২১ জুলাই মঞ্চ থেকে কর্মীদের প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১০টি নির্দেশ

কোভিডের জন্য দু’বছর বন্ধ থাকার পর ফের ২১ জুলাই। কলকাতা (Kolkata) দেখল একই রকম বৃষ্টি, একই রকম জমায়েত এবং একই রকম আবেগ। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই (Ekushe July) ‘নো কার্ড নো ভোট’ — এই দাবিতে তদানীন্তন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন। মহাকরণের চারধারে সেদিন পাঁচ জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছিল।
বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে পুলিশ হিমশিম খেয়েছে। ময়দানে মেয়ো রোড ও ধর্মতলায় পুলিশ গুলি চালিয়ে ১৩ জন বিক্ষোভকারীকে সেদিন মেরেছিল। সেই গুলিচালনা যে যুক্তি সংগত ছিল না এই নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। এতগুলো নিরস্ত্র মানুষের মৃত্যুতেও জ্যোতি বসুর সরকার সেদিন কোনও দুঃখ প্রকাশ করেনি। মৃতদের পরিবারকে কোনও আর্থিক ক্ষতিপূরণও দেয়নি। কোনও তদন্ত কমিটিও করেনি গুলি চালানো যুক্তি সংগত ছিল কিনা বিচার করে দেখার জন্য।
রাজনৈতিক দল চালাতে গেলে দলকে সঠিক পথে রাখা নেতৃত্বেরই দায়িত্ব। এক সময় লিউ শাও চি লিখেছিলেন, “হাউ টু বি এ গুড কমিউনিস্ট”
ঘটনার পর ২৯ বছর কেটে গিয়েছে। দু’বছর বাদ দিলে এটা ২৭তম সমাবেশ। ২০১১ থেকে ক্ষমতায় তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee)। সরকারে থাকলে তার দোষ-গুণ থাকবে, তা নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা হয়ে। তা কখনও ‘গঠনমূলক’ হবে, কখনও ‘বিরূপ’ হবে। কোনও সরকারেরই সেসব পছন্দ হওয়ার কথা নয়। তৃণমূল কংগ্রেস সরকারও তার ব্যতিক্রম নয়। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেটা দেখার, সেটা হল দলকে সঠিক দিশায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দলের নেত্রী সক্রিয় কিনা? ২০২২-এর তৃণমূলের শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠানে সেটাই বড়ো হয়ে উঠল। এবারের ২১ জুলাইয়ে রাজনৈতিক বার্তার পাশাপাশি মমতা তাঁর দলের কর্মী, নেতা এবং বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে ১০টি নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি কী রকম কর্মী চান। নেত্রী বললেন
১) অহংকার করবেন না।
২) সকালে উঠে মা-কে প্রণাম করবেন।
৩) বিত্তবান হওয়ার দরকার নেই, বিবেকবান হয়ে উঠতে হবে।
৪) গাড়িতে নয়, বিধায়করা এলাকায় সাইকেলে চেপে ঘুরুন।
৫) সাংসদদের এলাকা বড়ো, তাঁরা যতদূর সম্ভব রিক্সায় ঘুরুন।
৬) চায়ের দোকানে বসে চা খান। মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। চায়ের দাম নিজে মেটান।
৭) দলের কাউকে মানুষের থেকে টাকা নিতে দেখলে ধরে থানায় নিয়ে যান।
৮) কোনও কর্মী অভাবে পড়লে, খেতে না-পেলে আমাকে জানান।
৯) চাঁদা তুলবেন না।
১০) দলের অনুমতি ছাড়া দলের বিষয়ে বাইরে কথা বলবেন না।
রাজনৈতিক দল চালাতে গেলে দলকে সঠিক পথে রাখা নেতৃত্বেরই দায়িত্ব। এক সময় লিউ শাও চি লিখেছিলেন, “হাউ টু বি এ গুড কমিউনিস্ট”। সিপিএম মাঝে মাঝে দলে শুদ্ধকরণের প্রয়াস চালিয়েছে। মমতাকেও সেই পথেই হাঁটতে হচ্ছে। কারণ মানুষ ভোট দেয় দলের কর্মীদের দেখে। তিনি কতটা সফল হবেন তা সময়ই বলবে।