No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    রাজকীয় কোপ্তা: ঠাকুরবাড়ির গোপন রেসিপি

    রাজকীয় কোপ্তা: ঠাকুরবাড়ির গোপন রেসিপি

    Story image

    রবীন্দ্রনাথের পঞ্চাশতম জন্মদিনে তাঁকে ‘কবিসম্বর্ধনা বরফি’ রেঁধে খাইয়েছিলেন হেমেন্দ্রকুমার ঠাকুরের মেজো মেয়ে প্রজ্ঞাদেবী। অসামান্য রান্নার হাত ছিল তাঁর। নিত্যনতুন পদের জন্ম দিতেও রীতিমতো দক্ষ ছিলেন তিনি। লিখেছেন রান্নার বই। শুধু বই নয়, প্রজ্ঞাদেবীই জন্ম দিয়েছিলেন বাংলায় লেখা খাবারের মেনুকার্ডের। নাম দিয়েছিলেন ‘ক্রমণী’। বাবা হেমেন্দ্রকুমারও ভালো রাঁধতেন, রান্না নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভালোবাসতেন। প্রজ্ঞাদেবী সেই উত্তরাধিকারকেই আরো এগিয়ে নিয়ে গেছিলেন। রান্না যে কেবলমাত্র গৃহকোণের হেঁসেলে আটকে থাকা দৈনিক খাটনি নয়, তা যে শিল্প, সেই কথা একজন নারী যখন এইভাবে প্রমাণ করে দেন, ভালো লাগে বৈকি।

    আসলে ঠাকুরবাড়ির ঘরানাটাই এমন। বলা ভালো, ঠাকুরবাড়িতে রান্নার একাধিক ঘরানা ছিল। শুধু কি প্রজ্ঞাদেবী, অসামান্য সব রান্না নিয়ে ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল উত্তাল হত প্রায়শয়ই। এমনকি রবীন্দ্রনাথেরও রান্না নিয়ে উৎসাহ কম ছিল না। মাঝেমাঝেই নাকি স্ত্রী মৃণালিনী দেবীকে সঙ্গে নিয়ে ‘বৈজ্ঞানিক প্রণালীর আহার’ তৈরিতে বসে যেতেন। রাঁধতেন কবিজায়া আর নির্দেশ দিতেন রবীন্দ্রনাথ। খগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ‘রবীন্দ্রকথা’-য় জানিয়েছেন, এইসব রান্না কখনো সুখাদ্য হত, কখনো অখাদ্য। ফলাফল যাই হোক না কেন, রবীন্দ্রনাথের উৎসাহে কোনো ভাঁটা পড়ত না। 

    গৌরচন্দ্রিকা দীর্ঘ করে লাভ নেই। মোদ্দা কথা, নানাকিছুর মতো বাংলার খাদ্যের ভাঁড়ারেও বেশ বড়ো অবদান রেখেছে ঠাকুরবাড়ি। অনেক নতুন পদ বেরিয়েছে ঠাকুরবাড়ির বিখ্যাত হেঁসেল থেকে। তেমনই একটা পদের গল্প আজ। ঠাকুরবাড়ির বিশেষ মোচার কোপ্তা।

    মোচার কোপ্তা কতজন চেখে দেখেছি জানা নেই, কিন্তু ঠাকুরবাড়ির এই রেসিপি কিন্তু যাকে বলে রাজকীয়। স্বাদেও অতুলনীয়। একবার খেলে, বারবার খেতে হবে। গ্যারান্টি।

    উপকরণ:

    মোচাবাটা- দু’কাপ
    পেঁয়াজকুচি- ১টা বড়ো পেঁয়াজ 
    পেঁয়াজবাটা- ১টা মাঝারি পেঁয়াজ
    রসুনকুচি- ৪টে
    রসুনবাটা- ১চামচ
    আদাবাটা- দেড় চামচ 
    জিরে-গুঁড়ো- ১ চামচ
    ধনে-গুঁড়ো- ১ চামচ
    লঙ্কা-গুঁড়ো- ১ চামচ
    হলুদ-গুঁড়ো- সামান্য
    কাঁচালঙ্কা কুচি- ৩টে
    পোস্তবাটা- দেড় চামচ
    আমন্ড বাদাম বাটা- দেড় চামচ 
    ফেটানো টক দই- হাফ কাপ
    বেসন- ৬ চামচ (প্রয়োজনমতো বাড়ানো যেতে পারে) 
    কিসমিস- প্রয়োজনমতো 
    এলাচ, দারুচিনি, নুন, চিনি, জল, রিফাইন্ড ওয়েল প্রয়োজনমতো 

    প্রণালি:

    মোচা ছাড়িয়ে কুচি করে নুন দিয়ে জলে সিদ্ধ করে বাটনায় বা মেশিনে বেটে নিন। মোচা বাটা হয়ে গেলে একটি পাত্রে পেঁয়াজ কুচি, লঙ্কা কুচি, রসুন কুচি, আদাবাটা হাফ চামচ, বেসন, নুন ও সামান্য চিনি দিয়ে ভালো করে মেখে ছোটো ছোটো করে কোপ্তা করে নিন। প্রতিটি কোপ্তায় তিন-চারটে করে কিসমিস দিয়ে দিন।  

    এরপর কোপ্তাগুলো ভেজে একটি পাত্রে তুলে রাখুন। কড়াইয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিয়ে এলাচ ও দারুচিনি ফোড়ন দিন। পেঁয়াজকুচি দিয়ে সোনালি করে ভেজে তাতে পেঁয়াজবাটা, রসুনবাটা, আদাবাটা ও সামান্য জল দিয়ে মিনিট দুই নেড়ে তাতে সব গুড়ো মশলাগুলো দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন। এরপর, ফেটানো টক দই দিয়ে দিন। দু-তিন সেকেন্ড নেড়ে নিয়ে তাতে পোস্তবাটা ও বাদাম বাটা দিয়ে দিন। আরো কিছুক্ষণ নেড়ে সব কিছু ভালো করে মিশিয়ে বেশ খানিকটা জল দিয়ে দেবেন। জলটা ভালোমতো ফুটে উঠলেই তাতে কোপ্তাগুলো দিয়ে মিনিট তিন-চার রেখে নামিয়ে নিন। ব্যাস, ঠাকুরবাড়ির বিশেষ মোচার কোপ্তা তৈরি। খান এবং সকলকে খাওয়ান।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @