No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    মান্না দের হাত ধরেই কলকাতায় থিম পুজোর সূত্রপাত!

    মান্না দের হাত ধরেই কলকাতায় থিম পুজোর সূত্রপাত!

    Story image

    মান্না দে। প্রথম জীবনে খেলাধুলোর দিকে আগ্রহ ছিল তাঁর। কুস্তি, বক্সিং-এর মতো খেলায় পারদর্শী ছিলেন যৌবনে। ভালোবাসতেন ফুটবল খেলতে। আর পছন্দ ছিল আইনজীবীর পেশা। সংগীতের জগতে আসবেন, নাকি আইনের চর্চা করবেন, এই নিয়ে একটা ধন্দ ছিল মনে। তাঁর কাকা কৃষ্ণচন্দ্র অবশ্য চাইতেন ভাইপো পাকাপাকিভাবে গানেই ডুবে থাকুক। কাকার ইচ্ছেতেই শেষ পর্যন্ত গানের দুনিয়ায় এলেন। প্রথম থেকেই শাস্ত্রীয় সংগীতে ছিল অসামান্য দখল। তালিম নিয়েছিলেন প্রথমে কাকা এবং উস্তাদ দবীর খাঁ, তারপর উস্তাদ আমন আলি খাঁ, উস্তাদ আবদুল রহমান খাঁ, উস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খাঁ’র মতো প্রবাদপ্রতীম শিল্পীদের থেকে।  

    তবে ধ্রপদী সংগীতের ছক থেকে বেরিয়ে এসে মান্না দে (Manna Dey) তৈরি করেছিলেন ভিন্ন এক শৈলী। নিজের আত্মজীবনী ‘জীবনের জলসাঘরে’ বইয়ে লিখেছেন, “প্রথমত আমি কোনোদিনই সেভাবে উচ্চাঙ্গ শিল্পী হতে চাইনি এবং হওয়ার কোনও চেষ্টাও করিনি। আমি প্রথম থেকেই চেয়েছিলাম লঘুসংগীত এবং আধুনিক গানের জগতে থাকতে, প্রতিষ্ঠা পেতে। আর এই আধুনিক গান বা লঘুসংগীত ঠিকঠিকভাবে গাইতে গেলে, গলায় সুরের দ্যোতনা ঠিকভাবে ফোটাতে গেলে যেটুকু উচ্চাঙ্গ সংগীত জানার দরকার – ঠিক ততটাই আমি শিখতে চেয়েছিলাম।”

    মান্না দের এতগুণের মধ্যেও আরেকটা দিক হয়তো অনেকেরই জানা নেই। সেটা কী জানেন? কলকাতা শহরের থিমের দুর্গাপুজোর শুরুটা নাকি তাঁর হাত দিয়েই হয়েছিল। শচীনকর্তার সহকারী এবং কুস্তিবিদ গোবর গোহ-র ছাত্র মান্নার মাথায় সবসময় ভিন্নরকম বুদ্ধি। 

    চারদিকে হরতাল, চাকা বনধ। ঠিক সেই সময় মান্না দের মাথায় খেললো নতুন বুদ্ধি। পুজো কমিটিকে পরামর্শ দিলেন, সাবেকিয়ানা ভেঙে থিমের পুজো করলে কেমন হয়! পুজো কমিটি তো অবাক। এ আবার কী! থিমের পুজোp? এতদিন যে পুজো করলাম মিথ্যে হয়ে গেল? আরে না রে বাবা! মিথ্যে হতে যাবে কেন? দুটোই থাক।

    এ সম্পর্কিত যতটুকু তথ্য পাওয়া যায়, সেখান থেকে জানা যাচ্ছে ১৯৭৩ সালে মান্না দে ছিলেন বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাবের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। সময়টা খেয়াল রাখুন। ১৯৭৩ সাল। নকশাল আন্দোলন তখন মধ্য গগনে। হাংরির কবিরা লিখে চলেছেন প্রতিষ্ঠান বিরোধী কবিতা। বাংলাদেশ দেখেছে একটা মুক্তিযুদ্ধ, এপারেও আসছেন কাতারে কাতারে মানুষ। ওই সময়টার একটু আগে পরেই হবে এমার্জেন্সি। চারদিকে হরতাল, চাকা বনধ। ঠিক সেই সময় মান্না দের মাথায় খেললো নতুন বুদ্ধি। পুজো কমিটিকে পরামর্শ দিলেন, সাবেকিয়ানা ভেঙে থিমের পুজো করলে কেমন হয়! পুজো কমিটি তো অবাক। এ আবার কী! থিমের পুজো? এতদিন যে পুজো করলাম মিথ্যে হয়ে গেল? আরে না রে বাবা! মিথ্যে হতে যাবে কেন? দুটোই থাক। বরং বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে বৈচিত্র‍্য বাড়বে। লোকের ভিড়ও বাড়বে। পুজোর থিম (Pujo Theme) হিসেবে মান্না দে পরামর্শ দিলেন, গতানুগতিক প্যান্ডেল আর চিন্ময়ী সাবেকি প্রতিমার বদলে দক্ষিণ ভারতের কোনো মন্দিরের আদলে প্যান্ডেল করা হোক। আর প্রতিমা হোক মাদুরাইয়ের মীনাক্ষীদেবীর আদলে।

    কলকাতা (Kolkata) শহর তখনও থিম পুজো দ্যাখেনি। কিন্তু সেবার মান্নাবাবুর আইডিয়া লুফে নিয়েছিলেন পুজোর কর্মকর্তারা। সাধারণভাবে অনুমান করা হয়ে থাকে কলকাতা শহরে থিমের পুজোর সূচনা ওটাই। উত্তর কলকাতার সিমলা স্ট্রিট। নরেন্দ্রনাথ দত্ত তথা বিবেকানন্দের পাড়া। সেই পাড়ার পুজোই পথ দেখাল থিমের। যাত্রা শুরু হল সংগীত জগতের কিংবদন্তির হাত ধরে। পুজো উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায়। 

    এ প্রসঙ্গে আরও কয়েকটা কথা। শুধুই তো থিম হলে চলবে না। আনুষঙ্গিক চিন্তাভাবনারও বদল দরকার৷ তখনও কিন্তু সেলিব্রিটিদের দিয়ে পুজো উদ্বোধন করানোর রেওয়াজ ছিল না। ১৯৭৫ সাল নাগাদ সিমলার এই পুজোর উদ্বোধনে মান্না দে নিমন্ত্রণ জানালেন উত্তমকুমারকে। তৃতীয়ার দিন মহানায়ক এসে উদ্বোধন করলেন বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো। গোটা কলকাতা শহর তখন ওই একটা ক্লাবের সামনে জড়ো হয়েছেন। এরকম জনসমুদ্র কলকাতা শেষ কবে দেখেছে তার ইয়ত্তা নেই।

    মান্না দে এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর জুরি মেলা ভার। দেশ দাপিয়ে বেড়ানো এই মানুষটি সবসময়ই নতুন কিছু করবার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তেন। তাঁর নিজস্ব নিয়মকানুন এবং ধ্যানের কথা বাঙালি ভুলবে না। যে কজন বাঙালিকে নিয়ে আজও গর্ব করে বলতে পারি, আমরা বাঙালি, মান্না দের স্থান একেবারের উপরের সারিতে। 

    তথ্যসূত্রঃ জীবনের জলসাঘরে এবং চব্বিশ ঘণ্টা ডিজিটাল

     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @