No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    মার্টিন এস্পাদার কবিতা

    মার্টিন এস্পাদার কবিতা

    মার্টিন এস্পাদা

    ১৯৫৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মার্টিন এস্পাদা। ১৯৮২ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দা ইমিগ্রান্ট আইসবয়’স বোলেরো’ প্রকাশিত হ্য।‘সিটি অফ কাফিং অ্যান্ড ডেড রেডিয়েটরস’, ‘ইমাজিন দা এঞ্জেলস অফ ব্রেড’, ‘আলাবাঞ্জা’ তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।লাতিন আমেরিকা বিশেষ করে পুয়ের্তো রিকোর বিভিন্ন অনুষঙ্গ উঠে আসে এস্পাদার কবিতায়। দীর্ঘদিন লাতিন আমেরিকার শ্রমিকদের অভিবাসনের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি এবং আইনি পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করেছেন।‘ রবার্ট ক্রেলি এ্যাওয়ার্ড’, ‘প্যাটারসন পোয়েট্রি প্রাইজ’ ছাড়াও ‘ন্যাশনাল বুক ক্রিটিক্স সার্কল অ্যাওয়ার্ড’- এর জন্য মনোনীত হয়েছিলেন এস্পাদা। বর্তমানে তিনি ম্যাসাচুসেটস-আমহাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। 

     

    মার্টিন এস্পাদার কবিতা 

    শুকনো ভাত
     আমরা পুয়ের্তোরিকানরা বলি
    হাড়ির তলায়
    শুকনো ভাত লেগে থাকার
    মজাটাই আলাদা!
    রান্নাঘরের প্রত্নতাত্মিকদের মতো
    হাতা দিয়ে ঐ শুকনো ভাতগুলিকে
    চেঁছে তুলি আমরা।


    হয়ত ভাতের দামটাই এর কারন
    হয়ত হাঁড়ির তলায় শুকনো ভাত
    আটকে থাকাটাকে আমরা 
    রূপক হিসেবে দেখি
    আবার এমনও হতে পারে
    হাঁড়ির তলায় লেগে থাকা শুকনো ভাতের 
    যন্ত্রণাটাই আমরা চিবিয়ে খেতে শিখে ফেলেছি।
     

    যে মানুষগুলি লাল রঙের গাছ হয়ে গিয়েছে
    আমি যখন লাল মেপল গাছগুলিকে দেখি 
    আমার ঐ মুচিটির কথা মনে পড়ে যায়
    ঐ মাছওয়ালাটির কথাও মনে পড়ে
    পাতার মত টকটকে লাল,
    ম্যাসচুসেটস সরকার যাদের 
    ইলেকট্রিক শক দিয়ে মেরে ফেলেছিল।
     

    আমি যখন লাল মেপল গাছগুলিকে দেখি
    আমার লাল ফ্ল্যামবোয়েন্ট ফুলের কথা মনে পড়ে 
    ফ্ল্যামবোয়েন্ট ফুলের মতো দুজন কবি
    কব্জিতে দড়ি বাঁধা
    নেভির গানবোট ছাড়াই যারা
    সান খুয়ান উপসাগরের কথা ভেবেছিল।
     

    আমি যখন ফ্ল্যামবোয়েন্ট ফুলগুলিকে দেখি
    ঠাকুমার কথা মনে পড়ে যায় আমার
    ক্যাটালানে লাল রঙকে যা বলা হয় 
    সেটাই ঠাকুমার নাম ছিল,
    স্পেনের যুদ্ধ
    হাজার হাজার নামহীন শ্রমিক
    ভাঙা রাইফেল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।


    যখন আমি আমার ঠাকুমাকে দেখি
    ক্যাটালানে যার নামের অর্থ লাল রঙ, 
    আমার য়ুনিয়নের সংগঠকদের কথা মনে পড়ে 
    যারা নামহীন কবরে পড়ে থেকে শুধু
    লাল গাছগুলির
    খাওয়ার জুগিয়ে যাচ্ছে।


    যখন আমি একটি পাহাড়ের ওপরে দাঁড়িয়ে
    কয়েকশ বছরের পুরনো লাল গাছগুলিকে দেখি
    আমার মনে হয়, লাল পাতাগুলি আসলে 
    জেলে মরে যাওয়া সন্ত্রাসবাদীদের হাত আর 
    লাল ফুলগুলি, দড়ি দিয়ে বাঁধা কবিদের চোখ-মুখ
    ওদের কথা মনে রাখার জন্যেই ফুলগুলি ফুটে আছে।  


    আমি দেখি লাল রঙের গাছ হয়ে যাওয়া মানুষগুলি
    ভাঙা রাইফেলের মতো  
    তাদের ডালপালা আকাশে তুলে ধরেছে।
     

    আমের খোসার নীচে লুকনো মাথার খুলি
    এল সালভাদর ১৯৯২

    মহিলাটি আতঙ্কের ঘোরের মধ্যে 
    বিড়বিড় করে বলছিলঃ
    আর্মির লোকেরা এখানেই সবাইকে খুন করেছিল!
    কিন্তু কোথাও কোনও চাষির লাশ ছিল না
    কোনও সাদা ক্রস এমনকি বাড়িগুলিও উবে গিয়েছিল।
    ক্যামেরাগুলি অনবরত খচখচ করে ছবি তুলছিল
    নোটবুকগুলি ভরে যাচ্ছিল লাইনের পর লাইন শব্দে
    অনেকে ফিসফিস করে বলছিল এই গণহত্যার বিষয়টি 
    আসলে একটি কুসংস্কার
    নতুন চুক্তি আর ব্যালট বাক্সের দেশে ঐসব হয় না।


    সবাই মাটিতে পড়ে থাকা আম জড়ো করছিল
    যাওয়ার আগে একজন মার্কিন সাংবাদিক
    দু’হাত ভর্তি আম নিয়ে মাটি থেকে বেরিয়ে থাকা
    একটি উঁচু জিনিসে হোঁচট খেল।
    সে নিজেকে সামলে নিল
    তাকিয়ে দেখল তার স্নিকারের নীচে
    আমের মাংসের মত হলুদ হয়ে যাওয়া
    একটি মানুষের খুলির কপাল।


    সাংবাদিকটি ভাবল, প্রতিদিন 
    এরকম কত খুলি আমের সঙ্গে
    বাজারে চালান হয়ে যাচ্ছে
    হলুদ মাংস, কাঁচা সবুজ চামড়া নিয়ে
    কাঠের বাক্সের ভেতর প্রতিদিন কত মানুষের
    মাথার খুলি আমেরিকার বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে!
    ‘আসলে এটা থেকেই বোঝা যায়’, 
    সাংবাদিকটি আমাকে বলেছিল
    ‘এল সালভাদরে যে লাশগুলি পাওয়া যায়
    কেন সেগুলির মাথা কাটা থাকে!’ 

     

    চিনানদেগায় বন্যার পর
    নিকারাগুয়া
    আসলে একটি বাদামী রঙের মেয়ে
    রিফুজি ক্যাম্পের কাদার মধ্যে
    যে দাঁড়িয়ে আছে
    আর যার মাথার ওপরে 
    কোনমতে দাঁড়িয়ে একটি সবুজ পাখি
    ঠোঁট ফাঁক করে হাসতে হাসতে 
    রাস্তার দিকে নজর রাখছে 

     

    একটি বৈপ্লবিক স্প্যানিশ শিক্ষা 
    যখনই কেউ আমার নাম
    ভুল উচ্চারন করে,
    আমার ইচ্ছে হয় একটি খেলনা পিস্তল কিনি
    চোখে কালো সানগ্লাস পরি
    টুপিটাকে একটু তেরছা করি 
    দাড়িটাকে আরও ছুঁচলো করে আঁচড়াই
    আর উইসকন্সিন থেকে আসা 
    রিপাব্লিকান টুরিস্টদের একটি বাস
    হাইজ্যাক করি,
    তারপর তাদের স্প্যানিশে
    আমেরিকা-বিরোধী
    স্লোগান দিতে বাধ্য করি,
    যতক্ষণ না পর্যন্ত এসডাব্লিউএটি-র 
    দোভাষী সেনারা এসে
    মাথার ওপর হেলিকপ্টার নিয়ে চক্কর কাটছে
    আর আমার সঙ্গে
    রফা করতে চাইছে।
     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @