No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    মানুষের আবদার রেখেছেন, কিন্তু নিজের শিকড়কে ভোলেননি মোহন সিং  

    মানুষের আবদার রেখেছেন, কিন্তু নিজের শিকড়কে ভোলেননি মোহন সিং  

    Story image

    শান্তিনিকেতনকে ভালোবেসে ফেলা এই মানুষটি তাই প্রিয় হয়ে গেছেন অনেক বাঙালি-অবাঙালি শ্রোতার। মোহন সিং-এর গানের সবচেয়ে বেশি ভক্ত কিন্তু স্কুল আর কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাই। মোহনবাবু মনে করেন, গানের ক্ষেত্রে স্বরজ্ঞান আর লয়টা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখন বেশিরভাগ গানই লোকে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে গায়। লোকে শুনবে কেন? শান্তিদেব ঘোষ যাকে বলতেন ‘অশিক্ষিত গলা’। গানের বাণীতে, সুর আর লয়ের মেজাজ থাকলেই সেই গান শ্রোতাদের মন টানবে। আর ঘরানা তো একটাই। রবীন্দ্রনাথ। তাঁকে অনুসরণ করলেই হল।

    (গত পর্বের পর)

    জীবনানন্দ দাশ তাঁর 'সুচেতনা' কবিতায় লিখছেন, "আমাদের মতো ক্লান্ত ক্লান্তিহীন নাবিকের হাতে/ গ’ড়ে দেবো, আজ নয়, ঢের দূর অন্তিম প্রভাতে।" 

    নাবিক তো একজন শিল্পী। যিনি দূর যাত্রার স্বপ্ন দেখেন এবং দেখান। তাই শিল্পীরা কখনও ফুরিয়ে যান না। শিল্পের প্রতি সমস্ত তাগিদ রেখেই তাঁরা নির্নিমেষ চেয়ে থাকেন সুবিস্তৃত খোলা আকাশের দিকে।

    বিয়ের দিন বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দম্পতি

    মোহন সিং খাঙ্গুরা। যিনি মানুষের আবদার রাখেন, কিন্তু নিজের শিকড়কে ভুলে যান না। ভুলে যান না সুদূর পাঞ্জাব থেকে শান্তিনিকেতনে আসার যাত্রা। ভুলে যান না শান্তিদেব ঘোষের মতো শিক্ষককে, টুকুর মতো বন্ধুত্বকে, শুচিস্মিতার মতো প্রেমকে। মোহন সিং-এর জীবন জুড়ে তাঁরাই। 

    এই প্রথমবার কোনো দৈনিক পোর্টাল মোহন সিং খাঙ্গুরার সম্পূর্ণ স্মৃতিচারণ এবং জীবনী প্রকাশ করল৷ আজ থেকে প্রায় চার মাস আগে শুরু হয়েছিল এই ধারাবাহিক। পাঠকের ভালোবাসায় প্রত্যেকটি পর্ব পৌঁছে গেছে সংগীতরসিকদের ঘরে ঘরে। মোহন সিং ছাড়াও এই ধারাবাহিকে বারবার এসেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। বিক্রম সিং, আবির সিং। এসেছেন রামকিংকর বেইজ, ঋত্বিক ঘটক, সাধুবাবা-রা।

    মোহর-শুচিস্মিতা — মোহন সিং-এর জীবনে যাঁরা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত

    মোহন সিং পাঞ্জাব থেকে শান্তিনিকেতনে চিঠি লিখলেন শান্তিদেব ঘোষকে। বললেন, "প্রিয় শান্তিদা, শান্তিনিকেতনে কি আমার অ্যাডমিশন হবে?" সেই শুরু। লখনউ থেকে ঘুড়ি আনা হত, টুকু আর মোহন শান্তিনিকেতনের মাঠে ওড়াতেন। স্ত্রী শুচিস্মিতা উপহার দিলেন 'সহজপাঠ', তারপর বাংলা ভাষার প্রেমে পড়ে গেলেন মোহন। পণ্ডিত আমির খাঁ সাহেব 'বাগেশ্রী কানাড়া' রেঁধে খাওয়ালেন মোহনকে। সোনাঝুরির এক জ্যোৎস্না রাতে দেখা হয়ে গেল রামকিংকর বেইজ আর ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে। দুই পুত্র বিক্রম ও আবিরের মধ্যেও সুরের বীজ বপণ করেছিলেন পরবর্তীকালে। তারপর একসময় বাংলা না জানা মোহন সিং দুই ছেলেকে বিভূতিভূষণের 'চাঁদের পাহাড়' পড়ে শোনাতেন প্রতি রাতে। 

    বাঙালি শ্রোতারা ছাপ মারতেই বেশি ভালোবাসেন। তাই মোহনের শাস্ত্রীয় সংগীত নিয়ে তেমন চর্চাই হয় না সংগীতমহলে। শ্রোতাভঞ্জনের জন্য তিনি রবীন্দ্রনাথের গান করেন না, গানের প্রচারের চেয়ে তাঁর রেওয়াজে ভক্তি বেশি। আবার তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথের দুঃখের গান গাওয়া মানেই কান্নাকাটি করা নয়। শেষে এসে মোহন সিং প্রবাদবাক্যের মতো বারবার বলে দিতে চান, "বাঙালি-পাঞ্জাবি বুঝি না, নিজেকে শান্তিনিকেতনের মানুষ বলতেই বেশি ভালোবাসি।"

    মায়ের সঙ্গে মোহন সিং

    আপাতত এখানেই থামল মোহন সিং খাঙ্গুরার ধারাবাহিক। তবে এখানেই শেষ নয়। আগামী পর্বে পাঠকদের জন্য থাকবে একটি বিশেষ উপহার। শেষের কথাটি না হয়, সেদিনই বলা যাবে।

    (অন্তিম পর্ব আগামী সপ্তাহে)

    *মূল সাক্ষাৎকার গ্রাহকঃ অর্পিতা চ্যাটার্জি

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @