No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ময়দানের ঘন কুয়াশার ভোর, হাঁটতে হাঁটতে তৈরি হল মহীনের প্রথম গান

    ময়দানের ঘন কুয়াশার ভোর, হাঁটতে হাঁটতে তৈরি হল মহীনের প্রথম গান

    Story image

    পর্ব ১

    ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড, মহীন, মণি মামা, মণিদা, গৌতম, মানিক

    ১৯৭৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর, শুক্রবার মহীনের ঘোড়াগুলির সাংগীতিক অনুষ্ঠান রবীন্দ্র সদনে। সেদিনের স্মারক পুস্তিকায় লিখেছিলাম, “...অন্যের কথা থাক, শুধু আমাদের কথা বলি, কতিপয় শীর্ণ তেজী যুবক, আমরা মহীনের ঘোড়াগুলি। হার্মোনাইজেশনে ভরিয়ে তুলতে চাই আমাদের গান। গানের কথায় আনতে চাই স্নায়ুতন্ত্রী নির্ভর প্রাত্যহিকী। সাধারণ অর্থে অনভ্যস্ত কানে যতদিন পর্যন্ত না মহীনের ঘোড়াগুলির গান আপনাদের প্রিয় হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত আমরা বেঁধে যাব গান।” — তাপস বাপি দাস।

    আমরা আমাদের কথা রেখেছি (রাখছিঃ মহীন এখন ও বন্ধুরা — এ প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে). কারণ মহীনের ঘোড়াগুলির গান আপনাদের কাছে এখন প্রিয় হয়ে উঠেছে। এখন মহীনের ঘোড়াগুলি জনপ্রিয়। গান নয় শুধু, নামটাই বিক্রয়যোগ্য।

    এ লেখার প্রথম শব্দবন্ধটা ছিল ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড। সেটা আসলে কী, কিছুটা পরিষ্কার করে নিই। 

    আজকাল হাঁটাচলার পথে, আড্ডায় বা কখনও গপ্পো দাদুর আসরে প্রায়ই শুনি, ‘মণি মামার বাড়িতে একদিন আড্ডায় এই গানটা শুনিয়েছিলাম’। অথবা ‘মণিদা তো আমাকে ভীষণ পছন্দ করত, ইনফ্যাক্ট ‘এই মুহূর্তে’ গানটা নিয়ে আমার সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা তর্কাতর্কি চলেছে’। আবার কেউ বলছেন, ‘এমন কোনো বাউল মেলা ছিল না, যেখানে আমি মণিদা'র সঙ্গে ছিলাম না’।

    এমন অনেক মন্তব্য আমি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শুনি, ‘মণি মামার সঙ্গে নাকতলার বাড়িতে যেদিন প্রথম আলাপ হল, আমাকে গান গাইতে বলল। আমি নিজের লেখা একটা গান শোনালাম (বাপি জেঠুও ঘরে বসেছিল)’।

    [যদিও বাপি জেঠুর তেমন কোনও ঘটনার কথা মনে পড়ে না]

    ‘গানটা শুনে মণিদা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুই তো আগামী দিনে মান্না দে হয়ে উঠবি রে!’ ভুরি ভুরি মন্তব্য, ভুরি ভুরি মানুষ। রোববার করে নাকি সাহিত্য আসর/বাসর বসত। তাই মনে হল মণিদার নাকতলার বাড়ির বসার ঘরটা হয়তো ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড ছিল।

    ভেসে আসে কলকাতা/ মহীনের ঘোড়াগুলি

    অন্য একটা প্রসঙ্গে আসা যাক। যদিও আগেই স্বীকার করি, মহীনের ঘোড়াগুলির গানের কথা-সুর যন্ত্রানুষঙ্গে কোনো বিশেষ নামের উল্লেখ থাকত না। শুধু ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ নামটাই ব্যবহার করা হত। চার দশক পর একটা গপ্পো উদযাটন করার জন্য আমি মহীনের ঘোড়াদের সব সদস্যদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। হয়তো ইতিহাসেরও দাবি, যেহেতু মহীন এখন ইতিহাস। সেই বছরটাই ছিল কলকাতায় বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনের শেষ বছর। বোধহয় ১৯৭৫। সারারাত ব্যাপী শাস্ত্রীয় সংগীত ও বাদ্যের অনুষ্ঠান, ভারতবর্ষের সেরা গুণীজনদের অংশগ্রহণ, ভোর সাড়ে পাঁচটায় অনুষ্ঠান শেষ করলেন বিসমিল্লা খান। শীতের ঘন কুয়াশায় আমরা ময়দান থেকে হাঁটতে শুরু করলাম। দূর থেকে আবছা দেখা যাচ্ছে রেসের মাঠের সবুজ রেলিং। প্রায় দেখা যাচ্ছে না, শুধু খুব আস্তে আস্তে শোনা যাচ্ছে ট্রামগাড়ির ঘণ্টাধ্বনি – ঢিং ঢং ঢিং ঢং। ক্রমশ কাছে আসে ও আমাদের অগ্রাহ্য করে চলে যায় ধর্মতলার দিকে। 

    ঘন কুয়াশায় আমার মাথার মধ্যে কীসব যেন চক্কর মারতে থাকে। মগজেই লিখে ফেলি, “ভেসে আসে কলকাতা/ কুয়াশা তুলিতে আঁকা/ শহরতলির ভোর মনে পড়ে...।”

    মণিদার পছন্দ হল। তবে রঞ্জন একটা লাইন বদলালো। আর আমারও সেটা ভীষণ পছন্দ হয়ে গেল। জানতাম রঞ্জনের মতো অত সুন্দর শব্দচয়ন, বিশেষণের ব্যবহার আমার আসে না। রঞ্জন লিখল, “গুলতি ছোঁড়া ঘুড়ি ওড়া অগস্ট দুপুর কে দেবে ফিরে...।” বাকিটা একইরকম রেখে দিল। মণিদা সুর তৈরি করে ফেলল এক দিনেই। সেই মহীনের তৈরি করা নিজেদের প্রথম গান। নিজেদের সন্তান হাবাগোবা যাই হোক, আমাদের প্রিয়। একে ওকে ডেকে ডেকে শোনাই – প্রতিক্রিয়া শুধু ফ্যালফ্যাল করে শ্রোতার দিকে তাকিয়ে থাকা।

    (ক্রমশ...)
     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @