত্রে ভাব ও রস মিশিয়ে মনের কাছাকাছি আনা যায়।

    ভেষজ রং-এ শানিত রেখার ব্যবহার, নৈসর্গিক দৃশ্য, পোশাক পরিচ্ছদ, দৈহিক গড়ন বাস্তবের কাছাকাছি তুলে ধরার জন্য  মণিমালা আঁকা পটচিত্র সহজেই কলা রসিকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। দাদু দুখুশ্যামের কাছ থেকে অর্জিত এই শিল্পকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়াই তাঁর জীবনের সাধনা। মণিমালার পটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মনসাপট, দুর্গাপট বা কমলেকামিনী পট এবং মাছের বিয়ের পট।

    মণিমালার আঁকা মনসামঙ্গল পটের প্রধান চরিত্র মহাকাল রূপী এই বিশাল সাপ। আঁকাবাঁকা গতিযুক্ত বিশালাকৃতির একটি সাপ যার চোখটি মানুষের মত। মানুষের চোখ নিয়েই সে দেখছে মানুষের জীবনকে। তাঁর দেহের ভাঁজে ভাঁজে দু’পাশে আনুভূমিক প্যানেলে আঁকা হয় মনসামঙ্গলের কাহিনি। প্রধান চরিত্র সাপটি আকর্ষনীয় শরীরের চলমানতাকে ফুটিয়ে তোলার জন্য সাপের গায়ে টানা রঙের পরিবর্তে সাদা বাদামি আর হলুদ রঙের ছোট ছোট বিন্দু দেন। এতে সাপের শরীরটিকে সুন্দর ভাবে বোঝা যায়। লাল-নীল-হলুদের মত প্রাথমিক রং-এর পাশাপাশি মিশ্রণ রং-এর ব্যবহার মনসাপটকে আরও রঙিন করে। মৃত লখীন্দর ও ছয় ভাইকে বোঝানোর জন্য এদের চোখে মণিটির রং সাদা।

    মণিমালার কথায় – মনসা পট আমার কাছে খুব পছন্দের। কারণ কাহিনির প্রধান দুটি চরিত্র দেবী মনসা ও বেহুলার সাথে আমার জীবনের অনেক মিল আছে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায়  যুদ্ধ করে বর্তমান জায়গায় পৌঁচেছেন মণিমালা। পশ্চিম মেদিনীপুরের জড়ানো পটচিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল অনেক চরিত্রের উপস্থিতি। কিন্তু মণিমালার রং, বর্তনা সম্পর্কে কুশলী শিল্পজ্ঞান এবং ত্রিমাত্রিকতার প্রতিটি চরিত্র ও গল্প পাশাপাশি থাকলেও স্বাতন্ত্রভাব প্রকাশ পায়। তার পটশিল্পে বিভিন্ন রং-এর ব্যবহার তাকে আরও উজ্জ্বল করে। কিন্তু পটশৈলীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল পটে সাদা রংয়ের ব্যবহার।

    মনসাপট, দুর্গাপটের মত মাছের বিয়ের পটেও মত প্রায় সব পটেই  তিনি ব্যবহার করেন সাদা রং যা তাঁর সাহসিকতাকে ও জীবনযুদ্ধকে প্রকাশ করে। সঠিক রং ও বর্তনার প্রয়োগ এবং সর্বপরি দীর্ঘ অভিজ্ঞতা নির্ভর কুশলী শিল্পী হওয়ার কারণে তাঁর সঠিক চিত্রানুপাতের জ্ঞান থাকায় পটে একসাথে অনেক চরিত্র পাশাপাশি যায় না। সব চরিত্রই স্বতন্ত্র। এছাড়া তার অনান্য কাজ হল পটে নিজের ছবি আঁকা, অহল্যা আর্ট ভিলেজ এ আঁকা মনসার ম্যুরাল, ভূপালের মানব সংগ্রহশালায় পাথরের উপর আঁকা সাঁওতাল জনজাতির জন্মকথা।  

     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @