No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    চিনের ধনকুবের জ্যাক মা হলেন কমিউনিস্ট, চারু মজুমদাররা বেঁচে থাকলে কী বলতেন?

    চিনের ধনকুবের জ্যাক মা হলেন কমিউনিস্ট, চারু মজুমদাররা বেঁচে থাকলে কী বলতেন?

    Story image

    রতন টাটা বা অনিল আম্বানিরা যদি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন তাহলে কি আপনি চমকে উঠবেন?

    চিন কিন্তু সেটাই করে দেখিয়ে দিল। চিনের ধনীতম, বিশ্বেরও অন্যতম ধনী, ই-কমার্স সম্রাট, চিনের আলিবাবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হলেন। চিনের আর্থিক সংস্কারকে সফল করার পেছনে বিশেষ ভূমিকা পালনের জন্যই এই পুরস্কার। চিনের কমিউনিস্ট পার্টির দৈনিক মুখপত্র, পিপলস ডেইলিতে এই খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে অবশ্য জ্যাক মা দাভসে একবার বলেছিলেন, কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালবাসার, তবে বিয়ে করবেন না। দেখা যাচ্ছে বিয়েটা হল।

    গত সেপ্টেম্বরে অবশ্য জ্যাক মা ঘোষণা করেছেন, বয়সের কারণে আলিবাবার চেয়ারম্যান পদ তিনি ছেড়ে দিচ্ছেন। খুব অল্প সময়ে, তাঁর হাত ধরেই আলিবাবা ৩৯০ বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হয়ে উঠেছে। এবং তিনি চিনের প্রায় ন’কোটি পার্টি সদস্যের একজন এখন। শুধু জ্যাক মা নয়, আরও বেশ কয়েক জন ধনপতিকে দেওয়া হয়েছে চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ।

    বোঝা যাচ্ছে, ৭০-এর দশকের যে চিন নকশালবাড়ি আন্দোলনকে বলেছিল ‘বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ’, ২০১৮-তে সেই চিন কোথায় পৌঁছেছে! ‘দুনিয়ার শ্রমিক এক হও’-- এটা বোধহয় মার্কসবাদীদের সব থেকে বেশি ব্যবহৃত স্লোগান, সব থেকে প্রাচীনও বটে। আজকের চিনের যে জাতীয়তাবাদী অবস্থান, তাতে কি চিনের নতুন স্লোগান হবে—‘শ্রমিক-মালিক হাত মেলাও, বড়োলোক চিন গড়ে তোলো?’ একদা এই কলকাতায় অলি-গলিতে স্টেনসিল দিয়ে চারু মজুমদারের সমর্থকরা দেওয়ালে দেওয়ালে লিখতেন, ‘চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’। সরোজ দত্ত ‘দেশব্রতী’ পত্রিকায় লিখেছিলেন, “সেদিন আর বেশি দেরি নেই, যেদিন বড়লোকের চামড়ায় গরিবের জুতো তৈরি হবে”। দুই নেতারই মৃত্যু হয়েছে পুলিশ হেফাজতে। তাঁরা আজ বেঁচে থাকলে জ্যাক মা-র কমিউনিস্ট হওয়ার কী ব্যাখ্যা দিতেন কে জানে! আজকের মাওবাদীরা অবশ্য বলেন, চিন বিপথগামী। তবে এই কথা বলে চিনের সাফল্যকে ছোটো করে দেখা যাবে না।

    ভারতের সব থেকে বড় কমিউনিস্ট পার্টি সিপিএম কিন্তু চিনের পার্টিকে কমিউনিস্ট পার্টিই মনে করে। ২০১২ সালে সিপিএম যে ‘ইডিওলজিক্যাল ডকুমেন্ট’ প্রকাশ করেছিল, তাতে চিনের কমিউনিস্ট পার্টিকে উদ্ধৃত করেই বলা হয়েছিল, চিন বলেছে চিন সমাজতন্ত্রে পৌঁছতে হয়তো আরও একশো বছর সময় নেবে। সে নিক, কিন্তু শিল্পপতি, পুঁজিপতিদের প্রতি এই সাদর আমন্ত্রণ কি খুব আবছায়া করে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কথা মনে পড়ায়। অবশ্য, প্রেক্ষাপট আকাশ-পাতাল ফারাক। তবে এই ধরনের সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে চিন বুঝিয়ে দিতে চাইছে তাদের পথ আলাদা, তা যদি মার্কসবাদীদের সঙ্গে নাও মেলে, তাদের তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই।

    প্রকৃতপক্ষে, চিন বর্তমানে কমিউনিস্ট পার্টির একনায়কতন্ত্রের অধীন একটি শক্তিশালী ধনতান্ত্রিক দেশ। আর, এই যে ১৯৪৯ সালে বিপ্লবের পর এত অল্প সময়ে চিন প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বুক চিতিয়ে চ্যালেঞ্জ করছে, তা সফল হয়েছে কমিউনিস্ট পার্টির জন্য, ধনতন্ত্রের জন্য নয়। সোভিয়েতের পতনের পর এই দুনিয়া যে এক-মেরু বিশ্ব হয়ে যায়নি, আমেরিকাকে যে মাঝে মধ্যেই থমকে দাঁড়াতে হচ্ছে, তার জন্য চিনের আন্তর্জাতিক স্তরে ভারসাম্যের ভূমিকা রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবার, চিনও কোথাও কোথাও আচারে-আচরণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতোই বিভিন্ন দেশকে যখন তখন হুমকি দিচ্ছে অতীব ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে। অরুণাচল, বা ডোকলাম-এ তার প্রকাশ দিনের আলোর মতো।

    এই পরিস্থিতিতে এটা পরিষ্কার, কমিউনিজম নিয়ে চিন যত পরীক্ষা-নিরীক্ষাই করুক, গণতন্ত্র, বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব, বিশ্ব শান্তি নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যথা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নেরও ছিল না, তাদেরও নেই। 

    কমিউনিস্টদের আদর্শ তো সেটাই ছিল!

    (মতামত লেখকের নিজস্ব)

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @