No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    নকশাদার গ্রিলে রোদের বুনোন

    নকশাদার গ্রিলে রোদের বুনোন

    Story image

    সেই সময় ইংরেজ জামানার পতাকা পত পত করে উড়ছে কলকাতার লাট ভবনের বাড়িতে কিংবা দুর্গের মাথায়। পতাকা তলার তালে তালে সেই সুদূর ব্রিটানিরা এদেশে নিয়ে এল অনেক কিছু। দর্শন,অঙ্ক আর বিজ্ঞানের বিদ্যা তো আছেই সঙ্গে তাঁরা নিয়ে এলো আরও হরেক কিসিমের চর্চা। সেটা বিলিতি সঙ্গীত হলে সঙ্গীত, সেটা ফোয়ারা হলে ফোয়ারা -যারা বসতে লাগলো বাড়ির বাগানে অথবা সেটা নানা প্রকারের টেবিল ম্যানার। স্বভাবতই দেখা গেল আমাদের নগর কলকাতা তার চেহারা বদল করতে শুরু করেছে। কোথাও বদল হচ্ছে চলমান জীবনের ছন্দে তো কোথাও বদলে গেলো লোক জনের বাসস্থানের চেহারা। যেমন ধরা যাক এই যে বিভিন্ন বাড়ির নানারকমের খিলান আর স্তম্ভের চেহারা দেখা গেলো সেই চেহারায় এসে গেল নতুনত্বের ঝোঁক। ফলস্বরপ কোন বাড়ির স্তম্ভ হল কোরিন্থিয়াল, কোন বা বাড়ি স্তম্ভ হয়ে গেল ডোরিক আবার কোন বাড়ি সেজে গুজে উঠলো আয়নিক স্তম্ভ নিয়ে। এদের মধ্যে করিন্থিয়ান স্তম্ভ গুলি দেখতে বাঁধাকপির পাতার মত, ডোরিক গুলি দেখতে চ্যাপ্টা থালার মত। আবার যেগুলি আয়নিক তাদের গায়ের নকশা হল ভেড়ার শিঙের মত প্যাঁচানো।

    এইসব ঘরবাড়ি যখন তৈরি হচ্ছে বনেদিয়ানার গুরুগম্ভীর ভাব সাব নিয়ে তখন আর একটি মহার্ঘ জিনিস জুড়ে গেল স্থাপত্যের সঙ্গে। সেটি হল লোহার গ্রিলের নকশা। বাড়ির ছাদের রেলিং, সিড়ির ওঠার মুখের আলো আসার খোপ-কুঠুরি, ভেন্টিলেটর কিংবা সিড়ির গায়ে বেয়ে ওঠা রেলিং এর গায়ে জুড়ে গেলো নকশা খেলা গ্রিলের কাজ। দেখা গেলো জমাট বাঁধা অন্ধের মতো স্থবির আর ভারি ভারি প্রাচীর গাত্র হালকা ফুলকা হয়ে গেল। সঙ্গে ফুটে উঠলো পাঁচিলের গায়ে ফুলের নকশা।

    সেটি শিল্পবিপ্লবের সময়। শিল্পের সঙ্গে কলা শিল্প কিভাবে হাতে হাত মেলাতে পারে তার একটা চর্চা শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ডের বুকে। একটার পর একটা লোহা পেটাই করে ফুলের নকশার গ্রিল তৈরি হতে লাগলো। লোহা পেটাইয়ের সঙ্গে প্রকৃতির যেন হাত ধরাধরি করে বড় হল। আর্ট এবং ইন্ডাস্ট্রি শব্দ দুটির নিজেদের মধ্যে ভাব পাতালো। তাদের কাজ হল- সমতলীয় চ্যাপ্টা রোদের আলোকে নকশাদার করে তোলা। ইংল্যান্ডের মানুষ তাদের বহু আঙ্খাক্ষিত রোদের আলোকে আদর করে ডাকতে লাগলো- ডেকোরেটেড সানলাইট বলে। একদিকে রেলিং এর নকশাও হল আবার অন্যদিকে রোদ্দুরের গায়ে বুনে দেওয়া গেলো সেই নকশারই ছায়া মাখা প্রতিবিম্ব।

    কলকাতায় যখন সেই ইংরেজি পতাকার রমরমা তখন ডেকোরেটিভ সানলাইট তৈরির গ্রিল নকশার চাহিদা বাড়লো। আর ঠিক তখনই জাহাজে করে একে একে ইংল্যান্ড থেকে রওনা দিল গ্রিল নকশার দল। বনেদি সমাজের কর্তারা ক্যাটালগ দেখে দেখে পছন্দ করতে লাগলেন সেই সব নকশা। আর তার পর জাহাজ ঘাটা থেকে সেই নকশা সোজা পৌঁছে যেতে লাগলো বাড়িতে।

    এই দেশের মানুষ রোদকে দেখেছিল দিনের প্রথম আলো হিসেবে। এদেশের মানুষ রোদ বলতে বুঝেছিল শীতকালের উষ্ণতাকে। আর সেই সঙ্গে এদেশের মানুষ রোদকে দেখেছিল অন্ধকারের বিপরীত সত্ত্বায়। কিন্তু সেই সমতলীয় রোদের গায় যে এমন নকশা বোনা যায় তা এই দেশের মানুষ শিখেছিল গ্রিল নকশার হাত ধরে। আর এমনই তার মায়া যে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের ছবিতে জড়িয়ে জাপটে গেল গ্রিলের নকশা। শুধু কী তাই গগনেন্দ্রনাথ আর অবনীন্দ্রনাথও গ্রিল নকশার ছায়াবাজি নিয়ে বাড়ে বাড়েই ভেবেছিলেন। এমনই এর মাহাত্ম্য।

    Tags:

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @